Tuesday 18 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যশোরে সন্ত্রাসীর গুলিতে আরেক সন্ত্রাসী নিহত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপনডেন্ট
১৮ মার্চ ২০২৫ ০৮:৩৫ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৫ ১৪:৪৪

যশোরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী সুমন ওরফে ট্যাটু সুমন। ছবি: সংগৃহীত

যশোর: যশোরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী সুমন ওরফে ট্যাটু সুমনের গুলিতে আরেক সন্ত্রাসী মীর সাদী আহমেদ (৩২) নিহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, টাকা ভাগাভাগি নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

সোমবার (১৭ মার্চ) শহরের রেলগেট পঙ্গু হাসপাতাল এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

নিহত মীর সাদী আহমেদ শহরের রেলগেট এলাকার শওকত হোসেনের ছেলে। হামলাকারী ট্যাটু সুমন এবং নিহত সাদী আহমেদ দু’জনই যশোর সদর-৩ আসনের সাবেক এমপি নাবিল আহমেদের ছত্রছায়ায় থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহবুব রহমান ম্যানসেলের ক্যাডার।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে চাচাতো ভাই রাকিবের সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশ্য যাচ্ছিলেন সাদী। বাড়ির সামনে আগে থেকে অপেক্ষায় ছিলেন দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী ট্যাটু সুমন ও মেহেদী। বাসার সামনে পৌঁছাতেই সুমন ও মেহেদী সাদীকে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় সাদীর বাইকে থাকা রাকিব ট্যাটু সুমনকে জড়িয়ে ধরলে তারা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে ও রাকিবকে আঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের ছোড়া গুলিতে সাদীর গলা ও বুক গুলিবিদ্ধ হয়।

পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করে। ঢাকাতে নেওয়ার পথে রাত ১টার দিকেই সাদীর মৃত্যু হয়। মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ যশোর জেনারেল হাসপাতালে মর্গে পাঠিয়েছে।

পুলিশ বলছে, সাদী যশোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ত্রাস ম্যানসেলের প্রধান সহযোগী ও ম্যানেজার। তার নেতৃত্বে রেলগেট এলাকায় মাদক বিক্রি, চাঁদাবাজি হতো এছাড়াও হাঁটবাজার ইজারার নিয়ন্ত্রণ করতেন সাদী। সাদীকে যারা হত্যা করেছে তারাও ম্যানসেলের সহযোগী। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ম্যানসেল আত্মগোপনে চলে যায়। ফলে রেলস্টেশন বাজার ও রেলগেট এলাকার চাঁদার টাকা ম্যানসেলকে দেওয়া বন্ধ করে দেয় সাদী। চাঁদার টাকা না পেয়ে ম্যানসেল তার আরেক সহযোগীদের দিয়ে সাদীকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ ও স্থানীয়রা।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার পর যশোর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হাসপাতালে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, ‘কারা কি কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সেটি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। নিহত সাদী সন্ত্রাসী ও যাদের নাম আসছে তারাও সন্ত্রাসী। সকলের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের গ্রেফতারে অভিযানে শুরু করেছে পুলিশ।’

এদিকে স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর যশোর শহরের কোর্ট মোড়ে হত্যার শিকার হন তৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি কবির হোসেন পলাশ। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন সাদী। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মোটরসাইকেলে পালানোর সময় শহরের অন্য প্রান্ত পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন সাদী। ওই দুর্ঘটনার পর চিকিৎসায় তার এক পা কেটে ফেলতে হয়। এক পা হারিয়েও আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ক্ষমতার প্রভাবে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন তিনি।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নিহত সাদী ও হামলাকারী ট্যাটু সুমন যশোরের বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহবুব রহমান ম্যানসেল বাহিনীর সদস্য। ২০২৩ সালের ৫ মার্চ দুপুরে যশোর শহরের সরকারি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যানসেলের নেতৃত্বে হামলা ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসী ম্যানসেল ও তার তিন সহযোগীকে আটক করে। আটক তিন সহযোগীর মধ্যে মীর সাদী আহমেদ ও মেহেদীও ছিল। আর পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন ট্যাটু সুমন। ওই ঘটনার পর যশোর শহর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বয়ক পদ থেকে ম্যানসেলকে বহিষ্কার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এর আগে ২০২২ সালের ২১ অক্টোবর যশোর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুমন ওরফে ট্যাটু সুমনকে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলিসহ গ্রেফতার করেছিল। ট্যাটু সুমন শহরের টিবি ক্লিনিক এলাকার কানা বাবু ওরফে আফজালের ছেলে। সুমনের বিরুদ্ধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রায় ডজনখানেক মামলা রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যানসেলসহ তার বাহিনীর সদস্যরা গা-ঢাকা দেয়। সম্প্রতি তাদের কেউ কেউ আবার এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সাদী খুন হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সারাবাংলা/এসডব্লিউ

সন্ত্রাসী নিহত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর