Saturday 04 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উত্তরে দেখা নেই সূর্যের, শীতে কাবু শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৫০ | আপডেট: ১ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৫৩

টানা কয়েকদিন ধরে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। ছবি: সারাবাংলা

রংপুর: ‘যে জাড় শুরু হইছে, রাইতোত কাঁপুনি ওঠে। মনে হয়, এই জানটা বের হয়া গেল, বাঁচপের নোয়্যাই। গরীব মাইনষের জীবনে জাড় আসে আতঙ্ক হয়্যা’— এভাবেই শীতের ভয়াবহ বর্ণনা দিচ্ছিলেন রংপুরের পীরগঞ্জের ৭০ বছর বয়সী ছমিরণ বেগম। টানা কয়েকদিন থেকে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে যে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে তা ছমিরণ বেগমের কথায় যথেষ্ট। তার উপরে দুদিন থেকে দেখা নেই সূর্যের তাই দিনের অধিকাংশ সময়ই আকাশ থাকছে মেঘাচ্ছন্ন; সঙ্গে নামছে তুষারের মতো কুয়াশা। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বিশেষ করে গরিব ও ছিন্নমূল মানুষের ভাগ্যে জুটেছে অবর্ণনীয় কষ্ট। আর স্থানীয় আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী এক সপ্তাহ আবহাওয়া পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন

হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় দেশের শীতপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের জেলাগুলো। তাই এই জেলাগুলোতে শীত যেনো এক আতঙ্কের নাম। গেল বারের মতো এবারও শীত যেন আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে শ্রমজীবী মানুষদের মাঝে। কনকনে ঠান্ডায় বিপাকে পড়ছে নিম্ন আয়ের গরিব-অসহায় মানুষ। ঘন কুয়াশার কারণে সকাল থেকেই বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে। নিতান্তই প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের দেখা মিলছে পথে-ঘাটে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে বিপদে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে শীত নিবারণে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত উষ্ণতা অনুভব করার চেষ্টা করছেন। আবার জেঁকে বসা শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের উষ্ণতা নিতে গিয়ে কোথাও কোথাও ঘটছে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাও। কেউ কেউ শীত নিবারণে গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়েও দগ্ধ হচ্ছেন। অধিকাংশ দুর্ঘটনা অসাবধানতার কারণে ঘটছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার (১ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় রংপুরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি। দিনাজপুরের চূড়ান্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে তীব্র শীত উপেক্ষা করে অনেকেই বের হচ্ছেন কাজের সন্ধানে। শ্রমজীবী ও গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কাবু হয়ে পড়েছেন। শহরতলীর রিক্সাচালক আব্দুল মতিন বলেন, ‘কয়েকদিন থেকে খুব শীত। বাইরে বের হওয়া কঠিন কিন্তু বাইরে না গেলে রিকশা না চালালে না খেয়ে থাকা লাগবে।’

আরেক রিকশাচালক নাহিদ ইসলাম বলেন, ঘন কুয়াশা আর শীতের কারণে সকালে কোনো মানুষ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। যার ফলে আমার আয় কমে গেছে। আর কুয়াশার কারণে রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না।

এদিকে অগ্নিদগ্ধ রোগী ছাড়াও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতের প্রকোপে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভর্তির চাপ। গত কয়েক দিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক আব্দুল আহাদ জানান, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগীও বাড়তে শুরু করেছে। বেশির ভাগ শিশু ও বয়স্করা শীতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, রংপুর ছাড়াও বিভাগের সৈয়দপুর, তেঁতুলিয়া, দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। একই সঙ্গে স্থানভেদে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা বিরাজমান রয়েছে। চলমান পরিস্থিতি কিছুটা সপ্তাহখানেক থাকবে।

সারাবাংলা/ইআ

কাঁপছে উত্তরাঞ্চল তীব্র শীত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর