‘মিথ্যাচার করে জিয়ার নাম মুছে ফেলা যাবে না’
১৮ আগস্ট ২০২৩ ১৬:৪৫ | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৩ ১৯:০৬
ঢাকা: মিথ্যাচার করে জিয়াউর রহমানের অবদানকে মুছে ফেলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
প্রতিযোগিতায় তিন পর্বে মোট ৬৯জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে জিহাদ ইবনে ইমরান, মোস্তাকিম হাসান, হুমায়রা জান্নাত প্রার্থনা, মাধ্যমিক স্তরে এফতেখার এনাম নাহিদ, তালাম মাহমুদ নিবাস, আবু হাসান নাহিয়ান এবং উচ্চতর ও উন্মুক্ত স্তরে কানিজ ফাতেমা কনিক, আজম ইকবাল শিপন ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান নিজ নিজ বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এই কথাও ভুলতে পারি না যে, শেখ মুজিবুর রহমান যে লাশ তার বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে ছিল, তারপরে আওয়ামী লীগের নেতারা সরকার তৈরি করে সেই সরকার গঠন করেছিলেন। যারা আজ মিথ্যা প্রচার চালায় যে এখানে জিয়াউর রহমান সাহেব জড়িত ছিলেন তাদের একটাই উদ্দেশ্য জিয়াউর রহমানকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং তাকে একেবারে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা।’
‘সেটা সম্ভব নয়। আজকে কত বছর হয়ে গেলো জিয়াউর রহমানের নাম কি মুছে ফেলতে পেরেছে? পারে নাই, পারে না। যে সমস্ত মানুষ, ক্ষণজন্মা মানুষ যারা ইতিহাস তৈরি করে, যারা একটা রাষ্ট্রের জন্মের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করে, যারা জনগণের কল্যাণের জন্য একটা রাষ্ট্র নির্মাণের সমস্ত ভিত্তি তৈরি করে তাদের এভাবে মুছে ফেলা যায় না, ভুলিয়ে দেওয়া যায় না’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন ওরা এমন সব অলিক গল্প ফাঁদে বলে যে, শহীদ জিয়াউর রহমান প্রয়াত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এটা হচ্ছে শুধুমাত্র ইতিহাসকে বিকৃত করা, যে আন্দোলন শুরু হয়েছে জনগণের গণতন্ত্র ফেরাতে সেই আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তখন তো বিএনপির জন্মই হয়নি। জিয়াউর রহমান তখন সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন না। তিনি ছিলেন ডেপুটি প্রধান। যে সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন অর্থাৎ সেনাবাহিনী প্রধান, নৌ বাহিনী প্রধান বিমান বাহিনী প্রধান তারা ওই দুর্ঘটনার পরে যখন খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছিল, তখন তারা সবাই স্যুালুট করে খন্দকার মোশতাকে প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘এ দেশটাকে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পরে বলা যেতে পারে এক কথায় দুঃশাসনের রাজ্য তৈরি করেছিল। তারা তাদের মতো করে এদেশকে একটা লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করেছিল। একেবারে পর এক তাদের নিজেদের তৈরি সংবিধান ভেঙে-চুরে জরুরি অবস্থা, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং সবশেষে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সিপাহী-জনতার বিপ্লবে যখন তাকে দায়িত্ব দেওয়া হল, তখন তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে আওয়ামী লীগ করেছিল একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, সমস্ত পত্রিকার বন্ধ, মানুষের অধিকার হরণ করে। আর জিয়াউর রহমান করলেন বহুদলীয় গণতন্ত্র সবাই রাজনীতি করবে, সংবাদপত্রের ওপর বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হবে, মানুষ গণতান্ত্রিকভাবে তাদের কথাগুলো বলতে পারবে, মুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘কারণ ১৯৭১ সালে যখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, এমনকি যারা তখন পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছিলেন কীভাবে একটা আপসরফা করা যায়, ফেডারেশন করা যায়, সেই সময় জিয়াউর রহমান বুকে সাহস নিয়ে, বল নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। এটা একটা বিরল ব্যাপারে, কোনো মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব না।’
রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ইসরাফিল প্রামাণিক, শামসুজ্জামান মেহেদীসহ অনেকে।
সারাবাংলা/এজেড/এমও