আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন করতে অযৌক্তিক আইন করা হচ্ছে: সুজন
২৬ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:৩৭ | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২২ ২২:১৮
ঢাকা: ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতির জারি করা প্রজ্ঞাপনকেই নতুন মোড়ক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাবিত আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংস্থাটি মনে করছে, আরেকটি ‘বিতর্কিত’ নির্বাচন আয়োজন করতেই ‘অযৌক্তিক’ এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে ২০১৭ সালের রাষ্ট্রপতির জারি করা প্রজ্ঞাপনকে নতুন মোড়কে আনা হয়েছে। কোনো আলাপ-আলোচনা না করে সরকারের অনুগত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নুরুল হুদার মতো বিতর্কিত ও অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন করার জন্যই সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এই আইন করা হচ্ছে। সরকার প্রস্তাবিত আইনে কমিটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের কোনো বিধান নেই।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) নাগরিক সংগঠন সুজনের উদ্যোগে প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহানের সঞ্চালনায় বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনীতি বিশ্লেষক আসিফ নজরুল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম, আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুজন প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় অনুসন্ধান কমিটির কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের বিষয়টিই মূল বিষয়। সুজন প্রস্তাবিত খসড়ায় কমিটির কার্যাবলির স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য নামের তালিকা প্রকাশ এবং যাচাই প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য গণশুনানির বিধান রাখা হয়েছে। কমিটির নাম যাচাই প্রক্রিয়াকে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ করার লক্ষ্যে দুই ধাপে নামের তালিকা প্রকাশের বিধান রাখা হয়েছে— ১৫ থেকে ২০ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা এবং ৭ জনের চূড়ান্ত তালিকা।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, অবিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনো আইন করা যায় না। আইনের এত বিশদভাবে সবকিছুর বর্ণনা করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। আমাদের প্রস্তবনা ছিল— অনুসন্ধান কমিটিতে সাবেক একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাখা, কারণ তার নির্বাচন পরিচালনা সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে।
তিনি বলেন, কমিশনারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে লিখিত-অলিখিত যেকোনো অভিযোগ থাকলেই তাকে বিবেচনা থেকে বাদ দিতে হবে। সুপারিশ করা নামগুলো একটি সংসদীয় শুনানিতে যাবে, সেখানে আলাপ-আলোচনা হবে। কাদের নাম সুপারিশ করা হচ্ছে, সেটি প্রকাশ করে দিতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে দু’টি বিষয় বিবেচনা করতে হবে— তিনি নিরপেক্ষ কি না এবং তার ভেতরে আইন প্রয়োগের সক্ষমতা ও সাহস রয়েছে কি না। নির্বাচনে শতাধিক লোক মারা যাওয়ার পরও কমিশনাররা বলছেন, আমাদের কোনো দায় নেই। এরকম ব্যক্তি এলে যেরকম চলছে, সেরকমই থাকবে। নাম সুপারিশের ক্ষেত্রে সংসদীয় শুনানির বিষয়টি না থাকলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকবে না। সেক্ষেত্রে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুযায়ী প্রধামন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
আবদুল আলীম বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ইন্টারন্যাশনাল গাইডিং প্রিন্সিপাল আছে। তার প্রথমটি হচ্ছে পলিটিকাল কনসেনসাস— সব দলকে একমত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, ট্রান্সপারেন্সি— সব ওপেন করে দিতে হবে। তৃতীয়ত, ব্যাপক স্ক্রুটিনি— ব্যাপকভাবে যাচাই করতে হবে। চতুর্থত, রোবাস্ট ক্রাইটেরিয়া— যারা কমিশনার হবেন তারা কারা, তাদের মোরাল ইন্টেগ্রিটি কেমন, ইন্টেলেকচুয়াল অনেস্টি কেমন। আর সবশেষে আছে সিটিজেন্স ট্রাস্ট— পুরো প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা থাকতে হবে।
আসিফ নজরুল বলেন, এই আইনটি সরকারের ইচ্ছাপূরণের আইন— এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা ছাড়া শুধু কমিশন আইন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
ড. রওনক জাহান বলেন, সবার আলোচনা থেকে বোঝা যায়— দু’টি বিষয়ে সবাই একমত। প্রথমত, কমিশনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ঐকমত্য (পলিটিকাল কনসেনসাস) থাকতে হবে, দ্বিতীয়ত, স্বচ্ছ হতে হবে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় পলিটিকাল কনসেনসাস তৈরি করা কিছুটা কঠিন হলেও সরকারের সদিচ্ছা থাকলে স্বচ্ছতার দিকটি নিশ্চিত করা সম্ভব।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
ইসি আইন ইসি গঠন আইন গোলটেবিল বৈঠক টপ নিউজ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন কমিশন গঠন আইন সুজন সুশাসনের জন্য নাগরিক