Thursday 16 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতের সাথেই কেন বারবার এমন হয়?

আজহার মাহমুদ
৩ নভেম্বর ২০২২ ১৫:১৮ | আপডেট: ৩ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৩৮

একটা ক্রিকেট ম্যাচে যা থাকা দরকার সবটুকুইছিলো গত ২ নভেম্বর বাংলাদেশ বনাম ভারতের ম্যাচে। অনেকেই বলে উঠেন আয়ারল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়ের সাথে বাংলাদেশ কি রকম ফাইট করে জিতে! সেখানে ভারত-পাকিনস্তানের সাথে কীভাবে জিতবে! প্রথমত তাদের জন্য গতকালকের ম্যাচটা একটা শিক্ষা। এই ম্যাচটা হারার জন্য যদি তর্ক হয় সেখানে দুইটা বিষয় নিয়ে তর্ক হতে পারে। একটা অনিয়ম, অসহযোগিতা, পক্ষপাত। আরেকটা আমাদের ব্যার্থতা। প্রতিবারই এই ব্যার্থতা নিয়ে আমরা আলাপ করি। আলোচনা করি, সমালোচনা করি। এবারও সেই আলোচনা-সমালোচনার বিস্তর জায়গা রয়েছে। কিন্তু আজ আমি সেই বিস্তর ক্ষেত্রটা সিলেক্ট করবো না। আমার কাছে সবকিছু ছাপিয়ে অনিয়মটাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রথমত এই ম্যাচে আমরা যখন ৭ ওভারে ৬৬ রান করেছিলাম তখন বৃষ্টি শুরু হয়। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পক্ষে ছিলো খেলা। কিন্তু এর ভেতরই হয় একটা অনিয়ম। ফেক থ্রো করার পরেও মেলেনি পেনাল্টি। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, আকসার প্যাটেলের করা ইনিংসের সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে ঘটে ওই ঘটনা। সীমানা থেকে আর্শদিপ সিংয়ের থ্রোয়ে বিরাট কোহলিকে দেখা গেছে বল না ধরে থ্রো করার ভান করেছে। ভিডিও ক্লিপ দেখে এটিকে পরিষ্কার ফেক ফিল্ডিং বলেছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও।

বিজ্ঞাপন

উইকেটে থাকা ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত তাৎক্ষনিক অভিযোগ করেন আম্পায়ারের কাছে। তবে আম্পায়ার তাকে জানান, এরকম কিছু তাদের চোখে পড়েনি। যদিও ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, লেগ আম্পায়ারের খুব কাছেই ছিলেন কোহলি। এতো কাছে থেকেও কেন এইসব দেখেন না তারা এবং পরবর্তীতে সেটা কেন যাছাই করেন না সেটা বোধগম্য নয় আমার। এই ৫ রানের পেনাল্টি পেলে জয়টা নিশ্চাই বাংলাদেশের হতো।

এরপর আসা যাক ভেজা আউটফিল্ড নিয়ে। বৃষ্টিতে ৫২ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর তড়িঘড়ি করে ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিলেন আম্পায়াররা। অথচ আউটফিল্ড পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত কখনও খেলতে দেখা যায় না। আইসিসির এতোবড় একটা আসরে এমন কান্ডও ঘটে! বড় বিষয় হচ্ছে বৃষ্টি থামার ৭/৮ মিনিটের মাথায় মাঠে নামতে হয় দু-দলকে। যেখানে ২০ মিনিট পর সাধারণত মাঠে নামে। কারণ এর আগ পর্যন্ত মাঠ শুকানোর কাজ করতে হয়। টেলিভিশন পর্দায় দেখা যায়, আম্পায়াররা যখন ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিলেন তখন ড্রেসিংরুমের সামনে আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলছেন সাকিব, সেখানে উপস্থিত ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাও। আম্পায়ারদের সঙ্গে কথাবার্তায় সাকিব অসন্তুষ্ট হলেও তাদের না খেলে কোনো উপায় ছিলো না। এ যেন ভারতের জন্য সুবিধার আর সহযোগিতায় ব্যস্ত আম্পায়ার এবং আইসিসি।

এরপর আসা যায় ডিএলএস পদ্ধতি নিয়ে। ৫২ মিনিট খেলা বন্ধ থাকার পর মাত্র ৪ ওভার কমানোর সিদ্ধান্ত কীভাবে নেয় আম্পায়াররা সেটাও বড় প্রশ্ন। যেখানে ১২ ওভার কিংবা ১৫ ওভার দেওয়ার নিয়ম সেখানে তারা ভারতের জন্য সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে ১৬ ওভার খেলিয়েছে বাংলাদেশকে।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো ধরনের মন্তব্য শুনেনি আম্পায়াররা। শুধু কি তাই! বিরাট কোহলি মাঠে বারবার আম্পায়ারদের উপর যেভাবে প্রভাব খাটাচ্ছে এবং আম্পায়াররা যেভাবে বিরাটের কথা গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের ডিসিশন দিচ্ছে সেটাও বড় প্রশ্নবিদ্ধ।

বৃষ্টির পর লিটন যখন ভেজা মাঠে খেলতে নামছে তখন আম্পায়ার ইরাসমাসকে বিরক্ত ও রাগ নিয়ে কিছু একটা বলছিলো। টিভিতে স্পষ্ট সেটা দেখা গিয়েছে। হয়তো এই ভেজা মাঠ নিয়েই বলেছেন তিনি। প্রথম রানেই লিটন একবার পড়ে গিয়েছে। এবং ২য় বার রান আউটই হয়ে গেলেন। পরপর দুইবার স্লিপ খাওয়ার পরও এই বিষয় নিয়ে আইসিসির টনক নড়ে নাই। একটা বৈশ্বিক আসরে কীভাবে এমন হয় সেটাও কল্পনার বাইরে। লিটেনর সেই আউট বাংলাদেশ দলের জন্য কতটা ক্ষতি হয়েছে সেটা আমরা দেখেছি। লিটন থাকলে এই ম্যাচ কি হতো সেটা স্বয়ং আইসিসিও জানতো নিশ্চই।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে এটা যদি এবার প্রথম হতো তাহলেও মানা যেতো। যদিও প্রথম আর দ্বিতীয় কোনোবারই এমন ভুল প্রত্যাশিত নয়। কিন্তু ভুলটা যখন একই দলের বিপক্ষে বার বার হয় তখন এটা অন্যকিছুর বার্তা দেয়। এই অস্ট্রেলিয়াতেই ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিতে উঠেছিল ভারত। কিন্তু ম্যাচ ছাপিয়ে আলোচনায় ছিল পেসার রুবেল হোসেনের যে বলে রোহিত শর্মা ক্যাচ দিয়েও নো বলের কল্যাণে নতুন জীবন পান। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা এখনও বিশ্বাস করেন সেই বলটি নো বল ছিল না। সেই সাথে ফুলটস বলকে নোবল বানিয়ে দেওয়া নিয়ে সেসময় কতশত ঝড় উঠেছে। সেইসাথে বাউন্ডারি লাইনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাচটা ধরতে যান শেখর ধাওয়ান কিন্তু বাউন্ডারির ওপর পা লাগিয়ে দেন। যা ক্লিয়ার ক্যাচ নয় ছক্কাই হয়েছে। প্রেস বক্সে ভারতীয় সাংবাদিকরাও বলছিলেন সেটি ছক্কা হয়েছে। কিন্তু টিভি রিপ্লি গড়িমসি করে কোনোরকম সেরে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়া হয়েছিলো সেদিন। ভারতের বেলায় যেটা ওয়াইড বাংলাদেশের বেলায় সেটি আবার বল হিসেবে গণ্য হয়।

এই এতোকিছুর পরও এই ২২ সালে এসে আবারও এমন কাণ্ড ঘটেছে। এই সমস্যা নিয়ে সেই ১৫ সালেও অভিযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। এবারও অভিযোগ দিবে বলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশ থেকে একপ্রকার ছিনতাই করে ম্যাচ জিতে যায় ভারত। সুতরাং এই বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ যদি না নেওয়া হয় এতে অদূর ভবিষ্যতে ক্রিকেটেরই ক্ষতি হবে। আইসিসির যে ক্রিকেট গ্লোবাইজেশনের চিন্তা সেটা কোনো ভাবেই সম্ভব নয় যদি এমন ঘটনা নিয়মিত চলতে থাকে। সেইসাথে আম্পায়ারদের ভারত প্রীতিটাও বাদ দিতে হবে। এটা নিয়েও আইসিসির কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আইপিএলে সুযোগ পাওয়ার জন্য আম্পায়ররা যে পরিমণ ভারতের দালালি করে সেটা সত্যি বলতে অতিমাত্রায় নোংরামি। আর সেসব নোংরামি বন্ধ করতে হলে আইসিসিকে আরও কঠোর এবং নিরপক্ষ হতে হবে। আদৌ আইসিসি নিরপক্ষ হবে কি-না সেই এই শতাব্দীর বড় প্রশ্ন!

লেখক: কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

আজহার মাহমুদ টপ নিউজ ভারতের সাথেই কেন বারবার এমন হয়? মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

মুক্তি পেলেন বাবর
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৩৬

আরো

সম্পর্কিত খবর