Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুইডেনের জাতীয় নির্বাচনে একজন বাংলাদেশি

রহমান মৃধা
২১ আগস্ট ২০২২ ১২:৩৬ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২২ ১৪:৩০

আর মাত্র অল্প কয়েকদিন বাকি তারপর সুইডেনের জাতীয় নির্বাচন। বিশাল একটা কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না। মনে অতীতেও হয়নি, কারণ প্রতি চার বছর পর পর সুইডেনে জাতীয় নির্বাচন হয়, দিনটি ১১ ই সেপ্টেম্বর, জনগণ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যার যার ভোট যাকে খুশি তাকেই দেয়। মূলত ২৪ আগস্ট থেকে বিভিন্ন লাইব্রেরি কিংবা কাউন্সিলের নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রগুলোতে গিয়ে আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বা যারা দেশের বাইরে থাকে তাদের জন্যও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, সুইডেনের ভোট শুরু হবে ২৪ আগস্ট ও শেষ দিন হলো ১১ সেপ্টেম্বর।

বিজ্ঞাপন

‘সুইডেনে বাই ইলেকশন বলে কিছু নেই। কোনো এমপি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হলে তখন তাকে তার এমপি আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। কারণ, সরকার কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব করে না। ওই সময় মন্ত্রীর রাজনৈতিক দলের অন্য প্রার্থী, যার নাম প্রার্থীর তালিকায় মন্ত্রীর নামের পরে ছিল, তিনি অটোমেটিক এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ঠিক একইভাবে কোনো এমপি ইন্তেকাল কিংবা শারীরিক অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হলে প্রার্থীর তালিকা অনুসারে যে প্রার্থীর নাম এ প্রার্থীর নিচে থাকবে, তিনি এমপি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অর্থাৎ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যে কয়টি আসন লাভ করবে, সে আসনগুলো পুরো ম্যান্ডেট পর্যন্ত সেই দলেরই কাছে থাকে। অন্যদিকে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর কোনো এমপি যদি কোনো কারণে তার দল ত্যাগ করেন কিংবা দল তাকে বহিষ্কার করে, তথাপি তিনি দলবিহীন এমপি হিসেবে পুরো সময় পর্যন্ত তার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। কারণ, তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত এমপি, দলের ভোটে নয়। এই সময় এই এমপি যখন পার্লামেন্টে বক্তব্য দেন, তখন তার নামের পাশে কোনো দলের নাম থাকবে না।’

বিজ্ঞাপন

সুইডেনে নর-নারীর সমান অধিকার সত্ত্বেও এই প্রথম এক নারী যিনি দেশ পরিচালনার দায়ীত্বে রয়েছেন এবং বেশ কিছু মহিলা বিরোধী দলের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবেন। আমি সুইডেনের নানা বিষয়ের উপর লিখি, কথা বলি। নির্বাচন সম্পর্কে অতীতে লিখেছি, এবারের লিখাটি কিছুটা ভিন্ন এই কারণে যে সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মহিবুল ইজদানী খান ডাবলুকে ভেনস্টার পার্টির স্টকহোমের জাতীয় সংসদ প্রার্থীর তালিকায় নমিনেশন দিয়েছে। এটা তার জন্য একটি বিশাল ঘটনা যে তিনি প্রথম বাংলাদেশী যে সুইডিশ রাজনীতিতে জড়িত। যা অন্যান্য বাংলাদেশীদের মগজে কিছুটা নাড়া দিবে যেমন আমাকে দিয়েছে। আমি অতীতে বলেছি লেখাপড়া আর চাকরি করা ছাড়াও যে জীবনে আরো অনেক পথ রয়েছে ক্রিয়েট ভ্যালু ফর ম্যানকাইন্ড। আশাকরি, সেটা আমরা দেখতে পাব এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, তারপর একটি কথা মনে রাখতে হবে শুধু পাশ বা ফেলের দিকে নজর নয় বরং অংশগ্রহন করা কিন্তু একটি বড় ব্যপার।

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু সুইডেনের রাজনীতিতে ২০০২-২০০৬ মেন্ডেট পিরিয়ডে প্রথমবার ভেনস্টার পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে স্টকহোম সিটি কাউন্সিলে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একইভাবে ২০০৬-২০১০ ও ২০১৪-২০১৮ দলের কাউন্টি কাউন্সিল (গ্রেটার স্টকহোম অ্যাসেম্বলি) নির্বাচনে জয়লাভ করে মোট আট বছর কাউন্টি কাউন্সিলরের (গ্রেটার স্টকহোম অ্যাসেম্বলি) দায়িত্বে ছিলেন। এই সময় কাউন্সিলের স্বাস্থ্য পরিচর্যা বোর্ড স্টকহোম কালচারাল অ্যান্ড এডুকেশন বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দীর্ঘ সময় বিরোধী দলের হয়ে যে দায়ীত্বে কাজ করেছেন যদি সেটা মনপূত হয়ে থাকে তার এলাকার মানুষের জন্য, তথা বাংলাদেশীদের জন্য তবে জাতি তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে বলে আমি মনে করি।

সুইডেনের নির্বাচন সাধারণত প্রপোর্শনাল (Proportional) ভোটের মাধ্যমে হয়ে থাকে। পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে কমপক্ষে মোট ভোটের ৪ শতাংশ ভোট পেতে হয়। সমানুপাতিক এ নির্বাচনে প্রতিটি এলাকায় রাজনৈতিক দলগুলো বেশ কয়েকজন প্রার্থীর নাম প্রকাশ করে। যেসব প্রার্থীর নাম তালিকার একেবারে ওপরে থাকে, তাদের দলের মোট পাওয়া ভোটের পার্সেন্টেজ অনুযায়ী জয়লাভ করার সুযোগ থাকে। অর্থাৎ ভোটাররা ভোট দেয় দলকে কোনো প্রার্থীকে নয়। পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদে এ নিয়মের পরিবর্তন আনা হয়। আর তা হলো দল যেভাবেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করুক না কেন, ভোটাররা চাইলে নিজেদের পছন্দনীয় একমাত্র একজন প্রার্থীর নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভোট দিতে পারবেন। একে বলা হয় ব্যক্তিগত ভোট। অর্থাৎ একজন ভোটার প্রার্থী তালিকায় যার নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দেবেন, তার নাম যেখানেই থাকুক না কেন, এ ভোটারের ভোটে তাকে এক নম্বর হিসেবে গণনা করা হবে। এভাবে একটি নির্বাচনী এলাকায় দলের কোনো প্রার্থী যদি মোট ভোটের ৪ শতাংশ ক্রস পান, তাহলে তিনি জয়লাভ করবেন।

এ নিয়মে ছোট ছোট রাজনৈতিক দল ভেনস্টার পার্টি, গ্রিন পার্টি, ক্রিস্ট ডেমোক্রেট পার্টি, লিবারেল পার্টি ও সেন্টার পার্টি থেকে কিছুটা হলেও জয়লাভ করা সুযোগ রয়েছে। বাকি বড় তিনটি দল সোশ্যাল ডেমোক্রেট, মডারেট ও সুইডেন ডেমোক্র্যাটের ক্ষেত্রে মোট ভোটের ৪ শতাংশ ভোট একজন প্রার্থীর এককভাবে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। এসব রাজনৈতিক দল থেকে ব্যক্তিগত ভোটে পার্লামেন্টে জয়লাভ করতে হলে কমপক্ষে সাত হাজারের কাছাকাছি ভোটের প্রয়োজন হয়। সেই তুলনায় ছোট ছোট দল থেকে ব্যক্তিগত ক্রসের প্রয়োজন মাত্র চার হাজার। তা–ও নির্ভর করবে দলের মোট ভোটসংখ্যার ওপর। অনেক সময় চার হাজার কিংবা তারও কম ভোটে জয়লাভ করার সুযোগ রয়েছে। সুইডেনের বর্তমান পার্লামেন্টে কয়েকজন এমপি এই নিয়মে জয়লাভ করে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে উল্লেখ্য, বর্তমান সুইডিশ পার্লামেন্টে সুইডেনের বাইরে থেকে আগত মোট ২৯ দেশ থেকে পার্লামেন্ট মেম্বার থাকলেও ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের কেউ এখন পর্যন্ত সুইডিশ পার্লামেন্ট মেম্বার হতে পারেননি।

আমি আশা বাজি মহিবুল ইজদানী খান সুইডিশ পার্লামেন্ট মেম্বার হয়ে সুইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের পারস্পরিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ভালো করতে সাহায্য করবেন। যেমন বাংলাদেশের অনেক দ্রব্য আছে, যা সুইডেনে চাহিদা আছে, ঠিক তেমনি সুইডেনে নির্মিত উচ্চমানের অনেক যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম আছে, যা বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব।

আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিরা অপপ্রচার ও বাংলাদেশি রাজনীতিকে সামনে এনে নিজেদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি না করে যদি দলমত–নির্বিশেষে সবাই সমর্থন দেই, তাহলে ইনশাআল্লাহ মহিবুল ইজদানী খান জয়ী হবেন। স্টকহোম বসবাসরত বাংলাদেশি সুইডিশ নাগরিক তার জন্য একটি বড় শক্তি। একমাত্র বাংলাদেশি ভোটাররাই তাকে, তার এই অগ্রযাত্রাকে সফল করতে পারেন। আসুন আমরা সুইডেনে লিটিল বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

টপ নিউজ মুক্তমত রহমান মৃধা সুইডেনের জাতীয় নির্বাচনে একজন বাংলাদেশি

বিজ্ঞাপন

৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৮

লন্ডনে পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১২

আরো

সম্পর্কিত খবর