বিপিএল অভিষেকেই বাজিমাৎ: কে এই বোসিস্টো?
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:০১ | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:০২
উইলিয়াম বোসিস্টো- অত নামডাক ওয়ালা কেউ নন। পাড় অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ভক্ত না হলে নামটা সেভাবে শোনারও কথা নয় আপনার। কারণ আড়ালে পড়ে থাকা, কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না খেলা এক ক্রিকেটারের খোঁজখবর সেভাবে আর কে রাখে! তবে আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খুলনা টাইগার্সের হয়ে যে ইনিংসটা খেললেন, তাতে করে এই অজি ক্রিকেটারকে নিয়ে কৌতুহলই জাগল। কে এই বোসিস্টো? অস্ট্রেলিয়াতে বিগ ব্যাশের মৌসুমে তিনি বাংলাদেশে কেন খেলছেন? বিপিএলেই বা কী করে এলেন?
আজ মিরপুরে নিজের বিপিএল অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেই পেয়েছেন ফিফটি। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ফিফটিকে নিয়ে গেলেন ৭৫ নট আউটে। ইনিংস শুরু করতে নেমে উইকেটে ছিলেন একদম শেষ পর্যন্ত। ৫০ বলে ৮ চার আর ৩ ছক্কায় ব্যাট করেছেন ১৫০ স্ট্রাইকরেটে। দলের সংগ্রহও ছাড়িয়েছে ২০০।
বিপিএলে তার দল পাওয়ার গল্পটাও বেশ মজার। চার বছর সবকিছু থেকে আড়ালে থাকার পর মিচেল মার্শ, ইমরুল কায়েস আর তালহা জুবায়েরের কল্যাণে ভিড়েছেন খুলনা টাইগার্সের ডেরায়। আজ চিটাগং কিংসকে হারানোর পর সেই গল্পই শোনালেন খুলনা কোচ ও সাবেক বাংলাদেশি পেসার তালহা জুবায়ের।
ইমরুল কায়েস বছর দুয়েক ধরে পারিবারিকভাবে অস্ট্রেলিয়ায় থিতু। সেখানে অল্পবিস্তর ক্রিকেট খেললেও তার মূল মনোযোগ কোচিংয়ে। সেই ধারাবাহিকতাতেই হয়তো মিচেল মার্শের সাথে আলাপচারিতায় প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন বোসিস্টো। আর ইমরুল নিজেও এবার আছেন খুলনা টাইগার্সের স্কোয়াডে। সব মিলিয়ে এক স্রোতে এসে মিশেছে এবারের বিপিএলে।
খুলনাকে ৩৭ রানে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করার পর ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তালহা বলেন, ‘ইমরুল কায়েসকে মিচেল মার্শ রেকমেন্ড করেছিল বোসিস্টোর কথা। ইমরুল যখন আমাকে ওর ভিডিওটা পাঠায় এবং আমি ইউটিউবে তার আগের হাইলাইটস দেখেছি, সেটার সঙ্গে এখনকার ব্যাটিংয়ের কোনো মিলই নাই। ও অনেকদিন ক্রিকেটের বাইরে ছিল। ওর কিছু পার্সোনাল কারণে। ওইটা আমি একদমই ক্লিয়ার না।’
বোসিস্টোকে মনে করা হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ভবিষ্যত। ২০১২ সালে অজিদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটার। দলকে ফাইনালেও তুলেছিলেন সেবার। কিন্তু ভারতের কাছে হেরে সেবার শিরোপা জেতা হয়নি তার। তবে ২৭৬ রান করে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। আউট হয়েছিলেন মাত্র এক ইনিংসে। আরও একটা মজার ব্যাপার, ভারতকে সেবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানো উন্মুক্ত চাঁদেরও নিজেকে মেলে ধরা হয়নি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
প্রশ্ন হচ্ছে এত সম্ভাবনা নিয়ে এসেও কেন হারিয়ে গেলেন বোসিস্টো? যেখানে তার অধীনে যুব বিশ্বকাপ খেলা ট্রাভিস হেড এখন অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যাটিং ভরসা। ক্যামেরন ব্যানক্রফট, অ্যাশটন টার্নাররা সেই যুব বিশ্বকাপের পর ধাপে ধাপে সুযোগ পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের। কিন্তু বোসিস্টো রীতিমতো ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছেন পাদপ্রদীপের আড়ালে। তাকে ঘিরে যে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের যে বিনিয়োগ ছিল, দিতে পারেননি তার প্রতিদান।
অস্ট্রেলিয়া ঘরোয়া ক্রিকেটে সাদামাটাই ছিল তার পারফরম্যান্স। নিজ রাজ্য ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে সাউথ অস্ট্রেলিয়াতে গিয়েও সুবিধা করতে পারেননি। ধারাবাহিকতার অভাবে রাজ্য দলের চুক্তি হারান ২০২১ সালে। ২৮টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ শেষে দুই সেঞ্চুরি আর চার ফিফটিতেম ২২.৫৩ গড়ে সংগ্রহ ১১০৪ রান। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি খেলেছেন সব মিলিয়ে ১২টি আর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে খেলেছেন ১৪ ম্যাচ। ওখানেই।
এবারের বিপিএলের আগে বোসিস্টোকে হঠাৎ দেখা যায় নেপাল প্রিমিয়ার লিগে। প্রায় চার বছর পর ক্রিকেটে ফেরা কার্নালির হয়ে ৬ ইনিংসে ব্যাট করে ফিফটি পান দুটিতে। ১৯৪ রান করেন ৩৮.৮৮ গড়ে। ব্যাট হাতে রানখরায় ভোগার পর আড়ালে চলে যাওয়ার নেপথ্যে আছে তার এলোমেলো ব্যক্তিগত জীবনের দায়ও। পারিবারিক ঝামেলা, সন্তানের অসুস্থতা মিলিয়ে হারিয়েই যান বোসিস্টো। এক সময় আলোচনার কেন্দ্রতে থাকা তরুণ ব্যাটার সময়ের সাথে আজ ৩১ বছর বয়সী একজন। বয়স বাড়ার সাথে ক্রমেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততায়।
তবে বিপিএল দিয়ে বোসিস্টো নিজের নবজাগরণের প্রদীপের সলতেটায় কিছুটা হলেও আলোর যোগান দিতে পেরেছেন বোধহয়। হয়তো এবারের বিপিএলে পারফর্ম করেই আবারও অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে প্রাসঙ্গিক হতে চাইবেন পার্থ স্কর্চার্সের হয়ে দুই মৌসুম বিগ ব্যাশ খেলা এই ব্যাটার।
সারাবাংলা/জেটি