শেষ সেশনের হতাশা নিয়ে দিন শেষ করল বাংলাদেশ
২৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:১১ | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৫৮
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের প্রথম দিনটা খুব একটা ভালো কাটল না বাংলাদেশের। দিনের প্রথম দুই সেশনেই সেশন শেষের খানিক আগে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছে স্বাগতিকরা। শেষ সেশনটা কাটল আরও বাজে। দিনের শেষ সেশনে ৫ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ৯ উইকেটে ৩১০ রান তুলে সিলেট টেস্টের প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ।
দিন শেষে ১৩ রানে অপরাজিত আছেন তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম। তার সঙ্গে ৮ রানে অপরাজিত স্পিনার তাইজুল ইসলাম। সিলেটে স্পিন পিচ বানিয়ে স্পিনেই ভুগল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পতন হওয়া নয় উইকেটের সাতটিই পেয়েছে কিউই স্পিনাররা। নিউজিল্যান্ডের স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার গ্লেন ফিলিপস টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই তুলে নিয়েছেন চার উইকেট। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৬ রান করেছেন তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৪ উইকেটে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেওয়া বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিং করতে নেমেছিলেন মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। জাকিরকে শুরু থেকেই নড়বড়ে মনে হয়েছে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তার বিরুদ্ধে জোড়ালো আবেদন হয়েছিল। সেই যাত্রায় বেঁচে গেলেও নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারেননি জাকির।
দলীয় ৩৯ রানের মাথায় ১২ রান করে নিউজিল্যান্ডের স্পিনার এজাজ প্যাটেলের বলে সরাসরি বোল্ড হয়েছেন। তারপর তিনে ব্যাটিং করতে নেমে রীতিমতো টি-টোয়েন্টি ঢংয়ে রান তুলতে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এজাজ প্যাটেলকে ছক্কা হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলেন। এজাজকে এগিয়ে এসে পরে আরও দুটি ছক্কা হাঁকান। সেই ছক্কা হাঁকানোর লোভেই ফিরতে হয়েছে সাজঘরে।
নিউজিল্যান্ডের স্পিনার গ্লেন ফিলিপসের লো ফুলটস বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু ঠিকভাবে শট খেলতে পারেননি। বল তার ব্যাটের নিচের কানায় লেগে হাওয়ায় ভেসে যায়। কেন উইলিয়ামসন ক্যাচ লুফে নেন। শান্ত মাত্র ৩৫ বল খেলে ২টি চার ৩টি ছক্কায় যখন ৩৭ রান করে ফিরছিলেন তখন গ্লেন ফিলিপসের চোখে মুখে খানিকটা বিস্ময়, এই বলেও টেস্ট উইকেট পাওয়া যায়! শান্ত যখন ফিরছিলেন তখন লাঞ্চের আগে মাত্র দুই ওভার বাকি!
দ্বিতীয় সেশনে দারুণ ব্যাটিং করছিলেন মাহমুদুল হাসান জয় ও মুমিনুল হক সৌরভ। এই সেশনে স্পিনের ব্যবহারেই বেশি করেছেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টিম সাউদি। জয় ও মুমিনুল কিউই স্পিন ভালোভাবে সামলাচ্ছিলেনও। কিন্তু সেশন শেষ হওয়ার খানিক আগে সব মনোযোগ যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল! দেখেশুনে খেলতে থাকা মুমিনুলকে কাট শটে প্রলুব্ধ করছিলেন গ্লেন ফিলিপস। কাট শট মুমিনুলের অন্যতম ফেভারিট শট। তবে সেখানেই কাটা পরেছেন তিনি।
বলের লাইনে ঠিকমতো যেতে পারেননি। বল তার ব্যাটের কানা ছুয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষকের গ্লাফসে। ফেরার আগে ৭৮ বল খেলে ৪টি চারের সাহায্যে ৩৭ রান করেন মুমিনুল। খানিক বাদে চা বিরতির যখন একদমই নিকটে তখনই যেন মনোসংযাগ বিচ্ছিন্ন হলো মাহমুদুল হাসান জয়ের।
সেঞ্চুরির দিকে এগুতে থাকা মাহমুদুল হাসান জয়কে মাঝে মধ্যেই অস্বস্তিতে ফেলছিলেন ইশ শোধি। জয়ের বিপক্ষে বলটা একটু ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন শোধি। জয় রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতেই খেলেছিলেন কিন্তু ব্যাট চালিয়েছেন জোরের ওপরে। বল তার ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় স্লিপে। ১৬৬ বলে ৮৬ রানের ইনিংসটা সেখানেই থেমে যায়। এই রান করতে জয় চার হাঁকিয়েছেন ১১টি।
শেষ সেশনে পরপর উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতেই মুশফিকুর রহিম ফিরেছেন। বিশ্বকাপে খুব বেশি রান পাননি মুশফিক। আজও হতাশ করলেন, দারুণ শুরু করেও আউট হয়েছেন অল্প রানে। এজাজ প্যাটেলের বলে কেন উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ২২ বলে ১২ রান করেন অভিজ্ঞ মুশফিক।
এরপর অভিষিক্ত তরুণ শাহাদত হোসেন দিপুকে নিয়ে এগুতে থাকেন মেহেদি হাসান মিরাজ। দুজনেই রান পেয়েছেন, তবে কেউই নিজেদের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। দারুণ খেলতে থাকা দিপু ৫৪ বল খেলে ফিলিপসের আরেকটা শিকার হওয়ার আগে ২৪ রান করেছেন। মেহেদি হাসান মিরাজ ৩০ বলে ২০ রান করেছেন।
আট নম্বরে নেমে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান রীতিমতো টি-টোয়েন্টি গতিতে রান তুলতে চেয়েছেন। ২৮ বলে ৫টি চারে ২৯ রান করে ফেরা সোহানও ইনিংস বড় করতে পারেননি। স্পিনার নাঈম হাসান ১৬ রান করে ফিরলে মনে হচ্ছিল প্রথম দিনেই হয়তো গুটিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
শেষ বিকেলে তাইজুল ইসলামের প্রতিরোধ ও শরিফুল ইসলামের পাল্টা আক্রমণে অবশ্য সেটা ঘটেনি। তাইজুল ২১ বল খেলে ৮ রানে অপরাজিত। শরিফুল ৮ বলে ১৩ রানে অপরাজিত। নিউজিল্যান্ডের হয়ে গ্লেন ফিলিপস ৫৩ রানে চার উইকেট নিয়েছেন। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন এজাজ প্যাটেল ও কাইল জেমিসন।
সারাবাংলা/এসএইচএস