পশ্চিমাদের মানবাধিকার আলোচনা ভণ্ডামি: ফিফা সভাপতি
১৯ নভেম্বর ২০২২ ১৬:২২ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২২ ২০:৩৫
ঢাকা: বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজক দেশ কাতারের সমালোচনায় মুখর পশ্চিমা বিশ্ব। অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু, এলজিবিটিকিউ লোকদের জন্য বৈরি পরিবেশ, স্টেডিয়ামে বিয়ার নিষিদ্ধ হওয়ার মতো ইস্যুতে কাতারের সমালোচনা চলছে। তবে এবার স্বয়ং ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো পশ্চিমের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ আনলেন। তার মতে, বিশ্বকাপের প্রাক্কালে কাতারের মানবাধিকার রেকর্ড সম্পর্কে প্রতিবেদন পশ্চিমাদের ‘ভণ্ডামি’। ইউরোপের নিজেদের ইতিহাস নিয়ে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইনফান্তিনো বলেন, ‘সমালোচনাগুলো বুঝতে আমার অসুবিধা হয়। এসব লোকদের সাহায্য করার জন্য এবং তাদের একটি ভালো ভবিষ্যত দেওয়ার জন্য শিক্ষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের সকলের নিজেদের শিক্ষিত করা উচিত, অনেক কিছুই নিখুঁত নয়। কিন্তু সংস্কার এবং পরিবর্তনের জন্য সময় লাগে।’
ইউরোপের বিরুদ্ধে তোপ দাগিয়ে ফিফা সভাপতি বলেন, ‘একতরফা নৈতিক শিক্ষা শুধুই ভণ্ডামি। ২০১৬ সাল থেকে এখানে (কাতারে) যে অগ্রগতি হয়েছে তা কেউ স্বীকার করে না।’
ফিফা সভাপতি বলেন, ‘১২ বছর আগে নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের সমালোচকদের নেওয়া সহজ নয়। কাতার প্রস্তুত। এবার সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ হবে। কাতারের পক্ষে আমাকে দাঁড়াতে হবে না। তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে। আমি ফুটবলকে রক্ষা করি।’
এবার বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামে অ্যালকোহলযুক্ত বিয়ার বহনে নিষেধাজ্ঞা আসে গতকাল শুক্রবার। এই সিদ্ধান্তটি ফিফা এবং আয়োজক কাতারের নেওয়া একটি যৌথ সিদ্ধান্ত বলে জানান ইনফান্তিনো। এটিকে বড় কোনো ইস্যু মানতেও নারাজ ইনফান্তিনো। তিনি বলেন, প্রতিটি সিদ্ধান্তই আলোচনা এবং বিতর্কের মাধ্যমে যৌথভাবে নেওয়া হয়েছে।
কাতারে এলজিবিটিকিউদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এ ব্যাপারে ফিফা সভাপতি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এলজিবিটিকিউ লোকদের জন্য আরও উন্মুক্ত আইন একটি প্রক্রিয়ার অংশ।
তিনি বলেন, তারা (কাতারি আয়োজকরা) নিশ্চিত করেছে এবং আমিও নিশ্চিত করতে পারি যে, কাতারে সবাইকে স্বাগতম। আপনার এখানে সেখানে লোকদের ব্যক্তিগত ভিন্নমত শুনতে পারেন। কিন্তু এগুলো কাতার বা ফিফার মতামত নয়।
ফিফা সভাপতি কাতারি নাগরিক, অভিবাসী, আরব, আফ্রিকান ও এলজিবিটিকিউদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করতে গিয়ে বলেন, আজ আমার মনে একধরনের প্রবল অনুভূতি জেগে উঠেছে। আজকে আমি নিজেকে কাতারি মনে করছি, আমি নিজেকে একজন আরব মনে করছি, আমি আফ্রিকান, আমি সমকামী, আমি একজন অভিবাসী কর্মী।
উল্লেখ্য, কাতারের আইন অনুযায়ী যেকোনো বিবাহবহির্ভূত যৌনতার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। ইনফান্তিনো উদাহরণ টেনে বলেন, ১৯৫৪ সালে যখন সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল তখন সেদেশে সমকামিতা অবৈধ ছিল।
এ ব্যাপারে তার মতামত জানিয়ে ইনফান্তিনো বলেন, ফিফা সভাপতি হিসেবে অবশ্যই আমি বিশ্বাস করি যে সমকামিতা অনুমোদিত হওয়া উচিত। তবে আমি একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ জায়গায় এসেছি।
কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর শুরু হচ্ছে ২০ নভেম্বর (রোববার) থেকে। এর একদিন আগে দোহায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ঘণ্টাব্যাপী সংবাদ সম্মেলনে ফিফা ও কাতারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোকে পেছনে ফেলে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক হয় কাতার। তখন থেকেই নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। আয়োজক দেশ হতে কাতার দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠে আসতে শুরু করে। কাতারের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ উঠে তৎকালীন ফিফা সভাপতি সেপ ব্লাটারের বিরুদ্ধেও।
সারাবাংলা/আইই