সিটিকে হারিয়ে ১০ বছর পর এফএ কাপের ফাইনালে লিভারপুল
১৬ এপ্রিল ২০২২ ২২:৩৮ | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২২ ২৩:০০
২০১২ সালে শেষবারের মতো এফএ কাপের ফাইনালে উঠেছিল লিভারপুল। এরপর অপেক্ষা ১০ বছরের। ২০২২ সালে ম্যানচেস্টার সিটিকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে এফএ কাপের ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল অল রেডরা। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইব্রাহিম কোনাতের এক গোল আর সাদিও মানের জোড়া গোলে প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে লিড নেয় লিভারপুল। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জ্যাক গ্রিলিশ আর যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে বার্নার্দো সিলভা গোল করলেও ম্যাচে ফিরতে পারেনি সিটিজেনরা। শেষ পর্যন্ত ওই ৩-২ গোলে হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় সিটিকে।
ফুটবল বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে অন্যতম ম্যানচেস্টার সিটি এবং লিভারপুল। গেল সপ্তাহেই প্রিমিয়ার লিগে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। তবে ম্যাচের ফলাফল না আসলেও ফুটবলপ্রেমিদের কাছে ম্যাচটি ইউরোপিয়ান এক ক্লাসিক ম্যাচ হয়েই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঠিক তেমনই আরেকটি ম্যাচের দেখা মিলল এফএ কাপের সেমিফাইনালে। এবার অবশ্য ফলাফল এসেছে। পেপ গার্দিওলার দলকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে ইয়্যুর্গেন ক্লপের দল।
ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৯ মিনিটের মাথায় ইব্রাহিম কোনাতে গোল করে লিভারপুলকে লিড এনে দেন। এর মাত্র আট মিনিট পরে সাদিও মানের গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে লিভারপুল। আর প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে ব্যবধান ৩-০ করেন মানে। বিরতি থেকে ফিরেই দ্বিতীয় মিনিটে জ্যাক গ্রিলিশ গোল করলে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় সিটিজেনরা। তবে দ্বিতীয় গোলের দেখা শেষ পর্যন্ত পেলেও তা অনেক দেরিতে আসে। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে বার্নার্দো সিলভা গোল করলে ব্যবধান ৩-২ করে সিটিজেনরা। তবে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় গোলের দেখা আর পাওয়া হয়নি তাদের। এতেই এফএ কাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় পেপ গার্দিওলার দলকে।
চলতি মৌসুমে পেপ গার্দিওলার দল ছুটছিল ইউরোপিয়ান ট্রেবলের দিকেই। তবে লিভারপুলের কাছে এফএ কাপের সেমিফাইনালে হেরে শেষ হয়ে গেল সেই আশা। এদিকে মৌসুমে এরই মধ্যে লিগ কাপ জেতা লিভারপুলের সামনে এখনো চার শিরোপার সবগুলো জয়ের সম্ভাবনা টিকে রইল।
সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কেভিন ডি ব্রুইনকে বেশ মিস করেছেন গার্দিওলা। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ইনজুরিতে পড়েন বেলজিয়ান এই তারকা। তাকে ছাড়াও শক্তিশালী একাদশই সাজিয়েছিলেন গার্দিওলা। মধ্যমাঠে ফার্নান্দিনহোর সঙ্গে ছিলেন ফিল ফোডেন এবং বার্নার্দো সিলভা। আর আক্রমণভাগে রহিম স্টার্লিংয়ের সঙ্গী ছিলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস এবং হান্ড্রেড মিলিয়ন ম্যান জ্যাক গ্রিলিশ।
অন্যদিকে বেনফিকার বিপক্ষে বিশ্রামে থাকা মোহাম্মদ সালাহ, সাদিও মানে, ভ্যান ডাইকসহ সকলেই ফিরেছেন একাদশে। আর একাদশে ফিরেই বাজিমাত অলরেডদের।
পেপ গার্দিওলার দল সবসময়ই বল দখলে রেখে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তবে এদিন ইয়্যুর্গেন ক্লপের কৌশল ছিল ভিন্ন। সিটিকে বল দখলের লড়াইয়ে হারিয়ে দেয় থিয়াগো, ফ্যাবিনহো আর নবি কেইটাদের নিয়ে গড়া মধ্যমাঠ। গোটা ম্যাচে ৫০.৬ শতাংশ বল দখলে রাখে লিভারপুল আর সিটির দখলে থাকে ৪৯.৪ শতাংশ বল। আক্রমণের দিক দিয়ে দুই দলই লড়েছে সমানে সমান। লিভারপুলের ১১টি শটের বিপরীতে সিটির শট সংখ্যা ১০টি। যার মধ্যে অলরেডদের ৭টি শট ছিল লক্ষ্যে আর সিটির লক্ষ্যে শট সংখ্যা ৬টি।
সমানে সমান লড়াই চালালেও ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয় প্রথমার্ধ। ৯ মিনিটের মাথায় অ্যান্ড্রিউ রবার্টসনের কর্নার থেকে লাফিয়ে উঠে হেডে গোল করে অলরেডদের লিড এনে দেন ডিফেন্ডার ইব্রাহিম কোনাতে। এরপর ডিফেন্ডার জন স্টোন্সের করা ভুলের মাশুল গুনেছে সিটি। মানের চাপে পড়ে স্টোনস বল ব্যাক পাস দেন এডারসনের উদ্দেশ্যে। তবে সেই বল দৌড়ে ধরে ফেলেন মানে আর বল ধরেই হালকা টোকায় বল জালে জড়িয়ে লিভারপুলকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন।
প্রথমার্ধের তখন অন্তিম মুহূর্তের খেলা চলছিল। দুর্দান্ত এক আক্রমণে রবার্টসনের শট ব্লক হলে তা পেয়ে যান থিয়াগো। বল পেয়ে মোহাম্মদ সালাহর সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান খেলে বল নিয়ে আবার আক্রমণ সাজান থিয়াগো। এবার জায়গা করে নিয়ে ডি-বক্সের ভেতরে থাকা সাদিও মানেকে খুঁজে নেন থিয়াগো আর বল পেয়ে তা জালে জড়াতে একচুল ভুল করেননি মানে। নিজের দ্বিতীয় গোলে দলকে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন এই স্নেগালিজ তারকা।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে সিটি। মাঠে ফিরে দুই মিনিটের মাথায় গ্যাব্রিয়েল জেসুসের পাস থেকে দারুণ এক গোলে ব্যবধান ৩-১ করেন জ্যাক গ্রিলিশ। এরপর একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে সিটিজেনরা। তবে লিভারপুলের রক্ষণ রুখে দিতে থাকে সিটির সব আক্রমণ। শেষ পর্যন্ত অলরেডদের রক্ষণ ভাঙতে পেরেছিল সিটি। কিন্তু তাতে দেরি হয়ে গেছে বেশ। ম্যাচের নির্ধারিত সময় শেষে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে বার্নার্দো সিলভা গোল করলে তা কেবল ব্যবধানই কমাতে পারে। এতেই লিভারপুল ৩-২ গোলের জয় নিয়ে ১০ বছর পর এফএ কাপের ফাইনালের টিকিট কাটে।
সারাবাংলা/এসএস
এফএ কাপ টপ নিউজ ম্যানচেস্টার সিটি বনাম লেস্টার সিটি সেমিফাইনাল