অদ্ভুতুড়ে ব্যাটিং, ফলোঅনের শঙ্কা নিয়ে ৪র্থ দিন শেষ করল বাংলাদেশ
৭ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:৪৮ | আপডেট: ৭ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:২৮
৫ দিনের টেস্টের দুই দিনেরও বেশি ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। প্রথম দিনের সেই ৫৭ ওভারের পর তাই খেলা শুরু হলো একেবারে চতুর্থ দিনে। তাতে স্বাভাবিক চিন্তায় এই টেস্টের ভাগ্যে ড্র-ই দেখতে পাচ্ছিলেন বেশিরভাগ দর্শক। এদিনও প্রায় দেড় সেশন পাকিস্তানি ব্যাটাররাই খেলে ফেলার পর সেই ফল আরও প্রকট হচ্ছিল। কিন্তু ৩০০ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ম্যাচটা জমিয়ে তুলতে চাইল পাকিস্তান। বাংলাদেশি ব্যাটাররাও বোধহয় ড্র-এর বদলে ম্যাচের ফল বের করতেই মনোযোগী হলেন। আর সে কারণেই কি না ৩০০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে রীতিমতো ফলোঅনের শঙ্কায় পড়েছে বাংলাদেশ! ফলোঅন এড়াতে ২৫ রান বাকি থাকতেই চতুর্থ দিনের খেলা শেষ ঘোষণা করেন আম্পায়াররা।
পাকিস্তানি দুই স্পিনার, বিশেষ করে সাজিদ খানের ঘূর্ণিতে নাজেহাল হয়ে এখন পর্যন্ত ২৬ ওভার ব্যাটিং করতেই ড্রেসিং রুমে ফিরে গেছেন ৭ টাইগার ব্যাটার। সপ্তম উইকেট অবশ্য গেছে ইনিংসের ২১তম ওভারেই। আর এখন পর্যন্ত বোর্ডে রান উঠেছে মাত্র ৭৬। ফলোঅন এড়াতেই এখনো প্রয়োজন ২৫ রান। সাকিব আল হাসান এখনো অপরাজিত থাকলেও তিনি যেভাবে টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাট চালানোর চেষ্টা করছেন, তাতে ১০১ রানও এখন সুদূর পরাহতই মনে হচ্ছে।
অভিষেকে শূন্যতে ফিরলেন মাহমুদুল
৩০০ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা পাকিস্তানের। এরপর প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। মাত্র ২২ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছে স্বাগতিকরা। এরপর চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ দল।
পাকিস্তানের ৩০০ রানে ইনিংস ঘোষণা ঘোষণার পর ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টে সাকিব আল হাসানের কাছ থেকে টেস্ট ক্যাপ নিয়ে অভিষেক ঘটে মাহমুদুল হাসান জয়ের। এরপর দুই দিন তো খেলায় হলো না বৃষ্টিতে। অবশেষে চতুর্থ দিনে এসে ব্যাট হাতে নামল বাংলাদেশ। তবে অভিষেক টেস্টে মাহমুদুল হাসান জয় উইকেটে টিকলেন কেবল ৭ বল। তার বিদায়ে বাংলাদেশ এখন ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৫ রানে ব্যাট করছে।
সাদমান ইসলামের সঙ্গে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করতে নামলেন অভিষিক্ত তরুণ ব্যাটার মাহমুদুল হাসান জয়। কঠিন কন্ডিশন ও উইকেটে পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের সামনে এখন কঠিন পরীক্ষা বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের। আর এসময়ই ভুলটা করে বসলেন মাহমুদুল।
অভিষেক টেস্টে ব্যাটিংয়ে নেমে মাহমুদুল হাসান টিকলেন মাত্র ৭ বল। অফ ব্রেক বোলার সাজিদ খানের অফ স্টাম্পের বাইরে কিছুটা ঝুলিয়ে দেওয়া বলে খোঁচা দিয়ে স্লিপে দাঁড়ানো অধিনায়ক বাবর আজমকে ক্যাচ দিলেন মাহমুদুল। এতেই মাত্র ১ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
৩০০—তে ইনিংস ঘোষণা পাকিস্তানের
এরপর দলীয় ২০ রানে উইকেট বিলিয়ে ফেরেন সাদমান (৩)। প্রথম থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন তিনি। পাকিস্তানি বোলারদের দারুণ বোলিংয়ে চাপে পড়েছিলেন সাদমান। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে আলগা শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিলেন এই ওপেনিং ব্যাটার! অফ স্পিনার সাজিদ খানকে দ্বিতীয় সাফল্যটি সাদমান উপহার দিলেন আলগা শট খেলেই। অফ স্টাম্পের বাইরে আপাত নির্বিষ একটা বলে কাট জাতীয় একটা শট খেলতে গিয়ে পয়েন্টে বদলি ফিল্ডার হাসান আলীকে ক্যাচ দিয়েছেন সাদমান।
চারে ব্যাট হাতে আসেন অধিনায়ক মুমিনুল হক (১)। ১১তম ওভারের ১ম বলে সাজিদ খানকে পয়েন্টের দিকে ঠেলেছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসান আলী। সরাসরি থ্রোতে তিনি নন স্ট্রাইকিং প্রান্তের স্টাম্প উপড়ে দেন। এতেই রান আউট মুমিনুল।
এরপর আর কেউই দাঁড়াতে পারেনি ক্রিজে। চা-বিরতির পর ১২.৩ ওভারে দলীয় ৩১ রানে ফেরেন মুশফিক (৫)। এরপর দলীয় ৪৬ রানে লিটন দাস (৬) ফেরেন। উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। এরপর দারুণ খেলতে থাকা নাজমুল শান্ত ফিরলেন ৩০ রান করে। তিনি যখন আউট হলে তখন দলীয় সংগ্রহ ৬৫। এরপর ৮ বল খেলে মিরাজ ফেরেন কোনো রান না করেই। বাংলাদেশ ৭১ রানে হারায় ৭ম উইকেট।
এতেই ফলোঅনে পড়ার শঙ্কা আরও বেশি শক্ত হয়ে ওঠে। তবে শেষ পর্যন্ত চতুর্থ দিনে আর ফলোঅনে পড়ার লজ্জায় পড়তে হয়নি বাংলাদেশের। আলো স্বল্পতায় নির্ধারিত সময়ের আগেই দিনের খেলা বন্ধ করে দেন আম্পায়াররা। চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ৭৬ রান। ফলোঅন এড়াতে বাংলাদেশের প্রয়োজন আরো ২৫ রান। উইকেটে আছেন সাকিব আল হাসান (২৩) এবং তাইজুল ইসলাম (০)।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড:
১ম ইনিংস (চতুর্থ দিন)
পাকিস্তান: ৩০০/৪; (আবিদ ৩৯, শফিক ২৫, আজহার ৫৬, বাবর ৭৬, ফাওয়াদ ৫০, রিজওয়ান ৫৩); (এবাদত ২৩-৩-৮৮-১, খালেদ ১৭.৩-৫-৪৯-১, তাইজুল ২৫-৬-৭৩-২, সাকিব ১৯-৭-৫২-০, মেহেদী মিরাজ ১৪-২-৩৭-০)।
বাংলাদেশ: ২২/৩; (মাহমুদুল জয় ০, সাদমান ১, মুমিনুল ১, শান্ত ৩০, মুশফিক ৫, লিটন ৬, মিরাজ ০, সাকিব ২৩*, তাইজুল ০*); (আফ্রিদি-১-১-০-০, নুমান ১২-২-৩৩-০, সাজিদ ১২১-৩-৩৫-৬)।
বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে ২২৪ রানে।
সারাবাংলা/এসএস