চার-ছক্কার তালে তাদের জীবন চলে
২৮ নভেম্বর ২০২১ ১৮:৩৮ | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২১ ২০:২২
চট্টগ্রাম থেকে: খেলাধুলা মানেই চিত্তবিনোদন। কিন্তু সবার কাছেই কি তাই? অন্তত রহিম মিয়া, মিন্টু মিয়াদের কাছে খেলা মানেই নিছক বিনোদন নয়। মাঠে খেলা গড়ানো মানেই তাদের কাছে জীবিকার চাকাও গড়ানো। স্টেডিয়ামে যখন চার-ছক্কার লড়াই জমে, তামিম-মুশফিকদের শটে সীমানা পেরোয় বল— গ্যালারিতে তখন বয়ে যায় আনন্দের জোয়ার। আর তাতেই জীবনের চাকাটাও যে ঘোরে রহিম মিয়া-মিন্টু মিয়াদের! দর্শকরা বিনোদনের জন্য ক্রিকেট ম্যাচের অপেক্ষায় থাকলেও রহিম মিয়াদের কাছে এর অপেক্ষা তাই একটু বাড়তি উপার্জনে একটু ভালো থাকার!
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের বাইরে বিভিন্ন আকৃতির পতাকা, ক্যাপ, ব্যানার-ফেস্টুন, মাস্ক ইত্যাদি নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেল রহিম মিয়াকে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম দিন থেকেই স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় জায়গা করে নিয়েছেন এসব উপকরণ নিয়ে। স্টেডিয়ামের পাশের গ্রামের এই বাসিন্দা পাঁচ দিনের জন্য মুদি দোকানদার থেকে হয়ে গেছেন পতাকা-ক্যাপ, ব্যানার-ফেস্টুনের ফেরিওয়ালা।
রহিম মিয়া সারাবাংলাকে বলছিলেন, এলাকায় মুদি দোকান থাকলেও তার বেচাবিক্রি খুব একটা আশাপ্রদ নয়। সে তুলনায় দিন পাঁচেকের একটি টেস্ট ম্যাচে হঠাৎ করেই ‘খণ্ডকালীন পতাকাওয়ালা’ হিসেবে যে উপার্জন, সেটি দোকানের পাঁচ দিনের উপার্জনের কয়েক গুণ।
আরও পড়ুন- সকালের স্বপ্ন বিকেলেই পরিণত দুঃস্বপ্নে
শুধু রহিম মিয়া নন, সোমবার (২৮ নভেম্বর) স্টেডিয়ামপাড়া ঘুড়ে দেখা গেল— এমন মৌসুমি ব্যবসায়ীর সংখ্যা প্রায় শ’খানেক। কেউ বিক্রি করছেন পতাকা-ক্যাপ, কেউ বিক্রি করছেন প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন, কেউ বিক্রি করছেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম তথা মাস্ক-স্যানিটাইজার। এছাড়া চা-সিগারেট, বাদাম-বুট, ফুচকা-চট্পটি-ঝালমুড়ির দোকানদার তো আছেনই। আর তাদের বেশিরভাগই নিয়মিত পেশা ছেড়েই ক’দিনের জন্য ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে বসে গেছেন স্টেডিয়াম এলাকায়। তাদের মধ্যে দেখা গেল কয়েকজন শিক্ষার্থীকেও।
স্থানীয়রা বলছেন, জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের খেলা মানেই এমন এক-দেড়শ মানুষের কয়েকদিনের একটু বাড়তি উপার্জনের সুযোগ। কারণ এই স্টেডিয়ামের গ্যালারি কখনোই ফাঁকা থাকে না। এবারেও যেমন গ্যালারির অর্ধেক আসনে দর্শক রাখার সুযোগ থাকলেও সেই অর্ধেক টিকিটের সবগুলোই বিক্রি হয়েছে। আর স্টেডিয়ামে আগত দর্শকদের কাছে এই মৌসুমি ব্যবসায়ীদের বেচাবিক্রিটা ভালোই হয়ে থাকে।
সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে ষাটোর্ধ্ব রহিম মিয়া বলেন, ‘মুদি দোকানে তেমন বেচা-কেনা নাই। দিন প্রতি এক-দুইশ টাকা বিক্রি হয়। কিন্তু খেলার মধ্যে স্টেডিয়ামের এই খানে বসতে পারলে খুব ভালো আয় হয়। প্রথম দিনেও (বাংলাদেশ-পাকিস্তান চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন) বিক্রি করছি চার হাজার টাকা, দ্বিতীয় দিন বিক্রি করছি তিন হাজার। বিক্রির সাথে সাথে লাভও ভালো।’
ব্যবসায়িক লাভের সঙ্গে অবশ্য আরও একটি সন্তুষ্টি রয়েছে রহিম মিয়ার। বিশেষ করে যখন পতাকা বিক্রি করেন আর বাংলাদেশ জিতে যায়, তার আনন্দটা আরও বেড়ে যায়। রহিম মিয়া বলেন, ‘আমরা তো পতাকার জন্যই যুদ্ধ করছি। নিজের হাতে সেই পতাকা বিক্রি করি। সেইটার একটা আনন্দ আছে। কারও মাথায় যখন পতাকা বেঁধে দেই, কারও হাতে যখন পতাকা তুলে দেই, খুব ভালো লাগে। আর বাংলাদেশ জিতলে সবাই যে খুশিটা হয়, সেইটার কোনো তুলনা নাই।’
আরও পড়ুন- তামিমকে ছাড়িয়ে চূড়ায় মুশফিক
স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকাতেই ঝালমুড়ি বিক্রি করতে দেখা গেল মিন্টু মিয়াকে। চাকরি করতেন চট্টগ্রাম শহরের একটি লেদ কারখানায়। কিছুদিন আগে দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হয়েছেন। বাচ্চার দেখভাল করতে হচ্ছে বলে আপাতত চাকরি ছেড়েছেন। জহুর আহমেদে বাংলাদেশের খেলা উপলক্ষে তাই পাঁচ দিনের জন্য ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন মিন্টু। বললেন, বিক্রি ভালোই হচ্ছে।
মিন্টু বলেন, ‘আমার মতো অনেকেই অপেক্ষা করে কখন এই মাঠে খেলা শুরু হবে। কারণ এখানে খেলা হলে অনেক মানুষ আসে। আমি যেমন ব্যবসা শুরু করছি, খেলা উপলক্ষে অনেকে তেমনি অনেক কিছু করছে।’
ফুচকা-চটপটি বিক্রেতা নাহিদ হাসান বললেন, ‘বাংলাদেশের খেলা থাকলে এখানে উৎসবের মতো মনে হয়। অনেক দূর থেকে বিভিন্ন ধরনের মানুষ আসে। এই যেমন আপনারাই (সাংবাদিক) আসছেন। মনে হয় মেলা লেগেছে। সে জন্য খেলা দেখতে না ঢুকলেও (স্টেডিয়ামে) এদিকে আসতেও ভালো লাগে। বিভিন্ন কিছু দেখাও হলো আবার ব্যবসাও হলো।’
ক্রিকেট পাগল বাংলাদেশে খেলা নিয়ে উন্মাদনাটা বলতে গেলে সার্বজনীন। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকার প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষগুলোর কাছে খেলাটা ক’দিনের জীবিকা হয়ে ওঠে বলেই তাদের কাছে এর আবেদন একটু বেশিই। দল ভালো খেললে যে মাঠে দর্শকদের আনাগোর সঙ্গে তাদের বেচাবিক্রিও বাড়ে!
জীবিকার এই হিসাব ছাড়াও ক্রিকেটের উন্মাদনাটা ছুঁয়ে যায় তাদেরও। রহিম মিয়া-মিন্টু মিয়ারা যেমন বলছিলেন— বেচাবিক্রি বেশি হলে তো ভালো লাগেই। কিন্তু মাঠে বাংলাদেশ জিতলে যে আনন্দ, তার সাথে আর কোনো কিছুর কি তুলনা হয়!
আরও পড়ুন-
আবারও শুরুতেই বিপর্যয়ে বাংলাদেশ
কাল শুরুতেই ২/৩ উইকেট নিতে চায় বাংলাদেশ
তাইজুলের ৭ উইকেটে ৪৪ রানের লিড বাংলাদেশের
তাইজুল-মিরাজের দাপটে প্রথম সেশনটা টাইগারদের
সারাবাংলা/এসএইচএস/টিআর
ক্রিকেট দর্শক ক্রিকেট ব্যবসা টপ নিউজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ