শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের নতুন পথচলার
১৮ নভেম্বর ২০২১ ২০:২৮ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২১ ১১:১০
প্রত্যাশা ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন ধাপে পদার্পনের মাধ্যম। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশকে টানছেন দীর্ঘদিন। ইনজুরি ইস্যুতে তামিম অবশ্য বিশ্বকাপ খেলতে জাননি, তবে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা মিলে বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে সাফল্য এনে দিবেন। বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়ার আগে সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সিনিয়র ক্রিকেটাররা। কিন্তু স্বপ্ন পরিনত হয়েছে দুঃস্বপ্নে। বিশ্বকাপে চরম ব্যর্থ বাংলাদেশ। আট ম্যাচ খেলে শুধু ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনিকেই হারাতে পেরেছেন টাইগাররা। হারতে হয়েছে স্কটল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষেও। সেই ধাক্কায় উলট-পালটের হাওয়া বইছে বাংলাদেশ দলে। পরিবর্তিত বাংলাদেশের নতুন পথচলা শুরু হচ্ছে রাত পোহালে।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটি খেলতে নামবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের দলে থাকা ৬ ক্রিকেটারের জায়গা হয়নি পাকিস্তান সিরিজের দলে। ছেঁটে ফেলা হয়েছে লিটন দাস, সৌম্য সরকারদের। কোপ পড়েছে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমেরও। পাকিস্তান সিরিজের দল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বলেছিলেন, আগামী বছরের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ‘নতুন পথচলা’ শুরু করছে বাংলাদেশ। কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে শুরু হতে যাচ্ছে সেই পথচলা।
মুশফিক, লিটন, সৌম্যদের ছেঁটে ফেলে পাকিস্তান সিরিজের জন্য তরুণ ইয়াছির আলী রাব্বি, সাইফ হাসান, আকবর আলী, শহিদুল ইসলামদের দলে ডেকেছেন নির্বাচকরা। ইয়াছির আলী রাব্বি অনেকদিন জাতীয় দলের আশেপাশে থাকলেও আকবর আলী ও শহিদুল ইসলামরা একেবারেই নতুন। সাইফ হাসান জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেললেও ছিলেন টি-টোয়েন্টি দলের অনেক বাইরে। অবশ্য একদিন আগে দলে ডাক পাওয়া অপর তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, তরুণরা প্রস্তুত। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও বলেছেন, তরুণদের দায়িত্ব নেওয়ার এটাই সেরা সুযোগ। তবে কাজটা নিশ্চয় সহজ হবে না।
কারণ সেমিফাইনাল থেকে ফিরলেও পাকিস্তান এবারের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে। বিশ্বকাপে নতুন বলে শাহিন শাহ আফ্রিদি ছিলেন রীতিমতো আনপ্রেয়েবল। ইমাদ ওয়াসিম, শাদাব খানরা আছেন ফর্মে। বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান সারা বছরের মতো বিশ্বকাপেও ছিলেন দুর্দান্ত। অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক, তরুণ আসিফ আলিরা আছেন ছন্দে। এক মোহাম্মদ হাফিজ ছাড়া পূর্নশক্তির দল নিয়েই বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে এসেছে পাকিস্তান।
অর্থাৎ একদিকে দুর্দান্ত পাকিস্তান, অন্য দিকে বিশ্বকাপের জীর্ন শীর্ন তরুণ বাংলাদেশ। নিশ্চয় কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। আজ ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সেটা স্বীকারও করলেন, ‘তরুণ দল, এটা কিছুটা চ্যালেঞ্জের তো হবেই। তবে চাপের কিছু নেই এতে। এটা চ্যালেঞ্জিং একটা সিরিজ হবে। শাহীন শাহ আফ্রিদি ওদের বেশিরভাগ ম্যাচেই দলে বড় ভূমিকা রাখছে, বিশেষ করে নতুন বলে। ওই জিনিসটা আমাদের মাথায় আছে, আমরা পর্যালোচনা করেছি।’
ওদিকে পাকিস্তানি অধিনায়ক বাবর আজম অবশ্য বলছেন, বাংলাদেশকে সহজ মনে করছেন না তারা। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডকে সিরিজ হারিয়েছে সেটি মনে করিয়ে দিলেন পাকিস্তানি তারকা। আজ ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাবর বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ ঘরের মাঠে সহজ প্রতিপক্ষ নয়। তারা নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিকট অতীতে দারুণ পারফরম্যান্স করেছে। তারা কতটা সামর্থ্যবান, সেটা করে দেখিয়েছে।’
প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের হয়ে কারা কারা মাঠে নামছেন তা মোটামুটি নিশ্চিত। ম্যাচের আগের দিন ১২ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। যেখানে বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করা ইমাদ ওয়াসিম, আসিফ আলীরা নেই। বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে তাদের। ডাকা হয়েছে হায়দার আলী, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ নওয়াজ, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের মতো তরুণদের।
বাংলাদেশের একাদশ কেমন হবে সেটাই বড় প্রশ্ন। সাকিব আল হাসান ইনজুরিতে। দলের নিয়মিত সদস্য মুশফিক, লিটন, সৌম্য নেই। শোনা যাচ্ছে, তাদের অনুপস্থিতিতে ওপেনিংয়ে নাইম শেখের সঙ্গী হচ্ছেন তরুণ সাইফ হাসান। তিনে সাকিবের জায়গায় প্রবল সম্ভবনা অপর তরুণ নাজমুল হোসেন শান্তর। মুশফিকুর রহিমের জায়গায় ইয়াছির আলী রাব্বির অভিষেক হওয়ার সম্ভবনা বেশি। বোলিং আক্রমণে খুব বেশি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভবনা কম।
প্রথমবার স্কোয়াডে ডাক পাওয়া তরুণ পেসার শহিদুলকে বাইরে রেখে মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইলামের মাঠে নামার সম্ভবনাই বেশি। সাকিবহীন স্পিন আক্রমণে শেখ মেহেদি হাসানের সঙ্গী হতে পারেন নাসুম আহমেদ।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটা শুরু হবে বাংলাদেশ দুপুর ২টায়।