বিশ্বকাপকে সামনে রেখে মিশন নিউজিল্যান্ড
৩১ আগস্ট ২০২১ ২৩:২৩ | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২১ ২৩:২৯
নিউজিল্যান্ড আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য যে দল ঘোষণা করেছে তার একজনও নেই বাংলাদেশ সফরের দলে। এতেই বুঝা যাচ্ছে কিউইদের কাছে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজটা কী। অন্তত এটা পরিস্কার যে এই সিরিজকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে ধরছে না নিউজিল্যান্ড। কিন্তু বাংলাদেশের লক্ষ্য ঠিক উল্টো। এই সিরিজকে মাস দেড়েক পড়ে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপের শেষ প্রস্তুতি মনে করছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ দলের জন্য বিবেচনায় থাকা প্রায় সবাই আছেন এই সিরিজের দলে। সিরিজ জয়ের মাধ্যমে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটাই মূল লক্ষ্য মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলের।
এই লক্ষ্য নিয়ে কাল মাঠে নামছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটি মাঠে গড়াবে আগামীকাল। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটা শুরু হবে বিকেল ৪টায়।
ফেভারিট তত্ত্বের হিসেবে সিরিজে নিশ্বন্দেহে এগিয়ে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম, লিটন দাসরা দলে ফিরেছেন। ওপেনিংয়ে এক তামিম ইকবাল বাদে পূর্ণ শক্তি দলই পাচ্ছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক ফর্মে বাংলাদেশ আত্মবিশ্বাসীও। অনেকদিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে ভালো ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। জিম্বাবুয়ে থেকে সিরিজ জিতে ফেরার পর ঘরের মাঠে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহর দল। তাছাড়া সিরিজটা হচ্ছে নিজেদের মাঠে আর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ বরাবরই শক্ত প্রতিপক্ষ।
ওদিকে, নিউজিল্যান্ড এসেছে অনেকটা আনকোড়া দল নিয়ে। গত প্রায় আড়াই বছর যাবত টি-টোয়েন্টি খেলেননি টম লাথাম, সেই লাথামই কিউইদের নেতৃত্ব দিবেন বাংলাদেশ সফরে। তারুণ্যনির্ভর এই দলটা অভিজ্ঞতাতেও বেশ পিছিয়ে। এক সাকিব আল হাসান যতো ম্যাচ খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের এই দলের সব ক্রিকেটারদের মোট টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সংখ্যাও তার চেয়ে কম!
তবে টি-টোয়েন্টিতে ফেভারিট তত্ত্ব যে খুব বেশি কাজে লাগে না সেটা ভালো করেই জানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। একটা দুইটা ইনিংস বা একট দুইটা ওভারই ঘুরিয়ে দিতে পারে ম্যাচের মোড়। আজ ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলছিলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট এমন, আপনি নিজেকে ফেভারিট ভাবতেও পারেন, আবার যদি অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যান, তাহলে নেতিবাচক হয়ে যেতে পারে। নির্দিষ্ট দিনে কন্ডিশন ও উইকেট পর্যালোচনা করে ভালো খেলার যে তাড়না, সেটা থাকা দরকার। সেই জিনিসগুলো নিশ্চিত করতে পারলে ও ইতিবাচক ভাবে চিন্তা করতে পারলে, আমাদের ভালো সুযোগ থাকবে। ওরা যে দলই নিয়ে এসেছে, ওরা ভালো দল। ওরা সবসময়ই ডিসিপ্লিনড দল, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। যে পরিকল্পনা করে, সবসময়ই সেটায় অটল থাকার চেষ্টা করে। ওদের সঙ্গে ভালো করতে হলে আমাদেরও গোছানো ক্রিকেট খেলতে হবে।’
কন্ডিশন, দলীয় শক্তি আর ফর্ম বাংলাদেশের পক্ষে হলেও ইতিহাস কিন্তু পুরোপুরি নিউজিল্যান্ডের পক্ষে কথা বলছে। দলটির বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১০টি টি-টোয়েন্টি খেলে জয়শূন্য বাংলাদেশ, হেরেছে দশ ম্যাচেই। সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহ, ‘নিউজিল্যান্ডকে আমরা কখনও হারাতে পারিনি টি-টোয়েন্টিতে। এটা আমাদের জন্য ভালো সুযোগ, দল হিসেবে আমরা যেন নিজেদের ছাপটা রাখতে পারি। ঘরের মাঠে আমরা খুবই ভালো দল, এটা প্রমাণ করার তাগিদও আছে। আশা করি, ছেলেরা এটার জন্য তৈরি।’
স্কোয়াডে ফেরা লিটন দাস, মুশফিকুর রহিমের একাদশে থাকাও মোটামুটি নিশ্চিত। সেই হিসেবে সর্বশেষ সিরিজ খেলা দুইজনকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। ওপেনিংয়ে সৌম্য সরকারের কাটা পড়ার সম্ভবনার কথাই বেশি। মিডল অর্ডারে মুশফিককে জায়গা করে দিতে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, শামীম পাটোয়ারি বা শেখ মেহেদি হাসানের কেউ জায়গা হারাতে পারেন। মুশফিক ফিরে আসাতে উইকেট কিপিং নিয়ে একটা বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। কারণ সর্বশেষ দুই সিরিজে দুর্দান্ত কিপিং করেন নুরুল হাসান সোহান। একদিন আগে এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিয়েছেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। জানিয়ে দিয়েছেন, প্রথম দুই ম্যাচ কিপিং করবেন সোহান, পরের দুই ম্যাচ মুশফিক। পঞ্চম ম্যাচের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরে। আজ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ দাবি করেছেন, এসব নিয়ে মুশফিক-সোহানের ‘মন খারাপ’ নেই।
ওদিকে, সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে না এলেও নিউজিল্যান্ড আগেই সিরিজ জয়ের লক্ষ্যের কথা বলেছে। প্রস্তুুতিতেও ঘাটতি রাখেনি কিউইরা। বাংলাদেশের উইকেট মন্থর হবে জেনে দেশে মন্থর উইকেট তৈরি করে অনেকদিন অনুশীলন করেছেন কিউইরা। দলীয় কম্বিনেশনও বেশ দারুণ। টম লাথাম, হেনরি নিকোলাসদের মতো অভিজ্ঞদের সঙ্গে একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার নিয়ে এসেছে নিউজিল্যান্ড যাদের সবাই বেশ প্রতিশ্রুতিশীল।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে কিউইদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম লাথামও বলছেন সেসব কথা, ‘মাসখানেক আগে অস্ট্রেলিয়া যেরকম উইকেট পেয়েছে, আমরা সেরকম উইকেটের জন্যই অনেকটা প্রস্তুত। দেশে মাউন্ট মঙ্গানুই ও লিঙ্কনে খুব ভালো ক্যাম্প করে এসেছি আমরা। আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও চ্যালেঞ্জিং উইকেটের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা। এখানেও পাঁচ দিনে খুব ভালো অনুশীলন হয়েছে আমাদের। চেষ্টা করেছি এখানকার আবহাওয়া ও উইকেটের সঙ্গে যতটা সম্ভব মানিয়ে নিতে।’
কিউই দলপতি বলেন, ‘দেশের হয়ে খেলতে নামলে নিজেদের অনুপ্রাণিত করা খুবই সহজ। ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজের খুব একটা সুযোগ হয় না টি-টোয়েন্টি খেলার, এই সুযোগ তাই রোমাঞ্চকর। দলের অন্যদেরও মানসিকতা একই। মাঠে নেমে আমাদের উপভোগ করতে হবে, এই কন্ডিশনে যে ঘরানায় সফল হতে পারি বলে আমরা মনে করি, সেটায় অটুট থাকতে হবে। অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য সিরিজ জয়।’
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের মতো অতোটা মন্থর উইকেট না হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বাংলাদেশ কোচের কথায়। সে হিসেবে হয়তো রান উঠবে। তবে এমন উইকেটেও কীভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে হয় সেটা ভালো করেই জানেন সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমানরা। রান তোলার টনিক জানা আছে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহদের। নিশ্চয় আকেরটা সিরিজ জিতে বিশ্বকাপ খেলতে যেতে চাইবে বাংলাদেশ।
টপ নিউজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজ মাহমুদউল্লাহ মুশফিকুর রহিম সাকিব আল হাসান