৮ বছর পর প্রতিশোধ, স্পেনকে হারিয়ে ইউরোর ফাইনালে ইতালি
৭ জুলাই ২০২১ ০৩:৪৪ | আপডেট: ৭ জুলাই ২০২১ ০৪:২৬
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলিতে মুখোমুখি হয় ইতালি ও স্পেন। দুর্দান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে নির্ধারিত ৯০ মিনিট ১-১ গোলে সমতায় শেষ হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এই সময়েও কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে যায় টাইব্রেকারে। আর টাইব্রেকারে স্পেনকে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে ২০২০ ইউরোর ফাইনালে জায়গা করে নেয় ইতালি। ইতালির হয়ে একমাত্র গোলটি আসে ফেদেরিখো কিয়েসার কাছ থেকে আর স্পেনকে সমতায় ফেরান আলভারো মোরাতা।
২০১২ সালের ইউরোর ফাইনালে ইতালিকে ৪-০ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোর শিরোপা ঘরে তোলে স্পেন। আর শেষবার ১৯৬৮ সালে ইউরোর শিরোপা ঘরে তোলা ইতালি নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জেতা হয়নি। আর ৮ বছর পরে এসে স্পেনকে টূর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে যেন সেই প্রতিশোধটাই নিল আজ্জুরিরা।
ইতালির বিপক্ষে সেমিফাইনালে মুহূর্তের মধ্যেই হিরো থেকে ভিলেনে পরিণত হলেন ড্যানি অলমো এবং আলভারো মোরাতা। আজ্জুরিদের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও অলমোর অ্যাসিস্ট থেকে ৮০তম মিনিটে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান আলভারো মোরাতা। আর স্পেনকে ফাইনালের পথেই রাখেন এই দুই খেলোয়াড়। তবে নির্ধারিত ৯০ মিনিট এবং অতিরিক্ত সময়ও ১-১ গোলে শেষ হওয়ায় ফলাফল নির্ধারণের জন্য খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। আর টাইব্রেকারেই ভিলেনে পরিণত হন এই দুই স্প্যানিয়ার্ড। স্পেনের প্রথম শট নিতে এসে বারের উপর দিয়ে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেন অলমো আর চতুর্থ পেনাল্টি নিতে আসা মোরাতার শট রুখে দেন ডোনারুমা।
এই দুইয়ের পেনাল্টি শট মিসের কারণেই শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ইতালির কাছে ৪-২ ব্যবধানে হেরে যায় স্পেন। তাতেই সেমিফাইনালে শেষ হয়ে যায় স্পেনের ইউরো ২০২০-এর যাত্রা।
গোটা ম্যাচ জুড়ে ৭০ শতাংশ বল বল দখলে রেখে মোট ১৬টি শট নিয়েছে স্পেন যার মধ্যে ৫টিই ছিল ইতালির গোল বরাবর। অন্যদিকে ম্যাচের তিন ভাগের এক ভাগের থেকেও কম সময় বলের দখলে থেকে ইতালির শট সংখ্যা মাত্র ৭টি যার মধ্যে স্পেনের গোল বরাবর শট ছিল চারটি। গোটা ম্যাচে স্পেন মোট ৮০৫টি পাস দিয়েছে নিজেদের মধ্যে বিপরীতে ইতালির পাস সংখ্যা ছিল প্রায় চার ভাগের এক ভাগ মাত্র ২৮৭টি।
ম্যাচের শুরু থেকেই আজ্জুরিদের বিপক্ষে মাঝমাঠের দখল নিয়ে নেয় লা রোজারা। মধ্যমাঠ দখলে রেখে দারুণ সব আক্রমণ সাজাতে থাকে লুইস এনরিকের দল। তবে আজ্জুরিদের জমাট বাধা রক্ষণকে কিছুতেই ফাটল ধরাতে পারছিল না লা রোজারা। এদিকে ম্যাচের শুরুতেই লিড নিতে পারতো আজ্জুরিরা যদিনা বাধা হয়ে দাঁড়াত গোলপোস্ট। তবে গোল হলেও তা বাতিল হয়ে যেত কেননা রিপ্লেতে দেখা মেলে বল রিসিভ করার সময় অফসাইডে ছিলেন বারেল্লান।
এরপর গোটা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় স্পেন। কোনোভাবেই ইতালিয়ানদের আর সুযোগ দিয়ে নারাজ ছিল স্পেনের মধ্যমাঠ। পেদ্রি-বুস্কেটস-কোকে এই মিডফিল্ড ত্রয়ীর বিপক্ষে বল দখলের লড়াইয়ে পেরে উঠছিল না বারেল্লা-জর্জিনহো-ভেরাত্তি ত্রয়ী।
প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে ইনিসিনিয়ের বাড়ানো বল পেয়ে যান এমারসন। বল পেয়ে কঠিন অবস্থার মধ্য থেকেও দারুণ এক শট নেন এমারসন। তবে বল ক্রসবারে লেগে প্রতিহত হলে ম্যাচে লিড নেওয়া হয়নি আজ্জুরিদের।
বিরতির পর ফিরেও মাঠের খেলায় আসেনি তেমন পরিবর্তন। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ স্প্যানিশদেরই থাকে। তবে দ্বিতীয়ার্ধের ১৫তম মিনিটে এসে প্রতি-আক্রমণে গোল করে ইতালিকে ১-০’র লিড এনে দেন ফেদেরিখো কিয়েসা। ডি-বক্স থেকে বেরিয়ে এসে ইতালির গোলরক্ষক জিজি ডোনারুমা বল বাড়িয়ে দেন ইম্মোবিলের উদ্দেশে। বল নিয়ে স্পেনের ডি-বক্সের দিকে এগিয়ে গিয়ে তা বাড়িয়ে দেন কিয়েসার দিকে। স্পেনের দুই ডিফেন্ডারের মধ্য দিয়ে জায়গা করে নিয়ে দূরপোস্টের দিকে বাঁকানো শট নেন এই মিডফিল্ডার। আর তাতেই পরাস্ত উনাই সিমন আর ম্যাচে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ইতালি।
এরপর দ্রুতই আরও কয়েকটি প্রতি-আক্রমণে স্পেনের রক্ষণে ভয় ধরিয়ে দেয় আজ্জুরিরা। তবে আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে দেয়নি স্প্যানিশ রক্ষণভাগ। ৬৫তম মিনিটে কোকের কাছ থেকে দুর্দান্ত একটি বল ফাঁকায় পেয়ে ইতালির গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারলেও বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মিকেল ওয়ারজাবাল। এরপরের মিনিটেই আজপিলিকুয়েটার কাছ থেকে পাওয়া বল ড্যানি অলমোর দিকে বাড়ান ওয়ারজাবাল। জায়গা পেয়ে শট নিলেও তা গোলপোস্টের উপর দিয়ে বাইরে পাঠান অলমো।
গোল হজমের মিনিট খানেক পরেই মাঠে নামেন আলভারো মোরাতা আর মাঠে নামার ২০ মিনিটের মাথায় দলকে সমতায় ফেরান এই স্ট্রাইকার। ম্যাচের ৮০তম মিনিটে নিচে দিকে নেমে রক্ষণভাগের কাছ থেকে বল নিয়ে আক্রমণে যান মোরাতা। এরপর বল বাড়িয়ে দেন বাঁ দিকে থাকা ড্যানিয়েল অলমোর দিকে ফিরতি বল ডি-বক্সের ঠিক সামনে পেয়ে ইতালির রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়ে শট নিয়ে ডোনারুমাকে পরাস্ত করে স্পেনকে ১-১ গোলে সমতায় ফেরান তিনি।
এরপর নির্ধারিত সময়ে ১০ মিনিটে আর কোনো গোল না হওয়ায় খেলা গড়ায় অরতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ে স্প্যানিশরা খেলার গতি কিছুটা কমিয়ে দেয়। গোটা ম্যাচে বেশ ঘাম ঝরানোয় কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে স্পেন আর তাতেই স্প্যানিশদের আক্রমণের ধার কমে যায়। অন্যদিকে নিজেদের রক্ষণকে শক্ত রেখে প্রতি আক্রমণে স্পেনের রক্ষণে ভয় ধরালে অতিরিক্ত সময়ে গোলের দেখা পায়নি ইতালিও। আর তাতেই ম্যাচ শেষ হয় ১-১ গোলের সমতায়। আর ম্যাচের ফলাফলের জন্য অপেক্ষার পালা টাইব্রেকারের।
টাইব্রেকারে প্রথম শট নিতে আসেন ইতালির ম্যানুয়েল লোকাতেল্লি আর প্রথম শটই রুখে দেন স্পেন গোলরক্ষক উনাই সিমন্স। স্পেনের হয়ে প্রথম শট নিতে আসেন গোটা ম্যাচে দুর্দন্ত খেলা অলমো। চাপের মুখে প্রথম শট গোলপোস্টের উপর দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেন। এরপর ইতালি টানা তিনটি শটে গোল করেন আন্দ্রেয়া বেলোত্তি, লেওনার্দো বনুচ্চি আর ফেদেরিখো বার্নার্দেস্কি। আর স্পেনের হয়ে টানা দুটি শটে গোল করেন জেরার্ড মোরেনো এবং থিয়াগো আলকান্ত্রা। টাইব্রেকারে তখন ইতালি ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে।
এরপর শট নিতে আসেন স্পেনকে ম্যাচে সমতায় ফেরানো আলভারো মোরাতা। তার নেওয়া দুর্বল শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুখে দেন ইতালির গোলরক্ষক জিজি ডোনারুমা। পরের শট নিতে এসে জর্জিনহো নিচের কোনা দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে ৮ বছর পর ইতালিকে ইউরোর ফাইনালে তোলেন তিনি। টাইব্রেকারে স্পেনকে ৪-২ ব্যবধানে হারায় আজ্জুরিরা।
ফাইনালে আগামী ১২ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত একটায় মাঠে নামবে ইতালি। তাদের সঙ্গী কে হবে তা জানা যাবে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের ম্যাচের ফলাফলের ওপর। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড ও ডেনমার্ক একে অপরের মুখোমুখি হবে ৮ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়।
সারাবাংলা/এসএস
আজ্জুরি ইউরো ২০২০ ইতালি বনাম স্পেন উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ টপ নিউজ লা রোজা সেমিফাইনাল