চিলিকে থামিয়ে সেমিতে দশ জনের ব্রাজিল
৩ জুলাই ২০২১ ০৮:০৬ | আপডেট: ৩ জুলাই ২০২১ ১২:৩৩
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এগিয়ে যাওয়ার পরপরই দশ জনের দলে পরিনত হলো ব্রাজিল। সরাসরি লাল কার্ড দেখলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। ম্যাচের প্রায় অর্ধেকটা সময় একজন কম নিয়ে খেলতে হয়েছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। তবুও গোল আদায় করতে পারেনি চিলি। ওই এক গোলের জয়েই চিলিকে বিদায় করে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল।
১-০ ব্যবধানের জয়ে ব্রাজিলের হয়ে একমাত্র গোলটা করেছেন লুকাস পাকেতা। অ্যাসিস্ট করেছেন নেইমার। আগামী সোমবার সোমিফাইনালের লড়াইয়ে পেরুর মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। আজ দিনের অপর কোয়ার্টার ফাইনালে প্যারাগুয়েকে পেনাল্টি শ্যুটআউটে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে সেমি নিশ্চিত করেছে গতবারের ফাইনালিস্টরা। দুই দলের নির্ধারিত সময়ের খেলা ৩-৩ ব্যবধানে ড্র ছিল।
রিও ডি জেনিরোতে আজ ব্রাজিল-চিলির লড়াইয়ের শুরুটা ছিল সেয়ানে-সেয়ানে। গ্রুপ পর্বে মোটেও ভালো খেলতে পারেননি ভিদাল, সানসেচ, ব্রাভোরা। তবে বড় ম্যাচে পারফর্ম করতে তারা যে ওস্তাদ শুরুর সময়ে সেটা ভালোই বুঝিয়েছেন গত তিন আসরে দুবার কোপা জয়ী দলটি। ব্রাজিলের চোখে চোখ রেখে আক্রমণে গেছে তারা।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে পিছিয়ে পড়ার পর বল দখলে এগিয়ে থাকলেও চিলির আক্রমণগুলো কেন জানি ধারালো মনে হলো না! ব্রাজিল দশজনের দলে পরিনত হওয়ার পর লিডটা ধরে রাখতে রক্ষণকে আরও জমাট বানিয়ে ফেলে। সেই জমাট রক্ষণের বিপক্ষে সুবিধা করতে পারেনি একজন বেশি নিয়ে খেলা চিলি।
দশম মিনিটে প্রথম শটটা নিয়েছিলেন চিলির ভেগাস। তবে ব্রাজিল গোলরক্ষক এদেরসনের সেটা রুখতে খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হয়নি। পাঁচ মিনিট পর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রিচার্লিসনের শটও সহজে রুখে দেন চিলির গোলরক্ষক ব্রাভো। ২২ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল।
বাঁ-দিক থেকে আক্রমণে উঠে বাঁ পায়ের দারুণ এক ক্রস করেছিলেন নেইমার। গোলবারের সামনে শুধু পা ছোঁয়ানোর দরকার ছিল রোবের্তো ফিরমিনোর। লিভারপুল তারকা পাঁ ছোয়ালেও বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি। মিনিট পাঁচেক পরে হঠাৎ আক্রমণে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন চিলির ভারগাস। ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটা রুখে দেন।
৩৭ মিনিটে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের বাড়ানো বলে নেইমারের করা ফ্লিক আটকে দেন চিলির ডিফেন্ডার সিয়েরালতা। ছয় মিনিট পর নেইমারের কাছ থেকে পাওয়া বল ধরে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন জেসুস। ব্রাভো ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটা রুখে দেন। গোলশূন্য প্রথমার্ধ শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম পাঁচটা মিনিট ছিল নাটকীয়। ফিরমিনোকে উঠিয়ে পাকেতাকে নামান ব্রাজিল কোচ তিতে। পরের মিনিটেই দলকে গোল এনে দেন তিনি। নেইমারের সঙ্গে বল আদান প্রদান করে দারুণ এক শটে গোল করেন তরুণ ফুটবলার। বাতাসে ভাসিয়ে তাকে দেওয়া নেইমারের পাসটা ছিল দুর্দান্ত।
৪৯ মিনিটে দশ জনের দলে পরিনত হয় ব্রাজিল। বল দখলের লক্ষ্যে পা অনেকটা উপরে তুলেছিলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। কিন্তু তার বুট গিয়ে লাগে চিলির ইউজেনিও মেনার মুখে। ঘটনা ঘটিয়ে যেন হতভম্ব জেসুস, হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেন। রেফারি সরাসরি লাল কার্ড দেখান ম্যানচেস্টার সিটির তারকাকে। গত আসরের ফাইনালেও লাল কার্ড দেখেছিলেন জেসুস।
দশ জনের দলে পরিনত হওয়ার পর ব্রাজিল দারুণ পরিকল্পিত ফুটবল খেলেছে। আক্রমণে পরে ছিলেন কেবল এক রিচার্লিসন। নেইমারসহ বাকি সবাই লেগে পড়েন রক্ষণ সামলাতে। রিচার্লিসনকেও মাঝে মধ্যে দেখা যায় রক্ষণে। আবার নিজেরা বল পেলেই নেইমারকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা।
তারপর ভোঁ দৌড়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন পিএসজি তারকা। ৬৬ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ তৈরি করেছিলেন নেইমার। মাঝমাঠের নিচে বল পেয়ে ভোঁ দৌড়ে ঢুকে পড়েছিলেন প্রতিপক্ষের রক্ষণে। কিন্তু এগিয়ে এসে দারুণ দক্ষতায় তার প্রচেষ্টা রুখে দেন ব্রাভো। কিছুক্ষণ পর ব্রাজিলের জালে বল জড়িয়ে দেয় চিলি, কিন্তু অফসাইডে তা বাতিল হয়ে যায়। ৬৯ মিনিটে চিলির বেরেটনের হেড ব্রাজিলের ক্রসবার কাঁপিয়েছে। ৭৮ মিনিটে ভালগাসের জোড়ালো শট ঠেকিয়ে দেন এদেরসন।
বাকি সময়েও ব্রাজিলের জমাট রক্ষণ আর ভাঙতে পারেনি চিলি। যাতে ১-০ গোলের জয় নিয়ে সেমিফাইনালে উঠে যায় স্বাগতিক ব্রাজিল।