শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ে সুপার লিগের শীর্ষে বাংলাদেশ
২৫ মে ২০২১ ২২:০৭ | আপডেট: ২৬ মে ২০২১ ০৩:৪০
ব্যাটিং ইনিংসটা মুশফিকুর রহিম একাই টানলেও বোলিংয়ে এক সঙ্গে জ্বলে উঠলেন সবাই। মেহেদি হাসান মিরাজ, সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমানদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের বিপক্ষে ১৪১ রানের বেশি করতে পারেনি শ্রীলংকা। যাতে ডিএল ম্যাথডে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টিতে সফরকারী শ্রীলংকার বিপক্ষে আজ ১০৩ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
ম্যাচের তৃতীয়দফা বৃষ্টির পর শ্রীলংকার টার্গেট দাঁড়ায় ৪০ ওভারে ২৪৫। যখন এই লক্ষ্য নির্ধারন হলো শ্রীলংকা তখন ৩৮ ওভারে ১১২৬/৯। ফলে বাকি দুটি ওভার স্রেফ আনুষ্ঠানিকতাই হয়েছে। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটা ৩৩ রানে জিতেছিল তামিম ইকবালের দল। অর্থাৎ এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের সিরিজটা জিতে নিল বাংলাদেশ। শ্রীলংকাকে এই প্রথম ওয়ানডে সিরিজ হারাতে পারল টাইগাররা। এর আগে আট সিরিজ খেলে ছয়টিতে জিতেছিল শ্রীলংকা, দুটি হয়েছিল ড্র।
এদিকে, আজকের জয়ে বিশ্বকাপ সুপার লিগের শীর্ষে উঠে বসল বাংলাদেশ। শ্রীলংকা সিরিজের আগে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ ছিল পয়েন্ট টেবিলের চার নম্বরে। ওপরে থাকা ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট ৪০। শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জিতে বাংলাদেশের পয়েন্টও হয়ে যায় ৪০। আজকের জয়ে সবার ওপরে ওঠে বসল তামিম ইকবালের বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (২৫ মে) মিরপুুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিততে ২৪৭ রান করতে হতো শ্রীলংকাকে। কিন্তু মিরপুরের মন্থর উইকেটে বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ের বিপক্ষে শুরু থেকেই জেতার মতো ব্যাটিং করতে পারেনি লঙ্কানরা। স্পিন-পেসের সমন্বয়ে শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলিং ছিল নিয়ন্ত্রিত।
অভিষিক্ত পেসার শরিফুল ইসলাম প্রথম আঘাত হানেন শ্রীলংকার দলীয় ২৪ রানের মাথায়। দারুণ এক বলে প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক কুশল পেরেরাকে (১৪) তামিম ইকবালের ক্যাচ বানান শরিফুল। এরপর তিনে নামা পিথুম নিশাক্কাকে সঙ্গে নিয়ে এগুনো চেষ্টা করছিলেন ধানুশকা গুনাথিলাকা। লংকান ওপেনারকে বেশিদূর এগুতে দেননি মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে ব্যক্তিগত ২৪ রানের মাথায় সীমানায় ধরা পড়েছেন গুনাথিলাকা। এরপর পিথুম নিশাক্কা (২০), কুশল মেন্ডিস (১০) ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে (১৫) অল্প রানের ব্যবধানে ফিরিয়ে সফরকারীদের চাপে ফেলে দেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ৮৯ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় লংকানরা। এরপর প্রথম ওয়ানডের মতো হাসারাঙ্গা ডি সিলভাও হতে পারেননি কেউ।
একশর আগে পাঁচ উইকেট হারানো শ্রীলংকাকে ঘুড়ে দাঁড়ানোর সুযোগই দেননি মোস্তাফিজুর রহমান- সাকিব আল হাসানরা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো নির্ধারিত ৪০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রানে থেমেছে শ্রীলংকা। ওপেনার গুনাথিলাকার ২৪ রানই শ্রীলংকার পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর।
বাংলাদেশের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান। মিরাজ ১০ ওভার বোলিং করে ২৮ রান খরচায় নিয়েছেন তিন উইকেট। মোস্তাফিজ ৬ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নিয়েছেন তিন উইকেট। সাকিব ৯ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে নিয়েছেন দুটি উইকেট।
এর আগে মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে চড়ে ২৪৬ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে পেরেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসটা অনেকটা হলিউডের নায়ক নির্ভর কোনো সিনেমার মতো! এক্ষেত্রে নায়কের ভূমিকায় মুশফিকুর রহিম। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে তামিম ইকবাল শুরুতে ঝড়ের আভাস দিলেও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। প্রথম ওভারে ১৪ রান তোলা ওয়ানডে অধিনায়ক দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন। চার বল পর সাকিব আল হাসনও যখন এলবিডব্লিউ হলেন তারপর ক্রিজে আসেন মুশফিক।
সেই যে হাল ধরলেন, বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জিং স্কোর নিশ্চিত হয়েছেন তবেই আউট হয়েছেন মুশি। একপ্রান্ত আগলে রেখে অনেকটাই একাই দলকে টেনেছেন। তরুণ ওপেনার লিটন দাস আজও ব্যর্থ। ইনিংসের শুরুতে অনেক বল খেলে সেট হলেও পড়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন ৪২ বলে ২৫ রান করে। লাকসাম সান্দাকানের ওয়াইড লাইনের বল তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দেন পয়েন্টে।
এরপর প্রায় দুই বছর পর দলে সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও মাত্র ১০ রান করে ফিরেছেন ওয়াইড বল তাড়া করতে গিয়ে। তারপর অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাছ থেকে বলার মতো একটা সঙ্গ পেয়েছেন মুশফিক। দুজনের পঞ্চম উইকেট জুটিটা ছিল ৮৭ রানের। এই জুটিতেই মূলত ধস ঠেকিয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার অধিনায়ক এবং উইকেটরক্ষক কুলশ পেরেরার দুর্দান্ত কিপিংয়ের বলি হয়ে ফেরার আগে ৫৮ বল খেলে ১টি চর ২টি ছক্কায় ৪১ রান করেন রিয়াদ।
২৩ রানের ব্যবধানে মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন ধ্রুব (১০) এবং মেহেদি হাসান মিরাজ যখন ফিরলেন বাংলাদেশের স্কোর তখন ১৮৪/৭। ব্যাট করার মতো ছিলেন তখন কেবল মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। সেই সাইফকে নিয়েই বাংলাদেশকে টেনেছেন মুশি।
সাইফ উইকেটের একপ্রান্ত থেকে স্ট্রাইক বদলের চেষ্টা করেছেন। অন্যপ্রান্তে মুশফিকের পুরো ইনিংসটিই ছিল সহজাত। বাউন্ডারির দিকে না ঝুঁকে সিঙ্গেল-ডাবলস দিয়েই রানের চাকা সচল রেখেছিলেন। সেঞ্চুরি হওয়ার পর হাত খুলতে চেয়েছেন। তাতে নিজের স্ট্রাইকরেট উন্নতির সঙ্গে দলের রানও শক্ত একটা জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে।
৪৮.১ ওভারে হাকাতে গিয়ে শেষ ব্যাটার হিসেবে মুশফিক যখন আউট হলেন তার নামের পাশে তখন ১২৫ রান। ১২৭ বল খেলে ১০টি চারের সাহায্যে এই রান করেছেন তিনি। অর্থাৎ দলের মোট রানের অর্ধেকেরও বেশি তার। সাইফউদ্দিনের সংগ্রহ ৩০ বলে ১১ রান।
শ্রীলংকার হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন দুশমান্ত চামিরা ও লাকসাম সান্দাকান।
টপ নিউজ তামিম ইকবাল বাংলাদেশ-শ্রীলংকা সিরিজ মুশফিকুর রহিম মোস্তাফিজুর রহমান সাকিব আল হাসান