রোমাঞ্চকর ক্লাসিকোতে শেষ হাসি রিয়ালের
১১ এপ্রিল ২০২১ ০২:৫৫ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২১ ০৩:৩১
প্রথমার্ধের আধা ঘণ্টা স্পর্শ করার আগেই ২-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে কোণঠাসা করে ফেলে বার্সেলোনাকে। তবে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বার্সা। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ বাঁচাতে পারেনি কাতালানরা। করিম বেনজেমা এবং টনি ক্রুসের গোলে ২-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল মাদ্রিদ। আর তাতেই বার্সেলোনা এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে টপকে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।
অধিনায়ক সার্জিও রামোস, রাফায়েল ভারান, দানি কার্ভাহাল এবং এডেন হ্যাজার্ডরা ইনজুরিতে পড়ে নেই দলে। অর্থাৎ প্রধান একাদশের চার খেলোয়াড়কে ছাড়াই বার্সার বিপক্ষে একাদশ সাজাতে হয়েছে জিনেদিন জিদানকে। তবে তাতে কি? ঘরের মাঠ আলফ্রেড ডি স্টেফানোতে ম্যাচের প্রথমার্ধেই বার্সাকে এক প্রকার হারিয়ে দেয় লস ব্ল্যাঙ্কোসরা।
ম্যাচ শুরুর ১৪তম মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত এক প্রতি-আক্রমণ রিয়ালের, ফেদে ভার্লভার্দে মধ্য মাঠ থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে ডান দিকে থাকা লুকাস ভাস্কেজের দিকে বল বাড়ান। একটু থেমে বেনজেমার দৌড়টা বুঝে নিয়ে ডি-বক্সে বল পাঠিয়ে দেন ভাস্কেজ। তবে সেখানেই শেষ নয়, করিম বেনজেমার নজরকাড়া ব্যাক ফ্লিপে টার স্টেগান বোকা বনে যান আর বল ছুঁয়ে যায় জাল। ব্যাস ঘরের মাঠে রিয়ালের লিড।
এরপর একের পর এক আক্রমণে বার্সার রক্ষণকে স্বস্তিত নিঃশ্বাস ফেলতে দিচ্ছিল না ব্রাজিলিয়ান তরুণ ভিনিসিয়াস জুনিয়র আর করিম বেনজেমা। তাদের দুর্দান্ত আক্রমণে অনেকটা যেন হতাশ হয়েই তিন মিনিটের মধ্যে পেদ্রি এবং রোনাল্ড আরাহো হলুদ কার্ড দেখেন। ডি বক্সের বাইরে ভিনিসিয়াসকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন আরাহো আর সেখান থেকেই টনি ক্রুসের দুর্দান্ত এক গোল। এই গোলে অবশ্য অবদান আছে দুই বার্সা খেলোয়াড়েরও। ক্রুসের করা ফ্রিকিক প্রথমে সার্জিনো ডেস্টের পিঠে লেগে দিক পাল্টে জালের দিকে যাচ্ছিল, এরপর জর্দি আলবা তাতে হেড করে আরও সহজ করে দেন গোলের পথটা। তাতেই ম্যাচের ২৮ মিনিটে ২-০ ব্যবধানের লিড গ্যালাক্টিকোদের।
৩৪তম মিনিটেই ব্যবধান ৩-০ হতে পারতো রিয়ালের। তবে বেরসিক গোলপোস্ট বাধা হয়ে দাঁড়াল ফেদে ভালভার্দের দুর্দান্ত প্রচেষ্টাতে। মাঠের বাঁ প্রান্তে বল পেয়ে ডান প্রান্তে ফেদে ভালভার্দের দিকে পাস দেন ভিনিসিয়াস। সেখান থেকে একাই বল নিয়ে বার্সার ডি বক্সে ঢুকে দুর্দান্ত এক শট নেনে ভালভার্দে। টার স্টেগানকে পরাস্ত করতে পারলেও শেষ পর্যন্ত দূর পোস্টে বল লেগে ফিরে আসে। এরপর ফিরতি বল পেয়ে শট নেন ভাস্কেজ। এবার বার্সার ত্রাতা স্টেগান।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে এসে সার্জিও বুস্কেটসের ট্যাকেলে মাঠে বাইরে চলে যেতে হয় লুকাস ভাস্কেজকে। নির্ধারিত ৪৫ মিনিটের শেষ দিকে কর্নার থেকেই বল প্রায় জালে জড়িয়ে ফেলেছিলেন লিওনেল মেসি। তবে গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসলে প্রথমার্ধে ব্যবধান ২-১ করা হয়নি বার্সার।
বিরতির পর পাল্টে যায় ম্যাচের পুরো চিত্র। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে তখন ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে চলছিল তুমুল বৃষ্টি। কাক ভেজা হয়েই মাঠে লড়াই শুরু করে বার্সা। ম্যাচের প্রথমার্ধ যদি রিয়ালের হয় তবে দ্বিতীয়ার্ধটা নিজেদের করে নেয় লিওনেল মেসিরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সার্জিনো ডেস্টকে তুলে নিয়ে অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যানকে মাঠে নামান কোম্যান। এরপরেই খেলার চিত্র পালটে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের ৬০ মিনিটের মাথায় মেসির বাড়ানো বল ধরে রিয়ালের ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করেন জর্দি আলবা। এরপর ডি বক্সে ক্রস করেন আলবা, রিয়াল ডিফেন্ডাররা ঘিরে থাকায় দারুণ বিচক্ষণতা দেখিয়ে বলটি ছেড়ে দেন গ্রিজম্যান। আর পেছন থেকে ডি বক্সে ঢুকে বল জালে জড়ান অস্কার মিঙ্গুয়েজা। আর তাতেই ম্যাচে ফেরার আভাস কাতালানদের।
তবে গোল হজমের মিনিট দুই পরেই আবারও দুই গোলের লিড নিতে পারতো রিয়াল। ৬২তম মিনিটে দুর্দান্ত আক্রমণে বল নিয়ে ডি বক্সে ঢুকে শটও নিয়েছিলেন ভিনিসিয়াস তবে ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো গোলপোস্টে বল লেগে গোলবঞ্চিত হয় রিয়াল। এরপর ৬৬তম মিনিটে মদ্রিচের কাছ থেকে লং বল পেয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় বল নিয়ে বার্সার ডি বক্সে ঢুকে পড়েন ভিনিসিয়াস। তবে নিজে শট না নিয়ে বল বাড়ান বেনজেমার উদ্দেশে আর সেখান থেকেই বার্সা ডিফেন্ডার আরাহো বিপদমুক্ত করেন।
এরপর একের পর আক্রমণে রিয়ালের রক্ষণে কাঁপন ধরিয়ে দেয় বার্সা। গোল যেন তখন কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় বার্সার জন্য। ম্যাচের ৮৩ মিনিটে মেসির বাড়ানো বল ধরে বাঁ প্রান্ত থেকে আক্রমণ করেন জর্দি আলবা। দারুণ এক ক্রস করেন ডি বক্সে, সেখান থেকে মার্টিন ব্র্যাথওয়েট শট নেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। সেখানে অবশ্য বাধা হয়ে ছিলেন ফারল্যান্ড মেন্ডি। বার্সা খেলোয়াড়রা ক্ষিপ্রতার সঙ্গ রেফারির কাছে পেনাল্টির আবেদন জানালেও রেফারি নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। অতিরিক্ত উচ্চবাচ্য করায় জর্দি আলবাকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে সতর্কও করেন রেফারি। অবশ্য কেবল আলবা একাই নন ডাগ আউট থেকে রেফারির সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কথা বলায় হলুদ কার্ড দেখেন বার্সা কোচ রোনাল্ড কোম্যানও।
ম্যাচের তখন অন্তিম মুহূর্ত চলছে, ঘড়ির কাঁটায় ৯০ মিনিট ডি বক্সের ঠিক বাইরে লিওনেল মেসিকে ট্যাকেল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় ক্যাসেমিরোকে। অর্থাৎ যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে রিয়ালকে ১০ জনের দল হয়েই খেলতে হয়েছে। মেসির নেওয়া ফ্রিকিক সহজেই রুখে দেন কোর্তোয়া। অতিরিক্ত সময়ে শেষ মিনিটে যেন মরণ কামড় দেয় বার্সা। গোটা বার্সা একাদশ তখন রিয়ালের ডি বক্সে। দুর্দান্ত এক আক্রমণও সাজিয়েছিল তরুণ মারিবাস দুর্দান্ত এক শটও নিয়েছিল। তবে এবার রিয়ালের ভাগ্যকে সাহায্য করে ক্রসবার। আর তাতেই এল ক্লাসিকো শেষ হয় রিয়ালের ২-১ ব্যবধানের জয়ের মধ্য দিয়ে।
২০০৭/০৮ মৌসুমের পর এক মৌসুমে প্রথম দুটি এল ক্লাসিকোই জিতল রিয়াল। মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে বার্সার মাঠ থেকে ৩-১ গোলের ব্যবধানে জয় নিয়ে ফিরেছিল লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। আর ঘরের মাঠে এবারে জিতল ২-১ গোলের ব্যবধানে।
এই জয়ে লা লিগায় ৩০ ম্যাচে ২০ জয়, ছয় ড্র আর চারটি হারে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে রিয়াল। সমান ম্যাচে ২০ জয় আর পাঁচটি করে ড্র ও হারে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে তিনে নেমে গেছে বার্সেলোনা। আর এক ম্যাচ কম খেলা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ রিয়ালের সমান পয়েন্ট নিয়েও অবস্থান করছে দুই নম্বরে।
সারাবাংলা/এসএস
এল ক্লাসিকো করিম বেনজেমা টনি ক্রুস টপ নিউজ রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা লিওনেল মেসি স্প্যানিশ লা লিগা