প্রতিদানের সময়ে পিছুটান বলেই প্রশ্নটা উঠছে
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২১:৩৮ | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২১:৪২
ক্রিকেটপাড়ায় দুদিন ধরে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে সাকিব আল হাসান। আইপিএল নিলামে কলকাতা নাইট রাইডার্সের পক্ষ থেকে মোটা দাম পেয়ে আলোচিত হয়েছেন সাকিব। পরে সেই আইপিএল খেলতে জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেলতে না চাওয়াতে বিভিন্ন পক্ষ থেকে সমালোচিতও হচ্ছেন। আইপিএল খেলতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে ছুটি চেয়েছিলেন সাকিব। মনক্ষুন্ন নিয়েই ছুটিটা মঞ্জুর করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সাকিবের এই সিদ্ধান্তে হতাশ হওয়ার কথা আগেই জানানো হয়েছে বোর্ডের পক্ষ থেকে। ক্ষুব্ধ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। প্রতিদানের সময়ে সাকিব পিছুটা দিচ্ছেন বলেই ক্ষুব্ধ পাপন।
একজন ক্রিকেটারকে গড়ে তুলতে কম বিনিয়োগ করতে হয় না বোর্ডকে। সেই ছোট্ট থেকে যত্ন করে ধীরে ধীরে গড়ে তোলা হয়। অভিজ্ঞ করে তুলতে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে বারবার ব্যর্থ হলেও দলে সুযোগ দেওয়া হয়। তাতে অন্যরা বঞ্চিত হয়, দলও বঞ্চিত হয়। আর সবকিছুই করা হয় ভবিষ্যতে দেশের হয়ে ভালো খেলবেন সেই প্রত্যাশাতেই। কিন্তু এতোকিছু করে যখন একজন ক্রিকেটার তৈরি হয়ে গেলেন, যখন দেশকে উজাড় করে প্রতিদান দেওয়ার সময় হয় তখনই যদি পিছুটান দেয়, দেশের হয়ে না খেলে বিদেশি ফ্র্যাঞ্জাইজিতে খেলার সিদ্ধান্ত নেয় তখন আক্ষেপ তো হবেই। পাপনের দুঃখটা সেখানেই।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) নিউজিল্যান্ডে সিরিজ খেলতে যাওয়া ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ এবং বিসিবি পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিসিবি বস। বৈঠকে সাকিবের টেস্ট থেকে ছুটি নেওয়ার প্রসঙ্গও যে উঠবে সেটা জানা গিয়েছিল আগেই। লম্বা সময়ের বৈঠক শেষে বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে আক্ষেপ ঝড়ল নাজমুল হাসান পাপনের কণ্ঠে।
সাকিবের ছুটি নেওয়া প্রসঙ্গে পাপন বলেন, ‘আমার আসলে মন খারাপ। মনটা খারাপ কেন? দেখেন একটা খেলোয়াড়ের পেছনে কম বিনিয়োগ করা হয়। বোর্ড ১০-১৫ বছরে ধরে যে বিনিয়োগ করে এটা আপনাদের সবকিছু জানা আছে কিনা তাও জানি না। একটা তো হচ্ছে খেলাধুলা লিমিটেড চুক্তি বা চুক্তির বাইরে ইনজুরি হলে সবকিছু নিয়ে আমরা ওদের যে সুযোগটা এখন দেই সেটা আগে কখনো চিন্তাই করা যেত না। এই জায়গায় দল এরকম দুইটা টেস্ট (ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে) ম্যাচ হারার পরে আমাকে যদি বলেন, এই দুইটা টেস্ট ম্যাচ খেলব না। আমরা টেস্ট ম্যাচ হেরে এসেছি আফগানিস্তানের সঙ্গে, পাকিস্তানের সঙ্গে, ভারতের সঙ্গে। আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে নিজেদের মাটিতে পর পর দুই টেস্টে হারলাম । এরপরে কেউ যদি বলে আমি পরবর্তী টেস্টটা না খেলি! আমার ধারণা ছিল সবাই ওঠেপড়ে লাগবে টেস্টটা (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে) আমাদের জিততেই হবে। সেই জায়গায় কেউ যদি মনে করে এটা খেলবে না, অন্য একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলবে। এরপর আর কিছু বলার থাকে না।’
পাপনের আক্ষেপঝড়া কণ্ঠ, ‘একটা জিনিস আপনারা খেয়াল করেন। আজকে যে সমস্ত প্লেয়াররা ওয়ার্ল্ডের নাম করা, দেশের সব সেরা খেলোয়াড়, ওদের প্রথম ১০ বছর গড় কতো ছিল? ওদের প্রথম ১০ বছরের গড়টা দেখে নিই। আমরা তো তখন তাদের বাদ দিই নাই। প্রথম ৬ বছরে ১২-১৫ গড়, আমরা কি তখন তাদের বাদ দিয়ে দিয়েছি? এরপরেও তো ওদের সুযোগ দিয়েছি, আজকে এ জায়গায় এসেছে। যে সময়টায় তারা দেশের জন্য কিছু করবে সে সময়টায় যদি…..।’
বিসিবি চাইলে সাকিবকে ছুটি না দিতেও পারত। সেক্ষেত্রে আইপিএল না খেলে টেস্ট খেলতেই হতো তাকে। কিন্তু কাউকে মতের বিরুদ্ধে খেলানোর পক্ষে নয় বিসিবি প্রধান, ‘(সাকিব না খেলায়) আমার একার কিছু যায় আসে না। তবে আমার কাছে খারাপ লেগেছে এই সময়টায়, যে সময়টায় যেসমস্ত খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি আশা করেছিলাম, দলকে সাপোর্ট করবে, আমাদের আশ্বস্ত করবে। এসে বলবে কোন অসুবিধা নাই পাপন ভাই, আমরা নেক্সট ম্যাচগুলো জিতব। কিন্তু……. এটা তো একটু কষ্ট লেগেছে। শকিং হবে, এটা শকিং না হবার কিছু নেই। একটা জিনিস দেখেছি, জোর করে খেলিয়ে লাভ হয় না। এটা বিশেষ করে টেস্টে, এটা মানসিক খেলা। আমরা চাই যারা খেলাটাকে ভালোবাসেসেই খেলুক। জোর করে আমি খেলাতে চাই না। সাকিব তো আরও তিন বছর আগেই খেলতে চায়নি টেস্টে। ও তো এমনিতেই টেস্টের প্রতি অতো আগ্রহ দেখায়নি। তখন তো ওকে টেস্ট অধিনায়ক করে দেওয়া হল। জোর করেতো চেষ্টা করলাম। কিন্তু আসলে জোর করে খেলানোর মানে হয় না। আমি এখনো পর্যন্ত ধরে নিচ্ছি হয়তো এই ফরম্যাটটা তার পছন্দ না।’
বৈঠক শেষে বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, জোর করে কাউকে খেলাতে চায় না বোর্ড বলেই ছুটি দেওয়া হয়েছে সাকিবকে। ভবিষ্যতেও জোর করে কাউকে খেলানো হবে না। তবে এপর থেকে নির্দিষ্ট ফরম্যাটে চুক্তির সময়েই লিখিত নেওয়া হবে যে, কে কোন ফরম্যাট খেলতে চায় না।
পাপন বলেন, ‘যারা ওয়ানডে খেলবে, টি-টোয়েন্টি খেলবে তারা বলে দিবে আমরা টেস্ট খেলবো না। কোথায় কোথায় টুর্নামেন্ট হবে, ফ্র্যাঞ্চাইজি হবে ওগুলো খেললে আমরা টেস্ট খেলবোনা বলে দিক। আমরা তো লিখিত নিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু ন্যাশনাল টিমের খেলা, যে বলবে খেলবে তাকে খেলতেই হবে। হঠাৎ করে সিরিজের আগে আওয়াজ শুনি একটা, এগুলো চাচ্ছি না। যে খুশি বলে দিক, কে কে খেলতে চায় না। কোন অসুবিধা নেই, তবে সিরিজের আগে না। আমাদের সময় লাগবে, আমি একটা বছর সময় চাই। একবছর পরে কাউকে লাগবেও না, কোন অসুবিধা নেই।’
সাকিবকে ভবিষ্যতে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হবে কিনা এই প্রশ্নে যেতে যেতে বিসিবি সভাপতি বলছিলেন, ‘এটা সময়ই বলে দিবে। আপনারা দেখতে পাবেন….।’
টপ নিউজ নাজমুল হাসান পাপন বাংলাদেশ ক্রিকেট বিসিবি সাকিব আল হাসান