Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদায়ের মঞ্চে রাজ্জাক বললেন হতাশ নই


১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:০১

বিদায়ের মঞ্চে এসে একটি কথাই বারবার বলছিলেন আব্দুর রাজ্জাক, ‘এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি চাপ অনুভব করছি ও আবেগপ্রবন হয়ে পড়ছি।’ প্রায় ২০ বছরের সঙ্গী ক্রিকেটকে বিদায় বলতে গলা ধরে আসছিল রাজ্জাকের। কণ্ঠে ছিল কান্নার প্রচ্ছন্ন অনুরণ। পেছনে সাঁড়িবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, পরিচালনা পর্ষদের বৃন্দ ও ক্রিকেটার্স ওয়েলফেরায় অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) উর্ধ্বতনরা। উপস্থাপক রাজ্জাকে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের এক একটি কীর্তি তুলে ধরছেন তাতে করতালি দিয়ে নন্দিত এই স্পিনারকে সম্ভাসন জানাচ্ছেন বিসিবি সভাপতি, পরিচালনা পর্ষদ ও কোয়াব এর সভপতি, সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া লাউঞ্জ সংলগ্ন ১ নং প্লাজায় কোয়াব এর মাধ্যমে অনাড়ম্বরপূর্ন এই বিদায়ী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে তার হাতে তুলে দেওয়া হয় সম্মাননা স্মারক। কোয়াবও একটি স্মারক তুলে দেয়। আর এর মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিক ভাবে খেলোয়াড়ী জীবনের এপিটাফ লিখে দেন আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে দেশের হয়ে প্রথম ২শ উইকেট শিকারি বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের।

বিজ্ঞাপন

ক্যারিয়ারে নির্বাচকদের বঞ্চনার শিকার হওয়ায় অসংখ্যবার আক্ষেপ করেছেন তিনি। কেননা লাল সবুজের জার্সেতে ২০১৪ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর আর খেলা হয়নি। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মত চোখ ধাঁধানো পারফর্ম করলেও জাতীয় দলের বদ্ধ দরজা খুলতে পারেননি। লম্বা বিরতিতে ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে আচমকাই তাকে আবার দলে নেয়া হয়। মিরপুর টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেট নিলেও আবার টিম ম্যানেজমেন্টের নিগূড়মর্ম থেকে বাদ পড়েন। এখানেই থমকে যায় তার জাতীয় দলের অধ্যায়।

দেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের অনেকে অনেক সময়ই বলেছেন, তার প্রতিভার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। এমনকি তিনি নিজেও একই কথা বলেছেন। অথচ বিদায়ের মঞ্চে আজ সেই তিনিই বলছেন, হতাশ নন বরং খুশি। এর পেছনে হয়ত একটিই কারণ ক্রিকেট না খেলেও থাকছেন ক্রিকেটের সঙ্গেই। এখন থেকে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও হাবিবুল বাশার সুমনদের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচক হিসেবে কাজ করবেন রাজ্জাক।

বিদায়ের আবেগঘণ মঞ্চে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আরো নানান বিষয়ে। সারাবাংলার পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হল।

আজকের পর থেকে আপনার পরিচয় বদলে যাচ্ছে..

আব্দুর রাজ্জাক: খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। একটা অধ্যায়ের শেষ করলাম। গতকাল পর্যন্ত আমি বলতে পেরেছি আমি ক্রিকেট খেলোয়াড়, এখন থেকে বলতে হবে অন্যকিছু, যা আমার পেশা। হয়ত জিনিসটা সহজে বলতে পারছি তবে আমার জন্য এত সহজ না। ঘোরের মধ্যে আছি এখনো। ১৯৯৪ সাল থেকে ক্রিকেটের মধ্যে, তখন বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছি। সেই জিনিসটাকে বিদায় বলা… খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। একটা সময় আসলে প্রত্যেক মানুষকেই এক কাজ থেকে অন্য ভূমিকায় যেতে হয়। তারপরও আবেগ বলে যেহেতু একটা কথা আছে আমার মাঝে সেটা খুব কঠিনভাবে কাজ করছে। খুব ভালোভাবে কিছু বলা, গুছিয়ে বলা আমার জন্য একটু কঠিন।

অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে পরিবারের সমর্থন পেয়েছেন কিনা?

আব্দুর রাজ্জাক: আমার পরিবারকে সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ জানাই। এত কম বয়সে বিকেএসপিতে ভর্তি হতে চেয়েছি, তারা রাজি হয়েছে। সাধারণত তার আগে খেলতে গেলে আমরা বকা খেতাম। যত খেলাই খেলেছি সবকিছুতে আমাকে সমর্থন করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় জাতীয় দলে সুযোগ পেলাম। জাতীয় দলে সুযোগ পেলে তো পরিবারের আর কোনো আপত্তি থাকে না। প্রত্যেক সিদ্ধান্ত পরিবারের সাথে কথা বলে নিতাম। আবার নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণেও কখনো আমাকে বাধা দেননি।

বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট আপনার মত আর কেউই প্যাশন নিয়ে খেলেনি। এটা কতটা মিস করবেন। আর এই সিদ্ধান্ত নিতে আপনাকে কতটা ভাবতে হয়েছে?

আব্দুর রাজ্জাক: আশা করব আমার চেয়েও বেশি অভিজ্ঞ হয়ে কেউ খেলবে, পারফর্ম করবে, জাতীয় দলে আসবে। এটা না হলে ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু হবে না। আশা করব যেন ওরকম হয়। মিস করার কথা যদি বলেন… আমার এই ক্যারিয়ার জীবনের সবচেয়ে বিশেষ জিনিস। এটা আসলে ভোলার মত না। প্রত্যেক ধাপে ধাপে মনে পড়বে… মিস করব না ঠিক, স্মরণীয় থাকবে। মিস তখন করতাম যদি জোরপূর্বক হয়ে যেত। এটা জোরপূর্বক না, আমারই সিদ্ধান্ত। মিস করা মানে এই নয় যে থাকলে ভালো হতো। থাকলে ভালো হতো এটা আমি আর বলবো না, ইনশাআল্লাহ।

সবার সামনে এভাবে বিদায় বলতে পেরে কেমন লাগছে?

আব্দুর রাজ্জাক: আমাদের দেশে অনেক টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন। অনেকে এই সুযোগটাও পাননি। আমরা আশা করব যে এরকম প্রচলন আস্তে আস্তে তৈরি হবে যেন আমরা মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারি। দেশের জন্য যে এতকিছু করছে। জাতীয় দলে খেলা কিন্তু বিশাল ত্যাগের ব্যাপার। আপনাদের (সাংবাদিক) জন্যও ত্যাগের ব্যাপার। কারণ আমরা যতক্ষণ খেলি ততক্ষণ আপনারাও মাঠে থাকেন। তো আপনারা খুব ভালভাবে জানেন। এভাবে বিদায় নেওয়াটা… ভালোর শেষ নেই। ভালো হচ্ছে মাঠ থেকে। আগে তো এরকম সুযোগও আসত না। হঠাৎ করে একজন খেলোয়াড় বলত আর খেলবে না। কেউ হয়ত জানতও না সে যে আর খেলবে না। এখন অন্তত মানুষ জানতে পারছে। এরপর থেকে আমাদের আশা থাকবে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার প্রত্যাশা যেন থাকে।

ক্যারিয়ার নিয়ে কি কোন হতাশা থেকে গেল?

আব্দুর রাজ্জাক: না আমি হতাশ না। আমি আমার পুরো ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো হতাশা নেই, এটা নিয়েও নেই। শুরু যেভাবে হয়েছে আমি খুশি ছিলাম, মাঝখানে যেমন চলেছে তাতে খুশির চেয়েও বেশি, আর শেষ যেভাবে হচ্ছে তাতেও আমি খুশি।

বাংলাদেশের একমাত্র বোলার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬০০ উইকেট শিকারি আব্দুর রাজ্জাক। তার বর্তমান উইকেট সংখ্যা এখন ৬৩৪। ৫ উইকেট নিয়েছেন ৪১ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট ১১ বার। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নিয়েছেন ৪১২ উইকেট। সেরা বোলিং ইনিংস ১৭ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সীমিত ওভারের খেলায়ও এক সময়ে বাংলাদেশ দল তাকে ছাড়া ভাবা যেত না। তাছাড়া ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রথম দুইশ উইকেট শিকারি তিনিই। এই ফর্মেটে ১৫৩ ম্যাচ খেলে নিয়েছে ২০৭ উইকেট। ১৩ টেস্টে তার শিকার ২৮ উ্ইকেট। আর ৩৪ টি টোয়েন্টি খেলে থলিতে পুরেছেন ৪৪ উইকেট।

আব্দুর রাজ্জাক কোয়াব টপ নিউজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বিসিবি

বিজ্ঞাপন

দেশপ্রেম ও মেধা পাচার
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪৪

আরো

সম্পর্কিত খবর