সাদমান, সাইফ নাকি ইমরুল
৩০ আগস্ট ২০২০ ১৫:২৪ | আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২০ ১৬:১০
দরজায় কড়া নাড়ছে শ্রীলঙ্কা সিরিজ। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের টেস্ট খেলতে আগামী মাসের ২৭ তারিখ (সম্ভাব্য) দেশটির বিমান ধরবে টিম বাংলাদেশ। তার আগে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সফরকারীদের প্রাথমিক দল ঘোষণা হবে, ১৮ সেপ্টেম্বর হবে ক্যাম্পে ডাক পাওয়াদের করোনা পরীক্ষা। আর ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনুশীলন ক্যাম্প। অর্থাৎ চলতি মাসের বাকি দুই দিন গেলেই হোম অব ক্রিকেটে সিরিজের আবহ বিরাজ করবে। কিন্তু প্রায় ৮ মাস পরে গড়ানো সেই সিরিজে ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী কে হচ্ছেন? অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস নাকি সাদমান ইসলাম অনিক অথবা সাইফ হাসান? মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন!
উল্লেখ করার মত বিষয় হল, ইমরুলকে বাদ দিলে বাকি দুজনই বয়সে তরুণ। কারোরই খুব বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। সাদমান ইসলাম খেলেছেন ৬টি টেস্ট আর সাইফ হাসান ২টি। ক্রিকেটে যেখানে রান গড়ই মূখ্য সেই বিবেচনায় কিন্তু এই দুজনের মধ্যে এগিয়ে সাদমান ইসলাম অনিকই। এবং সাদমানের জন্য আরেকটি সুখবর হল, শেষ দশ ম্যাচের গড় হিসেবে অভিজ্ঞ ইমরুলের চেয়েও তিনি এগিয়ে।
২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকায় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ক্যাপ পাওয়া এই বাঁহাতি ৬ ম্যাচ খেলে ২৫.০০ গড়ে সংগ্রহ করেছেন ২৭৫ রান। যেখানে সাইফ হাসানের ২ ম্যাচের তিন ইনিংস থেকে তার সংগ্রহ মাত্র ২৪ রান। অর্থাৎ ম্যাচ প্রতি ৮.০০ গড়ে তিনি এই রান সংগ্রহে সমর্থ্য হয়েছেন। আর ২০০৪ সালে ব্লুমফন্টেইনে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষিক্ত ইমরুল ৩৯ ম্যাচ খেলে নামের পাশে যোগ করেছেন ১ হাজার ৭৯৭ রান। ২৪.২৮ গড়ে তিনি এই সংগ্রহে সমর্থ হয়েছেন। কিন্তু ধাক্কা খেতে হয় তার সবশেষ খেলা ১০ ম্যাচের গড় দেখলে, মাত্র ১৫.৫!
শেষ ১০ ম্যাচে ইমরুলের রান দেখুন- ৪,৬,৪৪,০,৫,১৯,৪০,২৬,৭ ও ৪। এর পরে নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে আসন্ন লঙ্কা সফরে টিম ম্যানেজমেন্ট সাদমানকেই তামিমের সঙ্গে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে পাঠাবে। অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার কোথায় খেলবেন? তাদের জন্য উত্তর হল, শেষ ১০ ম্যাচে তার রান গড়ও সাদমানেরও নিচে (২৩.৯)। তাছাড়া এই মুহর্তে সাদা পোষাকের চাইতে রঙিন পোষাকেই তার কাঁধে বেশি নির্ভর করছে টাইগার ম্যানেজমেন্ট। আর ঠিক সেকারণেই আফগানিস্তান সিরিজের পর তাকে আর লাল বলে ২২ গজের লড়াইয়ে দেখা যায়নি। আসন্ন সিরিজটিতেও হয়তো দেখা যাবে না।
অতএব এই পরিসংখ্যানের পর খুব সহজেই এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে লঙ্কা সিরিজে ইমরুল, সৌম্য ও সাইফকে টপকে অটোম্যাটিক চয়েস তামিম ইকবালের সঙ্গে সাদমানকেই দলের গোড়া পত্তন করতে দেখা যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের দায়িত্বশীল একটি সুত্রের সঙ্গে আলাপচারিতা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে সারাবাংলা।
সুত্রটির মতে, ‘সাইফ হাসান ও সাদমানের মধ্যে খুব স্বাভাবিকভাবেই সাদমান এগিয়ে থাকছে। কারণ ও শুরুটা করেছে সাইফের আগে। অতএব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতায় সে এগিয়ে। তাছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটেও তার রানের পরিসংখ্যান বেশ সমৃদ্ধ। পক্ষান্তরে সাইফ হাসান আমাদের উদীয়মান প্লেয়ার। সেও খারাপ করেনি। ভালই করেছে। সত্যি বলতে সাইফকে আমরা দলে নিয়েছিলাম সাদমান ইনজুরড ছিল বলে। আপনারা জানেন ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সিরিজ ও ঢাকায় জিম্বাবুয়ে সিরিজ চলকালীন সাদমানের বাঁহাতের কব্জিতে ইনজুরি ছিল।’
কথা প্রসঙ্গে ইমরুল কায়েসকেও তিনি আলোচনায় নিয়ে এলেন। ‘ওপেনার হিসেবে ইমরুল কায়েসও দৌঁড়ে থাকছে। তবে হতাশ হতে হয় যখন ওর শেষ দশ ম্যাচের গড় দেখি। মাত্র ১৫। তবে যেহেতু অতিমারির সময়ে সিরিজটি শুরু হচ্ছে সেহেতু ব্যাকআপ প্লেয়ার হিসেবে সে শ্রীলঙ্কায় যেতে পারে।’
আর সৌম্য সরকারের প্রসঙ্গে বললেন, ‘দেখেন, এই মুহুর্তে জাতীয় দলের যে কম্বিনেশন তাতে সে সাদা পোষাকের চেয়ে রঙিন পোষাকের ক্রিকেটেই বেশি থিতু।।’
তার দেওয়া তথ্যমতে আবারও নিশ্চিত হওয়া গেল যে শ্রীলঙ্কা সফরে তামিমের সঙ্গী হিসেবে ক্রিজের অপর প্রান্তে সাদমান ইসলাম অনিককেই দেখা যাবে যদি তিনি ফিট থাকেন।
তাহলে নিচের অর্ডারে কারা থাকছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সুত্রটি বেশ আত্ববিশ্বাস নিয়েই জানালেন, ‘তিনে নাজমুল হোসেন শান্ত। কেননা সবশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সে ৭১ রান করেছে। এমনকি রাওয়ালপিন্ডি টেস্টেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভাল করেছে (৪৪ রান)। যেহেতু সে ভাল করেছে তাই তাকে এখনই বসিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এরপর আসুন চার নম্বরে। এখানে অবধারিতভাবেই মুমিনুল হক। পাঁচে মুশফিকুর রহিম।’
কিন্তু ছয়ে কে খেলবে সেটা বলতে গিয়ে কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলেন, ‘মাহমুদউল্লাহ কিংবা মিঠুন, দেখা যাক।’ তাহলে লিটন দাস সাতে? তিনি সম্মতিসূচক উত্তর দিলেন।
আটে একজন অলরাউন্ডারের কথা জানালেন, ‘এখানে আমরা একজন অলরাউন্ডারের কথা ভাবছি। সাইফউদ্দিন হয়ত। । তবে ও ফিট থাকে কিনা সেটাই ব্যাপার। আপনারা জানেন ওর ব্যাকপেইনের সমস্যা আছে। নয়ে অফস্পিনার নাঈম হাসান/তাইজুল ইসলাম। নির্ভর করছে কন্ডিশনের ওপর। দশে আবু জায়েদ রাহি। আর এগার নম্বরে মোস্তাফিজ/ এবাদত হোসেন।’
আলোচনার শেষটা হল অবশ্য দীর্ঘ্যশ্বাস দিয়ে। মজার ছলে এই প্রতিবেদক বললেন, ‘ব্যাটিংয়ে তো দেখছি অপশনের অভাব নেই।’ কথা শেষ না হতেই আক্ষেপ ভরা কন্ঠে বললেন,‘হ্যাঁ ভাই দল করার সময় ব্যাটসম্যানের অভাব নেই। কিন্তু কষ্ট হয় যখন দেখি দুই দিনও উইকেটে থাকতে পারে না। দলের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান যদি রান না করে তাহলে কী ম্যাচ জেতা সম্ভব?’
ইমরুল কায়েস টপ নিউজ তামিম ইকবাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ সাইফ হাসান সাদমান ইসলাম