Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বারুদের গন্ধ শুঁকে বেড়ে ওঠা ছেলেটি এখন ইউরোপ সেরা


২৪ আগস্ট ২০২০ ১৮:৩৪ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২০ ১৮:৪০

রেফারি ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজালে নিশ্চিত হয়ে গেল বায়ার্ন মিউনিখই এবার উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের চ্যাম্পিয়ন। তারপর আলফনসো ডেভিসের উল্লাস আর দেখে কে! ‘কাম অন’ বলে টানা চিৎকার করে গেলেন, সতীর্থদের সঙ্গে উৎসবের স্রোতে ভেসে গেলেন। মনে মনে হয়তো বলছিলেন, এই দিনটার অপেক্ষাতেই তো ছিলাম!

রোববার (২৩ আগস্ট) রাতে পিএসজিকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ষষ্ঠ শিরোপা নিশ্চিত করেছে বায়ার্ন মিউনিখ। জার্মানির ক্লাবটি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আলাদাভাবে আলোচনা হচ্ছে ডেভিসকে নিয়ে। ১৯ বছর বয়সী তরুণে শীর্ষস্থানীয় ফুটবলে উঠে আসার গল্পটা যে কল্পকাহিনীকেও হার মানিয়ে যায়!

বিজ্ঞাপন

একটা সময় বারুদের গন্ধ আর বোমার শব্দ ছিল নিত্যসঙ্গী। বেড়ে উঠেছেন লাশের সারি দেখতে দেখতে। আলফনসো ডেভিসের জন্ম ঘানার একটি শরণার্থী শিবিরে, বাবা-মা লাইবেরিয়ান। লাইবেরি গৃহযুদ্ধের দাবানলে জ্বলে উঠলে ঘানার শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন ডেভিসের বাবা-মা, সেখানেই তার জন্ম। একটা সময় আবারও লাইবেরিতে ফিরেন ডেভিসের বাবা-মা। তবে তারা চাননি সেখানে থাকুক ডেভিস।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে থাকা মানেই যে আর দশটা শিশুর মতো বন্দুক হাতে তুলে নেওয়া। রক্তের নেশায় মেতে উঠা। ডেভিসের বাবা দেরেয়াহ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সেখানে বেঁচে থাকতে হলে আপনাকে হাতে অস্ত্র তুলে নিতেই হবে। কিন্তু আমাদের মোটেও ইচ্ছা ছিল না হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে মানুষের বুকে গুলি করতে। পুরো জায়গাটা ছিল ভয়ানক। খাবার খেতেও আপনাতে যেতে হতো লাশের সারির ওপর দিয়ে।’

ডেভিসের মা বলেছেন, ‘সেখানকার জীবনটা ছিল একটা কন্টেইনারে বন্দী থাকার মতো। যে কন্টেইনার তালা বন্ধ করে চাবিটা কোথাও ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে!’ সৌভাগ্য ডেভিসের পরিবারের। সেখান থেকে কানাডায় পালাতে পেরেছিলেন তারা। জীবন পাল্টে যাওয়া সূচনা সেখানেই। ২০০৬ সালে স্কুলে যাওয়া শুরু করেন ডেভিস। স্কুলের অন্য বাচ্চাদের মতো ফুটবল খেলতেন, জাত চিনিয়েছিলেন সেখানেই। সেই সময়টাতে ‘ফ্রি ফুটি’ নামের একটি সংগঠন চার হাজার বাস্তহারা শিশুকে ফুটবল শেখানোর দায়িত্ব নেয়। ডেভিস সেই চার হাজারের একজন ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

একটু সুযোগ পেতেই সংশ্লিষ্টকে মুগ্ধ করেছেন প্রতিভাবান ছোট্ট ডেভিস। ফ্রি ফুটির প্রধান নির্বাহী টি অ্যাডামস বলেন, ‘ডেভিস একটি উদাহরণ। সুযোগ-সুবিধা পেলে যেকোন শিশুই যে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে সেটা দিখিয়েছে সে। আমরা তার মধ্যে বিশেষ কিছু দেখেছিলাম।’ মুগ্ধ টিম অ্যাডামস ডেভিসকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সেন্ট নিকোলাস ক্যাথলিক স্কুলের ফুটবল শিক্ষক মার্কো বোসিওকে অনুরোধ করেন। ট্রায়ালে ডাকা হয় ডেভিসকে। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেওয়া ডেভিসকে।

মাত্র ১৫ বছর ৮ মাস বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল লিগ এমএলএসে অভিষেক হয়ে যায় তার। এমএলএসে এতোটাই আলো ছড়াচ্ছিলেন যে ২০১৭ সালে কানাডা নাগরিকত্ব দিয়ে জাতীয় দলে ডাকে ডেভিসকে। বায়ার্ন মিউনিখ থেকে ডাক আসে পরের বছর, ২০১৮ সালে।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে জার্মান ক্লাবটির সিনিয়র দলে অভিষেক ডেভিসের। অল্প সময়ের মধ্যেই ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিজের আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী তরুণ। ডেভিস সম্পর্কে বায়ার্নের তারকা ফুটবলার থমাস মুলারের মূল্যায়ন, ‘আমরা ডেভিসের মত ফুটবলার আগে পাইনি। তার মত এত প্রতিভাবান ফুটবলার আপনি সব সময় দেখতে পাবেন না। আমরা তার কাছ থেকে আরও অনেক বেশি আশা করতে পারি। কারণ সে দিন দিন উন্নতি করছে।’ মূলার একা নয়, ডেভিসের উন্নতি নজর কেড়েছে অনেকের।

বায়ার্নের জার্সি গায়ে এবার পুরো মৌসুমেই দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচগুলোতে আলো ছড়িয়েছেন আলাদাভাবে। লেফট ব্যাক থেকে বার্সেলোনা ও লিঁও’র বিপক্ষে পার্থক্য গড়ে দেওয়ার মতো ফুটবল খেলেছেন ডেভিস। পিএসজির বিপক্ষে কাল ফাইনালেও ধরে রেখেছিলেন সেই ধারাটা। মাঠে বায়ার্নের জয়ের নায়ক কিংসলে কোমানের সঙ্গে বাঁ উইংয়ে তার রসায়ন ছিল দুর্দান্ত। শেষ পর্যন্ত ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার টুর্নামেন্টটার শিরোপা জিতেই মাঠ ছেড়েছেন। ডেভিস নিশ্চয় আরও শিরোপা জিতবেন এবং লাখো শিশুর অনুপ্রেরণা হবেন।

১৯ বছর বয়সী তরুণ ক্যারিয়ারে শুরুতে খেলতেন উইঙ্গার হিসেবে। কোচের চাওয়ায় এখন পুরোদমে লেফট ব্যাক। ক্ষিপ্র গতি আর অসাধারণ ড্রিবলিং ক্ষতার কারণে ডেভিস ব্যাকেই ভালো করবেন বলে মনে করেছেন বায়ার্ন মিউনিখের বর্তমান কোচ হান্সি ফ্লিক। উইং থেকে ব্যাকে উঠে আসা সেই কারণেই। ফ্লিক বললেন, ‘তার উন্নতিটা অসাধারণ। তাকে আমরা দলে নিয়ে এসেছিলাম একজন উইঙ্গার হিসেবে। কিন্তু দেখলাম সে ফুল ব্যাক হিসেবে অসাধারণ খেলছে।’

আলফনসো ডেভিস উয়েফা চ্যামিয়নস লিগ টপ নিউজ বায়ার্ন মিউনিখ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর