রে প্রাইস এখন ফ্রিজ-এসি মেরামত করেন
৩ আগস্ট ২০২০ ১৫:২৬
একটা সময় ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে দুর্দান্ত লড়াই করত জিম্বাবুয়ে। আর সেই দলের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ছিলেন বাঁ-হাতি স্পিনার রেমন্ড প্রাইস। তার ঘুর্ণি জাদুতে কুপোকাত হতে হয়েছে টাইগার ব্যাটসম্যানদের। আর এখন সেই রে প্রাইসই কিনা কাজ করছেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্র-এসি এবং রেফ্রিজারেটর-ফ্রিজের মেরামতকর্মী হিসেবে।
অবশ্য তিনি তার গোটা জীবনেই লড়াই করেছেন। ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন নির্ধারিত সময়ের দু’মাস আগে, সদ্যজাত অবস্থাতেই দুরারোগ্য মেনিনজাইটিস রোগে আক্রমান্ত হয়ে বধির হয়েছিলেন বেশ কয়েক বছর। রে প্রাইসের সেই লড়াই এখনও থামেনি। পুরো নাম উইলিয়াম রেমন্ড প্রাইস। জন্ম ১৯৭৬ সালের ১২ জুন। জন্মের কয়েক মাস বয়সেই মেনিনজাইটিস। তার বেঁচে থাকার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তাদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণ করে প্রাইস বেঁচে থাকলেন। কিন্তু হারালেন শ্রবণক্ষমতা।
প্রাইস যে কিছুই শুনতে পারেননা তা পরিবারের মানুষ বুঝতে পারলেন অনেক পরে এসে। চার বছর বয়সে জটিল অস্ত্রোপচারে ফিরে আসে প্রাইসের শ্রবণক্ষমতা। কিন্তু বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা তার আজীবনের সঙ্গী হয়ে থাকে। তার সমবয়সীদের থেকে একটি বেশি দেরি করেই শুরু হয়ে শিক্ষা জীবন। বাড়ির বাগানে ক্রিকেট খেলায় হাতেখড়ি। প্রথমে তিনি ছিলেন পেসার। পরে কলেজে পৌঁছে রপ্ত করেন স্পিন বোলিং। স্পিনার হওয়ার পরে তার ক্রিকেট খেলার ধরনেরও অনেক উন্নতি হয়।
ছোট বেলায় পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিজ এবং এসি মেরামতের কাজও শিখেছিলেন প্রাইস। আর ক্রিকেট থেকে অবসরের পরে এসে সেই শেখা কাজই হয়ে গেল প্রাইসের জীবিকা নির্বাহের প্রধান কাজ। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে শ্রীলঙ্কা সফরে অফ ফর্ম এবং চোটের কারণে দলের বাইরে পল স্ট্র্যাং, অ্যাডাম হাকল, অ্যান্ড্রু হুইটল। আর তাতেই খুলে যায় তরুণ স্পিনার প্রাইসের। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সফরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে নজর কাড়েন তিনি। সেই সময় থেকে সমসাময়িক বিশ্বমানের স্পিনারদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে প্রাইসের নামও।
ক্যারিয়ারে রোডেশিয়ানদের হয়ে ২০০৭ সালে ২৭টি ওয়ানডে ম্যাচে ৪৫ উইকেট নিয়ে আইসিসি’র র্যাংকিংয়ে উঠে আসেন বিশ্বের তৃতীয় সেরা বোলার হিসেবে। এরপর তিনি হয়ে ওঠেন জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য। ২০১৩ সালের মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালীন ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন প্রাইস। ক্যারিয়ারে মোট ২২টী টেস্ট খেলে তিনি উইকেট পেয়েছেন ৮০টি। ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন পাঁচবার। সেরা বোলিং পারফরম্যান্স ৭৩ রান খরচায় ৬ উইকেট। ১০২টি ওয়ানডে ম্যাচে তার শিকার ১০০ উইকেট। সেরা পারফরম্যান্স ২২ রানে ৪ উইকেট।
তবে এত কিছুর পরেও দেশের ক্রিকেটে তার নামে অনুচ্চারিত। টেস্টে তিনি জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। জিম্বাবোয়ের যে চার জন বোলার একদিনের ক্রিকেটে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তার মধ্যে প্রাইস অন্যতম।
ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরে প্রাইস প্রথমে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। খেলার সরঞ্জাম পাওয়া যায়, এ রকম একটি দোকান খুলেছিলেন। কিন্তু সেই ব্যবসা বেশি দিন ভালো চলেনি। দোকানটি এখনও আছে। পাশাপাশি, জীবিকা নির্বাহের জন্য এখন এসি এবং ফ্রিজ মেরামতের কাজ করেন সাবেকে এই জিম্বাবুয়াইয়ান তারকা ক্রিকেটার।
জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটার ফ্রিজ-এসি মেরামতের কাজ রে প্রাইস রেমন্ড প্রাইস সাবেক স্পিনার