এক নজরে প্রিমিয়ার লিগের এবারের মৌসুম
২৭ জুলাই ২০২০ ১৩:১৯ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২০ ১৬:০৬
রোববার (২৬ জুলাই) রাতের ৩৮তম রাউন্ডের খেলার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ২০১৯/২০২০ মৌসুমের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। চরম নাটকীয়তায় ভরপুর প্রিমিয়ার লিগের উত্তেজনা ছড়ায় শেষ রাউন্ড পর্যন্ত। যদিও চ্যাম্পিয়ন নির্ধারিত হয়ে যায় ৩১তম রাউন্ড শেষেই। সর্বোচ্চ ৯৯ পয়েন্ট নিয়ে গেল মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির থেকে ১৮ পয়েন্ট বেশি নিয়ে ৩০ বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার করে লিভারপুল। এটি প্রিমিয়ার লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ বারের মতো শিরোপা জয় লিভারপুলের।
এদিকে শিরোপা নির্ধারিত আগে হয়ে গেলেও শেষ ম্যাচ পর্যন্ত গড়ায় রেলিগেশন জোনের লড়াই। শেষ ম্যাচে আর্সেনালের কাছে হেরে অবনমিত হয়েছে ওয়াটফোর্ড আর এভারটনকে হারিয়েও অবনমন এড়াতে পারেনি বর্নোমাউথ। আর শেষ ম্যাচ পর্যন্তই গড়িয়েছিল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেওয়ার লড়াই। গাণিতিক হিসাব বলছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং লেস্টার সিটির মধ্যকার ম্যাচের ফলাফলই যাই হোক না কেন নিজেদের ম্যাচে চেলসি জয় লাভ করলেই নিশ্চিত চ্যাম্পিয়নস লিগের স্থান। আর তাই তো আকাশচুম্বী আশা নিয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো উলভসের বিপক্ষে মাঠে নামে ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের চেলসি। আর শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের ব্যবধানে জয় নিয়েই লিগ টেবিলের ৪র্থ স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করে অল ব্লুজরা। অন্যদিকে লেস্টার সিটিকে ২-০ গোলে হারিয়ে লিগে তৃতীয় হিসেবে শেষ করে চ্যাম্পিয়নস লিগ নিশ্চিত করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও।
অপেক্ষা ৩০ বছরের! সুনির্দিষ্টভাবে ৩০ বছর ২ মাস ৪ দিন। দিনের হিসাবে ভেঙে বললে ১১ হাজার দিনেরও বেশি! ২১ এপ্রিল ১৯৯০ থেকে শুরু। এরপর কেবলই যেন অপেক্ষার আগুনে পুড়ে পুড়ে ছাই হওয়া। তবে পুরান থেকে আমরা যে ফিনিক্স পাখির গল্প জানি, নিজের ছাই থেকেই সেই পাখি বারে বারে পুনর্জন্মের ইতিহাস গড়ে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ঠিক তেমনই ৩০ বছরের অপেক্ষার আগুনে পুড়ে যে ছাই জমেছিল, সেই ছাই থেকেই যেন পুনর্জন্মের ইতিহাস রচনা করল লিভারপুল।
শিরোপার ফুল হয়ে ফোটার আগে সম্ভাবনার কুঁড়ির দেখা মিলছিল গত কয়েক বছর ধরেই। শেষ পর্যন্ত এবার তার সফল অনুবাদ হলো শিরোপার হাত ধরে। এর মধ্যে অবশ্য মজার একটি বিষয় আছে— ৩০ বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধারের কথা বলা হলেও ‘প্রিমিয়ার লিগে’র শিরোপা কিন্তু অল রেডদের এই প্রথম! কিভাবে সেটা?
এবারের আক্ষেপ ঘুচানোর শিরোপা জয়ের আগে ১৯৮৯/১৯৯০ মৌসুমে শেষবার ইংলিশ লিগ উঁচিয়ে ধরেছিল অল রেডরা। তখন প্রিমিয়ার লিগ নামটাই যে ছিল না। লিগের নাম তখন ছিল ফার্স্ট ডিভিশন। লিভারপুলের শিরোপা জেতার পর আরও দুই মৌসুম ওই একই নামে ছিল লিগ। ১৯৯২/১৯৯৩ মৌসুমে নাম পাল্টে রাখা হয় প্রিমিয়ার লিগ। তার মানে, ইংলিশ লিগের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সফল দলটির ঝুলিতে প্রকৃতপক্ষে ‘প্রিমিয়ার লিগে’র শিরোপাই ছিল না!
এক নজরে এবারের প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম-
চ্যাম্পিয়ন
লিভারপুল (১৮তম শিরোপা)
পুনর্জন্মের ইতিহাস রচনা করল লিভারপুল।
রানার-আপ
ম্যানচেস্টার সিটি
৫ম বারের মতো রানার-আপ হয়ে লিগ শেষ করল ম্যানসিটি।
চ্যাম্পিয়নস লিগ
চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নিয়েছে যে চারটি দল
লিভারপুল (চ্যাম্পিয়ন)
ম্যানচেস্টার সিটি (রানার-আপ)
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (৩য়)
চেলসি (৪র্থ)
ইউরোপা লিগ
লিগের ৫ম এবং ৬ষ্ঠ দল খেলবে ইউরোপা লিগের আগামী আসর। তবে এর মধ্যে সরাসরি সুযোগ পাবে কবল ৫ম দলটিই। বাকি দলকে বাছাইপর্ব উৎরাতে হবে।
লেস্টার সিটি (সরাসরি)
টটেনহাম হটস্পার্স (বাছাইপর্ব)
*এদিকে এফএ কাপের ফাইনালে চেলসিকে হারাতে পারলে ইউরোপা লিগে সরাসরি সুযোগ মিলবে আর্সেনালের।
রেলিগেশন
লিগ টেবিলের সবচেয়ে নিচের তিন দলকে দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর সেখান থেকে প্রথম বিভাগে উঠে আসে তিনটি দল।
বর্নোমাউথ (১৮তম)
ওয়াটফোর্ড (১৯তম)
নরউইচ সিটি (২০তম)
রোববার (২৬ জুলাই) ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ৩৮তম রাউন্ডের ম্যাচের মধ্য দিয়ে ২০১৯/২০২০ মৌসুমের পর্দা নেমেছে। এবারের মৌসুমে দুর্দান্ত পারফর্ম করে লিগ শিরোপা জয় করেছে লিভারপুল। অন্যদিকে পুরো মৌসুম জুড়ে গোলের পর গোল করে প্রিমিয়ার লিগের গোল্ডেন বুট জিতেছেন জেমি ভার্দি আর গোল বাঁচিয়ে গোল্ডেন গ্লাভস জিতেছেন এডারসন মোরেয়াস।
একই সময়ে ১০টি ম্যাচ দিয়েই ২০১৯/২০২০ মৌসুমের পর্দা নামে। আর এর মধ্যেই পরবর্তী মৌসুমের তারিখ ঘোষণা করেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। নতুন এই মৌসুম অর্থাৎ ২০২০/২০২১ মৌসুমের খেলা শুরু হবে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর। যার ফাইনাল রাউন্ডের খেলা হবে আগামী বছরের ২৩ মে। সাধারণত আগস্টে শুরু হয়ে পরের বছরের মে মাসে শেষ হয়ে যায় প্রিমিয়ার লিগের মৌসুম। কিন্তু এবার আগস্টে শুরু হলেও, শেষ হচ্ছে ২৬ জুলাই। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মাঝখানে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত স্থগিত হয়ে ছিল ইপিএলের এবারের মৌসুম। অবশেষে মাঠে গড়ায় স্থগিত হয়ে থাকা মৌসুম। আর দেরিতে খেলা মাঠে গড়ানোয় দেরিতেই শেষ হচ্ছে মৌসুম।
সদ্য সমাপ্ত হওয়া মৌসুমের শুরুটা লেস্টার করেছিল দুর্দান্ত। একের পর এক গোল করে দলকে জয়ের আনন্দে ভাসাচ্ছিলেন জেমি ভার্দি। অবশ্য মৌসুম জুড়ে পুরোটা সময়ই লেস্টারের জার্সি গায়ে অসামান্য ছিলেন ভার্দি। আর শেষ পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন নিজের দুর্দান্ত ফর্ম। আর তার ফল স্বরূপ জিতেছিলেন ইপিএলের ২০১৯/২০২০ মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতার অ্যাওয়ার্ড। এবারের মৌসুমে ভার্দির কাছ থেকে গোল এসেছে মোট ২৩টি।
ইপিএলের সেরা পাঁচ গোলদাতা:
জেমি ভার্দি- ২৩ গোল
ড্যানি ইংস- ২২ গোল
পেইরি এমিরিক অবামেয়ং- ২২ গোল
রহিম স্টার্লিং- ২০ গোল
মোহাম্মদ সালাহ ১৯ গোল
জেমি ভার্দির ২৩টি গোলের মধ্যে কেবল চারটি গোলই এসেছে পেনাল্টি থেকে। অন্যদিকে ইংসের ২২ গোলের মধ্যে মাত্র একটি এসেছে পেনাল্টি থেকে, অবামেয়ং পেনাল্টি থেকে করেছেন দুটি গোল। ম্যানচেস্টার সিটির রহিম স্টার্লিংয়ের ২০টি গোলের একটিও আসেনি পেনাল্টি থেকে। আর মোহাম্মদ সালাহ স্পট কিক থেকে করেছেন তিনটি গোল।
২০১৯/২০২০ মৌসুমে গোল্ডেন বুট জিতে জেমি ভার্দি গড়েছেন আরও এক রেকর্ড। প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক স্ট্রাইকার হিসেবে গোল্ডেন বুট জয়ের রেকর্ড গড়লেন এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। তার আগে এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন দিদিয়ের দ্রগবা। চেলসির হয়ে ২০০৯/২০১০ মৌসুমে ৩২ বছর বয়সে ২৯ গোল করে প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব জিতেছিলেন। এবারে ৩৩ বছর বয়সে গোল্ডেন বুট জিতে সে রেকর্ড নিজের করে নিলেন জেমি ভার্দি।
সবচেয়ে বেশি বয়সে গোল্ডেন বুট জয়ীদের তালিকা:
১. জেমি ভার্দি (২৩ গোল)- ৩৩ বছর বয়স- ২০১৯/২০২০ মৌসুম
২. দিদিয়ের দ্রগবা (২৯ গোল)- ৩২ বছর বয়স- ২০০৯/২০১০ মৌসুম
৩. বার্বাদোভ (২০ গোল)- ৩০ বছর বয়স- ২০১০/২০১১ মৌসুম
৪. অ্যানেলকা (১৯ গোল) ৩০ বছর বয়স- ২০০৮/২০০৯ মৌসুম
৫. অবামেয়ং (২২ গোল)- ২৯ বছর বয়স- ২০১৮/২০১৯ মৌসুম।
এদিকে সদ্য সমাপ্ত হওয়া মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের সেরা গোলরক্ষকের খেতাব জিতেছেন ম্যানচেস্টার সিটির ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এডারসন মোরেয়াস। সিটিজেনদের গোল পোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে এবারের মৌসুমে এডারসন মোট ১৬টি ক্লিনশিট রেখেছেন। ৩৫টি ম্যাচে সিটিজেনদের হয়ে মাঠে নেমে ৩১টি গোল হজম করেছেন বিপরীতে ৬৮টি সেভ করেছেন তিনি।
প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ ক্লিনশিট রাখা গোলরক্ষকদের তালিকা:
এডারসন মোরেয়াস (ম্যান সিটি)- ১৬টি ক্লিনশিট
নিক পোপ (বার্নলি)- ১৫টি ক্লিনশিট
ডেভিড ডি গিয়া (ম্যান ইউনাইটেড)- ১৩টি ক্লিনশিট
ক্যাস্পার স্মাইখেল (লেস্টার সিটি)- ১৩টি ক্লিনশিট
রুই প্যাট্রিসিও (উলভস)- ১৩টি ক্লিনশিট
সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট দাতাদের তালিকা
১. কেভিন ডি ব্রুইন (২০টি)
২. ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড (১৩টি)
৩. অ্যান্ড্রিউ রবার্টসন (১২টি)
৪. মোহাম্মদ সালাহ (১০টি)
৫. হিউং মিন সন (১০টি)
গোল্ডেন বুট
গোল্ডেন গ্লাভস
প্রিমিয়ার পয়েন্ট টেবিল:
২০১৯-২০২০ মৌসুম ইপিএল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ চেলসি টপ নিউজ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যানচেস্টার সিটি লিভারপুল