সেই সংগ্রামী সান্ত্বনাকে ১০ লাখ টাকা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
১৬ জুলাই ২০২০ ১৯:২৩
দশটি স্বর্ণজয়ী দেশসেরা তায়কোয়ানডো খেলোয়াড় সান্ত্বনা রানী রায়ের সংগ্রামী জীবনের গল্প গণমাধ্যমে জেনেছেন অনেকেই। লালমনিরহাটের এই নারী ক্রীড়াবিদের কষ্টের খবর পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানেও। সংগ্রামী সান্ত্বনাকে ১০ লাখ টাকা প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত ১০ লাখ টাকার চেক সান্ত্বনার হাতে তুলে দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো: জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। এই সময় উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া সচিব মো: আখতার হোসেন।
চেক প্রদানকালে জাহিদ আহসান রাসেল প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘এটি আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা এমন একজন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি। তিনি সবসময় আমাদের অসহায় ক্রীড়াবিদদের সহযোগিতা করে থাকেন। স্পোর্টস এর উন্নয়নে আমরা যখনই যা চেয়েছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা আমাদের দিয়েছেন। অতি সম্প্রতি তিনি করোনায় ক্ষতিগ্রস্হ খেলোয়াড়দের সহায়তা করতে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আমরা অচিরেই এ অর্থ দেশের তৃণমূল পর্যায়ের ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকদের হাতে তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সান্ত্বনা রানী রায়ও। নিজের প্রতিক্রিয়ায় দেশসেরা তায়কোয়ানডো খেলোয়াড় বলেছেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার বিপদের সময়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। গত মার্চ মাসে আমার পারিবারিক সমস্যার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমে জানতে পারেন। তিনি রাসেল স্যারকে আমার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে বললে। তিনি আমাকে ফোন করেন এবং তার সচিবালয়স্হ দপ্তরে আমাকে ডেকে নেন। পরবর্তীতে রাসেল স্যার আমার দুরবস্থার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন । আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
দুবার বিশ্বকাপ খেলা সান্ত্বনা ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক পর্যায় মিলিয়ে স্বর্ণ জিতেছেন ১০টি, রৌপ্য ২টি, ব্রোঞ্জ ২টি। তবে পদক জয়ের রাস্তাটা সহজ ছিল না।
অভাবের সংসারে সান্ত্বনা বড় সন্তান। ছোটকালে বিয়ের জন্য পরিবার থেকে চাপ এসেছিল। সেটা রুখে রাজশাহী কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। অনার্স পড়েছেন রংপুর সরকারী কলেজে। লালমনিরহাট থেকেই আসা যাওয়া করতেন রংপুরে। সেই সময় পড়াশুনার খরচ চালাতে জমিতে কাজ করেছেন, অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজও করেছেন সান্ত্বনা।
খেলাধুলায় এসেছেন অনার্স পড়তে পড়তেই। রংপুর স্টেডিয়ামে তখন মার্শাল আর্টের ট্রেনিং হতো। ভর্তি হলেন সেখানে। সেই শুরু, ২০১১ সালে জাতীয় আইটিএফ তায়কোয়ানডো চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে ব্ল্যাকবেল্টকে হারিয়ে চমকে দিয়েছিলেন। সেবার রৌপ্য পদক জিতেছিলেন সান্ত্বনা। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তবে বহু সংগ্রামের পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক পদক জিতলেও অর্থনৈতিকভাবে ছিলেন বড্ডই অস্বচ্ছল। বর্তমানে ২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করছেন স্থানীয় একটি স্কুলে। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ক্যাম্পাসে গিয়ে মার্শাল আর্ট শেখান। কিস্তিতে কেনা নিজের মোটরসাইকেল চালিয়েই প্রশিক্ষণ দিতে যান সান্ত্বনা।
একদিকে মোটরসাইকেলের কিস্তি, নিজের খরচ অন্যদিকে মানসিক রোগী ভাই ও ছোট বোনের পড়াশুনার খরচ। পরিবারে আয়ের একমাত্র ওই সান্ত্বনাই। ফলে ২০ হাজার টাকা বেতনে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ দশা।
এদিকে, বয়সও কম হলো না। গত জুনে ৩৭’শে পা দিয়েছেন। বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেলেও বিয়ে করতে পারছেন না বরপক্ষের মোটা অঙ্কের যৌতুকের দাবিতে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সান্ত্বনার এসব গল্প মনে দাগ কেটেছে অনেকের।
জাহিদ আহসান রাসেল এমপি টপ নিউজ তায়কোয়ানডো সান্ত্বনা রানী রায়