Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের অবিস্মরণীয় কীর্তির ৯০ বছর


১২ জুলাই ২০২০ ১৬:২৩ | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ১৬:২৭

১৯৩০ সালের ১১ জুলাই। মর্যাদার অ্যাশেজ সিরিজের হেডিংলি টেস্টের প্রথম দিনের খেলা চলছিল সেদিন। আম্পায়াররা দিনের খেলা শেষ ঘোষণা করতেই মাঠে নেমে পড়লেন দর্শকরা। তখন ক্রিকেট মাঠ অতেটা নিরাপত্তার বলয়ে ঢাকা থাকত না। এতো পরিমান দর্শক মাঠে ঢুকে পড়েছিল যে মাঠ ছাড়তে বিপাকেই পড়তে হয় ক্রিকেটারদের। বিশেষ করে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের। তাঁকে অভিনন্দন জানাতেই যে মাঠে ঢুকেছিলেন দর্শকরা। ভীড় ঠেলে মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে ফিরতে সেদিন পুলিশের সাহায্য নিতে হয়েছিল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ব্যাটস্যানকে। ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত ‘উইজডেনে’ বলা হয়েছে, স্যার ব্র্যাডম্যান প্যাভিলিয়নে ফেরার সময় যেভাবে অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন, তার চেয়ে ভালো কিছু কেউ কখনো পেতে পারে না। সেদিন এক দিনেই ট্রিপল সেঞ্চুরির অবিস্মরণীয় রেকর্ড গড়েছিলেন ব্র্যাডম্যান।

বিজ্ঞাপন

তারপর কেটে গেছে ৯০ বছর, গতকাল ব্র্যাডম্যানের কীর্তির ৯০ বছর পূর্তি হলো। তবুও এখনো অক্ষত রেকর্ডটি। কোনদিন কেউ ভাঙতে পারবেন কিনা তাতে সন্দিহান অনেকেই। আধুনিক ক্রিকেটে ধুম-ধারাক্কার ব্যাটিংয়ের সময়েও একদিনে তিনশ’র আশে-পাশে যেতে পারেননি কেউ।

হেডিংলিতে সেদিন টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক বিল উডফুল। ক’মাস আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া ব্র্যাডম্যানের বয়স তখন ২১, ব্যাটিং করতেন তিন নম্বর পজিশনে। প্রথমে ব্যাটিং করতে নামা অস্ট্রেলিয়া প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলল দ্বিতীয় ওভারেই। ইংল্যান্ডের মরিস টেটের করা ওভারের পঞ্চম বলে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ দেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার আর্চি জ্যাকসন। ব্যাট হাতে তিনে নামলেন তরুণ ব্র্যাডম্যান। সেখানেই বিস্ময় আর ইতিহাসের সূচনা।

দিনের পুরোটা সময় ইংলিশ বোলারদের দুঃস্বপ্ন দেখিয়েছেন। লাঞ্চ বিরতির আগেই সেঞ্চুরি তুলে নেন ব্র্যাডম্যান। তার ব্যক্তিগত রান যখন ১০২, দলের রান তখন ১২৭। টেস্ট ক্রিকেটের শত বছরের ইতিহাসে লাঞ্চের আগে ব্র্যাডম্যান ছাড়া সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন আর মাত্র চারজন ব্যাটসম্যান। লাঞ্চের পর আরও বিধ্বংসী ছিলেন সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানটি। দ্বিতীয় সেশনে তার ব্যাট থেকে আসে ১১৫ রান। তাতে দ্রুততম সময়ে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডও হয়ে যায়, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত। ব্র্যাডম্যান সেদিন ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মাত্র ২১৪ মিনিটে।

স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্ত হয়ে পড়ার কথা। সেই কারণেই কিনা শেষ সেশনে তুলনামূলক কম রান তুলতে পারলেন। তবে তাতে কিন্তু ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড থেমে থাকেনি। দিন শেষে যখন ফিরছিলেন ব্র্র্যাডম্যানের নামের পাশে ছিল ৩০৯ রান। শেষ সেশনে তার ব্যাট থেকে আসে ৮৯ রান। পরের দিন অবশ্য খুব একটা এগুতে পারেননি। তবুও সেই সময়ের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড নিজের করে নিয়ে তবেই আউট হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

ইংল্যান্ডের অ্যান্ডি স্যান্ডহামের ৩২৫ ছিল তখন টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান। ৩০৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করা ব্র্যাডম্যান শেষ পর্যন্ত আউট হন ৩৩৪ রানে। তার ৩৮৩ মিনিটের ইনিংসটি ছিল ৪৬টি বাউন্ডারি, ৬টি তিন, ২৬টি ডাবলস ও ৮০টি সিঙ্গেলসে সাজানো। ছক্কা সেদিন একটিও মারেননি ব্র্যাডম্যান। ‘ছক্কা’তে অবশ্য পুরো ক্যারিয়ারজুড়েই ‘অ্যালার্জি’ অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তির। ক্যারিয়ারে ব্যাট হাতে এতো অবিশ্বাস্য কিছু রেকর্ড গড়েছেন, ভেঙেছেন কিন্তু পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে ছক্কা মেরেছেন মাত্র ৬টি!

সেদিন হেডিংলিতে ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছিলেন ব্র্যাডম্যান। ব্যক্তিগত ১৪১ ও ২০২ রানের মাথায় ভুল শট খেলে বল হাওয়ায় ভাসিয়েছিলেন। কিন্তু বেঁচে যান বলের লাইনে ফিল্ডার না থাকার কারণে। ২৭৩ রানের মাথায় ক্যাচ দিয়েছিলেন উইকেটরক্ষককে। কিন্তু ইংলিশ কিপার জর্জ ডাকওয়ার্থ তা লুফে নিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তবে রেকর্ড বইয়ে এসব কী আর লেখা থাকে! রেকর্ড তো রেকর্ডই।

৯০ বছর ধরে যা অক্ষত, কোনদিন কেউ ভাঙতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্ন ভবিষ্যতের জন্যেই তোলা থাক।

কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যান

বিজ্ঞাপন

৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর