টাকা নয় এবাদতের কাছে আগে জীবন
২৮ জুন ২০২০ ১৭:১০ | আপডেট: ২৮ জুন ২০২০ ২৩:৪১
করোনার ভয়াল থাবার ৮টি টেস্ট ম্যাচ স্থগিত হওয়ায় বড় অংকের ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ম্যাচ প্রতি ৬ লাখ করে হিসেবে করলে টাকার অংক গিয়ে দাঁড়ায় ৪৮ লাখে। অর্থাৎ অতি ক্ষুদ্রকায় এক অণুজীবের কারণে বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা থেকে বঞ্চিত লাল সবুজের ক্রিকেটাররা। এতে করে অনেকের হৃদয়েই ক্ষতের সৃষ্টি হওয়ার কথা। আফসোস কিংবা হতাশা জন্ম নেওয়াটাও অবান্তর নয়। কিন্তু এবাদত হোসেনের মধ্যে এর লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া গেল না। কোনো কষ্ট তার নেই, আফসোস নেই, হতাশাও বিন্দুমাত্র নেই। কারণ টাকা নয়, জীবনটাই যে তার কাছে সবার আগে।
এদিকে স্থগিত হয়ে যাওয়া ম্যাচগুলো আবার কবে মাঠে গড়াবে কিংবা আদৌ গড়াবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্টই সন্দেহ আছে। কেননা আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সাইকেলের (৭২ ম্যাচ) ফাইনাল আগামি বছরের জুলাইয়ে লর্ডসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যদি সূচিতে পরিবর্তন আনা না হয় তাহলে স্থগিত হয়ে যাওয়া ম্যাচগুলো মাঠে গড়ানোর সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। এর মানে হলো ৪৮ লাখ টাকার বড় লোকসান গুনতে হবে টাইগার ক্রিকেটারদের। তবে দেশের করোনা সংকটের রূঢ় বাস্তবতায় অর্থের বিষয়টি মোটেই প্রাধান্য পাচ্ছে না এই গতি তারকার কাছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের উদীয়মান এই পেসারের মতে মহামারিকালে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই প্রথম ও শেষ কথা। বেঁচে থাকলে তবেই না ক্রিকেট। আর যেহেতু ক্রিকেটেই তার পেশা করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে মাঠে খেলা ফিরলে আর্থিক বিষয় নিয়েও ভাবতে হবে না।
রোববার (২৮ জুন) সারাবাংলার সঙ্গে একান্তে আলাপকালে তিনি কথাগুলো জানালেন।
এবাদত বললেন, ‘অর্থনৈতিক বিষয়ের আগে আমার কাছে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। বেঁচে থাকলে আমি খেলতে পারব তখন অর্থ আয়ের ব্যাপারটি এমনিতেই চলে আসবে।’
তবে একটি জায়গায় তার আফসোস আছে। সেটা হলো, এক বছরে ৮টি ম্যাচ পেয়েও খেলতে না পারা। ক্যারিয়ারের ঊষা লগ্নেই এতগুলো ম্যাচ স্থগিত না হলে সাদা পোষাকে মাত্র ৬ ম্যাচ খেলা এই ডানহাতি পেসার সন্দেহাতীতভাবেই নিজের উৎকর্ষতা আরো বাড়াতে পারতেন।
অবশ্য তিনি যে শুধুই নিজেকে নিয়ে ভাবছেন তা কিন্তু নয়। দেশের ভাবনাও তার বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে। এর পেছনের কারণটিও কম সঙ্গত নয়। বছরে যে দলটি কেবল দুই কি তিনটি টেস্ট খেলে অভ্যস্ত তাদের জন্য এক বছরে এতগুলো টেস্ট ম্যাচ! নিশ্চয়ই আশির্বাদ হয়ে এসেছিল। এক ক্যালেন্ডার বর্ষে এতগুলো ম্যাচ খেলতে পারলে এই ফরম্যাটে অনভ্যস্ত দলটি সন্দেহাতীতভাবেই খোলশ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারত, ঘোচাতে পারত টেস্টে অপারদর্শীতার অপবাদ। এবাদতের সঙ্গে প্রতিবেদকের আলাপকালে তা স্পষ্টই টের পাওয়া গেল।
‘আমার ক্যারিয়ারটা মাত্রই শুরু হলো। তাই ম্যাচগুলো আমার জন্য খুবই দরকার ছিল। কিন্তু কিছু করার নেই। জীবনটাই গুরুত্বপূর্ণ। বেঁচে থাকলে, সুস্থ থাকলে অনেক ম্যাচেই খেলতে পারব। তবে এটা ঠিক জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জয়ের পর আমরা বেশ ভালো ছন্দে ছিলাম। এই আটটা ম্যাচ যদি খেলতে পারতাম আমরা অনেক এগিয়ে যেতে পারতাম। যেহেতু বেশি টেস্ট পাই না।’
প্রসঙ্গত, প্রাণঘাতি করোনার ছোবলে চলতি বছরে একে একে টাইগারদের সবকটি টেস্ট ম্যাচই স্থগিত হয়ে গেছে। প্রথমে করাচি টেস্ট, এরপর পর্যায়ক্রমে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ (২টেস্ট), নিউজিল্যান্ড সিরিজ (২ টেস্ট) এবং সবশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজও (৩টেস্ট) স্থগিত ঘোষিত হয়েছে।
এবাদত হোসেন করোনা আতঙ্ক করোনাভাইরাস টপ নিউজ টাকার চেয়ে জীবন মূল্যবান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল