সাংবাদিকরাও অনেক বাজে বাজে কথা বলে: মোস্তাফিজ
১৮ মার্চ ২০২০ ১৯:০৮ | আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২০ ২০:১৮
এই একটি লাইনেই স্পষ্ট মোস্তাফিজের বর্তমান অবস্থাটা কী, বল হাতে তার সময়টা কেমন যাচ্ছে এবং তার প্রতিফলনটা কেমন। ২০১৫ সালে তার রাজসিক অভিষেকের পর এদেশের সবাই যাকে মাথায় তুলে নাচতেন, সেই তাকেই আজ ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন! যাকে ছাড়া বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট একটি সিরিজও ভাবতে পারত না, মাশরাফি বিন মর্তুজার চোখে যিনি সবসময়ের দেশ সেরা পেসার, সেই মোস্তাফিজকেই আজ অবলীলায় দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। এমনকি বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তির দুই ক্যাটাগরির একটিতেও তার জায়গা মেলে না! সেটা অবশ্য এমনি এমনি নয়। আগের মতো তার বলে কাটার ধরে না বলে দেদার্সে উইকেটের দেখাও আর মেলে না। যাও উইকেট পান রানের হিসেবে থাকেন ভীষণ খরুচে। বিনিময়ে সমর্থকদের কাছ থেকে মেলে দুয়ো ধ্বনি। এমনকি এদেশের ক্রিকেট সাংবাদিকেরাও নাকি কটূ কথা বলতে ছাড়েন না!
বিষয়টি তাকে নিদারুণ পীড়া দেয়। তাতে অবশ্য থমকে যান না। দেশের জন্য ভাল কিছু করার তাড়নায় আবার বল হাতে অনুশীলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বুধবার (১৮ মার্চ) মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে নিজেই সংবাদ মাধ্যমকে একথা জানালেন।
মোস্তাফিজ বলেন, ‘মনে হয় দেশের জন্য কিছু কিছু করছি। এখন অনেকে অনেকভাবে নেয়। স্বাভাবিক সাংবাদিকরাও অনেক বাজে বাজে কথা বলে। চেষ্টা করি কী করলে আবার ওই জায়গায় যেতে পারব।’
কেন সেই মোস্তাফিজের এই অবস্থা? চলুন দেখে আসি।
২০১৬ ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলতে গিয়ে কাঁধে ব্যথা পেয়ে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের ইনজুরিতে পড়েন মোস্তাফিজ। অস্ত্রোপচার হওয়ায় চার মাসেরও বেশি সময় তাকে থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে।
মূলত এই ইনজুরিটিই মোস্তাফিজকে ছন্দচ্যুত করেছে। কেন না কাঁধে অস্ত্রোপচার হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আগের মত সাবলীল ডেলিভারি তিনি দিতে পারেন না। যখনই ফুল ইন্টেনসিটিতে বল করতে যান তার ব্যাক অব দ্য মাইন্ডে অস্ত্রোপচারের বিষয়টি মনে পড়ে। যা তাকে হয়ত অস্ফুট বাক্যে বলে, ‘এত জোরে বল করো না, আবার ব্যথা পাবে।’ ভবিষ্যতের কথা ভেবে মোস্তাফিজও হয়থ সেই বাক্যে সায় দেন!
এর বাইরেও অবশ্য আরেকটি কারণ আছে। আর সেটা হল, আধুনিক ক্রিকেটে প্রতিটি দলই প্রতিপক্ষের থ্রেট প্লেয়ারকে নিয়ে বিস্তর বিচার বিশ্লেষণ করে থাকে। কম্পিউটার অ্যানাইলাইসিস থেকে শুরু করে থাকে টিম ম্যানেজেমেন্টের শকুন দৃষ্টিও। এতে করে তার শক্তির জায়গাটি ধরে ফেলে। ফলে ওই থ্রেট বোলার তার কাজটি সঠিকভাবে সম্পাদনে বাধাগ্রস্থ হন। মোস্তাফিজুর রহমানে ক্ষেত্রেও হুবহু তাই হয়েছে।
কিন্তু তাই বলে তাকে বাজে কথা কেন শুনতে হবে? মোস্তাফিজ কী এদেশকে কিছুই দেননি!
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মোস্তাফিজের অভিষেক ২০১৫ সালের এপ্রিলে, ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে। তারপর বাংলাদেশের হয়ে ৪১টি টি-টোয়েন্টি খেলে উইকেট নিয়েছেন ৫৮টি। গড় ২০.৫৩, সেরা বোলিং ২২ রানে পাঁচ উইকেট।
ওয়ানডে ও টেস্টে অভিষেক হয়েছে সেই বছরেই। ২০১৫ সালের জুনে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেছিলেন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৮টি ওয়ানডে খেলে ২৩.০৪ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ১০৯টি। সেরা বোলিং ৪৩ রানে ছয় উইকেট। টেস্টে অভিষেক সেই বছরের জুলাইয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এখন পর্যন্ত ১৩ টেস্ট খেলে ৩৫.১৭ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ২৮টি। ম্যাচে সেরা বোলিং ৬৬ রানে পাঁচ উইকেট।