শ্বাসরুদ্ধকর ২য় ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় টাইগারদের
৩ মার্চ ২০২০ ২০:৫০ | আপডেট: ৩ মার্চ ২০২০ ২১:০১
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জিম্বাবুয়কে ৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর তাতেই এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করেছে টাইগাররা। ৩২৩ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো না হলেও শেষ দিকে দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান ডোনাল্ড তিরিপানো এবং টিনোটেন্ডা মুতোমবোজির ঝড়ো ব্যাটিংয়ের খুব কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল রোডেশিয়ানরা। শেষ ৮ ওভারে ৯৩ রান হাঁকালেও শেষ পর্যন্ত আর জয় পাওয়া হয়নি জিম্বাবুয়ের।
পাহাড়সম রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই জিম্বাবুয়ের দুর্গে আঘাত হানেন শফিউল ইসলাম। ইনিংসের ৪র্থ ওভারের প্রথম বলে রেগিস চাকাবাকে (২) তুলে নেন শফিউল। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ব্রেন্ডন টেইলর আসেন কামুনহুকামুয়েকে সঙ্গ দিতে। দুইয়ে মিলিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠে রোডেশিয়ানরা। তবে ১০ম ওভারে শফিউলের ওভারে মিরাজের দুর্দান্ত এক ফিল্ডিংয়ে টেইলরকে (১১) রান আউট করে বিদায় করেন।
এরপর অধিনায়ক শন উইলিয়ামসকে সঙ্গে নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন তিনাশি। তবে মিরাজের বলে এলবি হয়ে শন (১৪) ফিরলে ভাঙে ২৩ রানের জুটি। জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক যখন ফিরলেন তখন স্কোরবোর্ডে ৩ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ মাত্র ৬৭ রান। অন্যরা যখন আসা যাওয়ার মিছিলে তখন উইকেটের এক প্রান্ত আকড়ে ধরে রাখেন তিনাশি কামুনহুকামুয়ে। তাইজুলের বলে বোল্ড হওয়ার আগে দুর্দান্ত অর্ধশতক করেন তিনাশি (৫১)।
৫ম উইকেটে ৮১ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়েন সিকান্দার রাজা এবং ওয়েসলি মেধেভেরে। অর্ধশতক তুলে নিয়ে ব্যক্তিগত ৫২ রানে তাইজুলের বলে এলবি হয়ে ফেরেন তিনি। মাধেভের ফেরার পর ভয়ংকর হয়ে ওঠা সিকান্দার দুর্দান্ত অর্ধশতক হাঁকান। ব্যক্তিগত ৬৬’তে মাশরাফির বলে আউট হন দলীয় ২২৫ রানে। তার আগে সিকান্দারকে সঙ্গ দেওয়া মুতুম্বামিকে (১৯) নিজের ৩য় শিকারে বানান তাইজুল।
শেষ দিকে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান তিরিপানো এবং মুতোমবোদজি। শেষ দিকে মাত্র ৩৯ বলেই ৮০ রানের জুটি গড়েন তিরপানো এবং মুতোমবোদজি। আল-আমিন এবং শফিউলকে বেশ কঠিন সময়ই উপহার দিয়েছেন এই দুই ব্যাটসম্যান। শফিউল ৯ ওভারে দেন ৭৬ রান আর আল-আমিন ১০ ওভারে দেন ৮৫ রান। তিরপানো শেষ পর্যন্ত ২৮ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন আর মুতোমবোদজি ফেরেন ২১ বলে ৩৪ রানে। টাইগারদের হয়ে তিনটি উইকেট নেন তাইজুল ইসলাম আর একটি করে উইকেট নেন মাশরাফি, শফিউল, আল-আমিন এবং মিরাজ।
টস জিতে একাদশে দুই পরিবর্তন নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ৩২২ রান তোলে বাংলাদেশ। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওডিআইতে গড়া রেকর্ড ভেঙে নতুন করে রেকর্ড গড়া হয় এই ম্যাচেই। সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সংগ্রহই এখন টাইগারদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ। ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দারুণ হয় তামিম-লিটন জুটির। তবে ইনিংসের ৭ম ওভারে তামিমের শট বলার মুম্বার হাত ছুঁয়ে লাগে স্ট্যাম্পে আর তাতেই গেল ম্যাচে শতক হাঁকানো লিটনকে ফিরতে হলো মাত্র ৯ রানে।
এরপর দ্বিতীয় উইকেটে নামা শান্ত থিতু হওয়ার আগেই ফেরেন অদ্ভুতুড়ে রান আউটে। ১১তম ওভারে ফাইন লেগে বল ঠেলে দেন শান্ত, তবে রান নেওয়ার কোনো ইচ্ছায় ছিল না তার। কিন্তু অপর প্রান্তে থাকা তামিম দৌড়ে চলে যান স্ট্রাইক প্রান্তে অগ্যতায় পিচ ছাড়তে হয় শান্তকে। তাতেই ভুল বোঝাবুঝিতে ফিরতে হয় শান্তকে (৯)।
মাত্র ৬৫ রানে দুই উইকেট হারিয়ে যখন অস্বস্তিতে বাংলাদেশ ঠিক তখনই উইকেটে আসলেন মুশফিক। ক্যারিয়ারের ৩৮তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে তামিমের সঙ্গে ৮৭ রানের জুটি গড়েন। এরপর ফিরলেন দলীয় ১৫২ তে ব্যক্তিগত ৫৫ রানে। অন্যররা ফিরলেও তামিম ছিলেন উইকেটে অনড়। ৪র্থ উইকেটে রিয়াদের সঙ্গে গড়লেন শতরানের জুটি। রিয়াদেরও সামনে ছিল ফিফটির সম্ভবনা তবে ৪১ রানে দলীয় ২৫৮’তে ফিরলেন রিয়াদ।
তবে অন্যরা ফিরলেও তামিম তার ব্যাটে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন রেকর্ড গড়ে আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত। প্রায় দু’বছর পর শতকও তুলে নিয়েছেন। আর নিজের রেকর্ড ভেঙে সোমবার সিলেটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ডও গড়লেন দেশ সেরা এই ওপেনার। শেষ পর্যন্ত ২০টি চার, ৩টি ছয়ে ১৩৬ বলে ১৫৮ রান করেন তামিম।
শেষ দিকে মাত্র ১৯ রানেই ৪টি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মিরাজ (৫), মাশরাফি (১) এবং তাইজুল (০)। অবশ্য মিঠুনের ১৮ বলের ৩২ রানের ক্যামিওতে ৩২২ রানের রেকর্ড সংগ্রহ দাঁড় করাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। রোডেশিয়ানদের হয়ে তিরিপানো এবং মুম্বা ২টি করে উইকেট নেন; ১টি করে উইকেট নেন মাধেভেরে ও শুমা।
ওয়ানডে সিরিজ টপ নিউজ দ্বিতীয় ওয়ানডে বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম