অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:১৪ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:১১
ইতিহাস গড়ে আইসিসি’র অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলল বাংলাদেশ। পচেফস্ট্রুমের ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো স্বর্ণালি শিরোপা স্পর্শ করল টিম টাইগার। যেকোনো বিচারে এটিই বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ব শিরোপা জয়।
আরও পড়ুন- অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল: বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বল বাই বল
৪২ ওভার ১ বলের খেলা যখন মাঠে গড়ায়, অথর্ব আনকোলেকারকে মিড অনে ঠেলে দিয়ে তুলে নেন জয়সূচক রান। সে হিসাবে ৪৭ বল বাকি থাকার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে টাইগার যুবারা ২৩ বল বাকি থাকতে জিতে নিয়েছে ফাইনাল। কেননা, মাঝখানে ছোট্ট একটু বৃষ্টি বাধায় বাংলাদেশের লক্ষ্যে কিছুটা পরিবর্তন এসেছিল। তাতে ৫০ ওভারে ১৭৮ রানের লক্ষ্যটা ৪৬ ওভারে নেমে আসে ১৭০ রানে। অর্থাৎ বৃষ্টির পর ৩০ বলে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৭ রান। সেটুকু করতে ঠিক ৭ বলই নিয়েছেন দুই অপরাজিত টাইগার ব্যাটসম্যান আকবর ও রাকিবুল।
এর আগে ভারতের যুবাদের ১৭৭ রানে রুখে দেয় বাংলাদেশের যুবারা। ১৭৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই মারমুখী টাইগার দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন এবং তানজিদ হোসেন তামিম। এরপর রভি বৈষ্ণয়ের ঘূর্ণি তোপে দ্রুতই উইকেট হারাতে থাকে টাইগাররা। তবে এক প্রান্তে উইকেট আগলে রাখেন অধিনায়ক আকবর আলী। আর তার দৃঢ়তাতেই দলীয় সংগ্রহ একশ ছাড়িয়ে যায়। আর শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেই জয় ছিনিয়ে আনেন তিনি।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের ৯ম ওভারেই দলীয় অর্ধশতক তুলে নেন দুই ওপেনার। ওই ৯ম ওভারের দ্বিতীয় বলে বৈষ্ণয়কে ছয় মেরে দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করেন তানজিদ হোসেন তামিম। এরপর ১৩তম ওভারে বল করতে এসে সেমিফাইনালে টাইগারদের হয়ে শতক হাঁকানো মাহমুদুল হাসান জয়ের উইকেটও তুলে নেন বৈষ্ণয়। ওই ওভারেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন।
আরও পড়ুন- ‘স্যালুট ক্যাপ্টেন’
১৫তম ওভারে আবারও বল হাতে আসেন বৈষ্ণয়। আর ওভারের প্রথম বলেই তুলে নেন তাওহিদ হৃদয়ের উইকেট। এলবিডাব্লিউয়ের শিকার হয়ে শূন্য রানেই ফেরেন এই ব্যাটসম্যান। আর আউট হওয়ার আগে তানজিদ হোসেন তামিম করেন ১৭ রান, মাহমুদুল হাসান জয় করেন ৮ রান। আর পায়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়া আগে ইমন নামের পাশে যোগ করতে পারেন ২৫ রান। টাইগারদের ইনিংসের প্রথম এই চার উইকেটের সবগুলোই ঝুলিতে পুরে নেন বৈষ্ণয়।
এরপর ২১তম ওভারের প্রথম বলে শামীম হাসান আর ২৩তম ওভারের শেষ বলে অভিষেক দাসের উইকেট হারায় টাইগাররা। দু’টো উইকেটই তুলে নেন বাঁহাতি মিডিয়াম পেসার সুশান্ত মিশরা। তাতে করে চাপে পড়ে যান টাইগার যুবারা। সেই চাপ থেকে দলকে বের করে নিয়ে আসতে ফের মাঠে নামেন আহত হয়ে মাঠ ছেড়ে যাওয়া পারভেজ ইমন। শারীরিকভাবে ফিট না হয়েও বুক চিতিয়ে লড়তে থাকেন অধিনায়ক আকবরের সঙ্গে। ৩২তম ওভারের শেষ বলে পার্টটাইমার ইয়াসাসভি জয়সালের বলে মনোসংযোগ হারালে সপ্তম উইকেট হারায় যুবারা। তাতে করে ফের একবার কালো মেঘ দেখা দেয় টাইগার শিবিরে। কারণ এরপর আর কোনো স্বীকৃত ব্যাটসম্যান যে ছিল না!
তবে অধিনায়ককে যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়, ঠিক সেটিই যেন দেখিয়ে দিতে একপ্রান্তে অনড়-অটল ছিলেন আকবর। জানতেন, লক্ষ্যটা বড় নয়, চ্যালেঞ্জ উইকেটে টিকে থাকা। তাই সপ্তম উইকেট পতনের পর রাকিবুল হোসেন ব্যাটিংয়ে নামলে প্রথম কয়েকটি ওভার টানা ডট বল খেলে গেছেন দু’জন। অধিনায়কের নির্দেশনাও যথাযথভাবে মেনে চলেন রাকিবুল। তাকে ধীরে ধীরে ওভার গড়াতে থাকলেও লক্ষ্যের কাছাকাছি যেতে থাকেন যুবারা।
এর মধ্যে বাগড়া দেয় বৃষ্টি। ৪১ ওভার শেষে প্রথম বিশ্বজয়ের ইতিহাস থেকে থেকে জুনিয়র টাইগাররা যখন মাত্র ১৫ রান দূরে, বৃষ্টি বাধায় খেলোয়াড়দের মাঠ ছাড়তে হয়। ওই সময় ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশই। ফলে খানিকটা নির্ভার ছিল টাইগার শিবির। মিনিট দশের পরে খেলা গড়ায় মাঠে। নতুন লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ৪৬ ওভারে ১৭০ রান। অর্থাৎ ৫৪ রানে ১৫ রানের লক্ষ্য মাঠে নামার পর হয়ে যায় ৩০ বলে ৭। প্রথম বলেই আকবর আলী নেন সিংগেল। দুই বল দেখে চতুর্থ বলেই মিশরাকে বাউন্ডারি ছাড়া করে সে লক্ষ্যকে নাগালে নিয়ে আসেন রাকিবুল। শেষ বলে একরান নিয়ে সমতা নিয়ে আসেন স্কোরে। আর দেরি করেননি, পরের ওভারের প্রথম বলেই আনকোলেকারকে মিড অনে ঠেলে দিয়ে রাকিবুল উপহার দেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় মুহূর্তটি।
আরও পড়ুন- জয়োল্লাসে ভাসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ওই মুহূর্তেই জুনিয়র টাইগাররা বিশ্বকে জানান দেন, জুনিয়রদের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপাটি এখন বাংলাদেশের। ৩৪ বছরের যে ক্রিকেট ইতিহাস বাংলাদেশের, সেই ইতিহাসে যুক্ত হয় নতুন পালক। সেই পথে সামনে থেকে বুক চিতিয়ে লড়াই করা অধিনায়ক আকবরই জিতে নিয়েছেন ম্যান অব ম্যাচের পুরস্কার।
শুরুতেই বাজিমাত বোলিংয়ে
এর আগে, পচেফস্ট্রুমে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে বাংলাদেশি পেসারদের তোপের মুখে ১৭৭ রানেই অলআউট হতে হয় ভারতকে। টসে জিতে আগে ভারতকে ব্যাটিংয়ে ঠেলে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলী। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে দেরি করেননি টাইগার পেসাররা। শরীফুল ইসলাম আর তানজিম হাসান সাকিব রীতিমতো আগুন ঝরাতে থাকেন পিচে। তাতে করে ভারতের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান যশভি জয়সওয়াল ছাড়া আর কেউ ব্যাট হাতে বড় স্কোর গড়তে পারেননি।
ইনিংসের সপ্তম ওভারে দিব্যাংশ সাকসেনাকে (২ রান) প্যাভিলিয়নে ফেরান টুর্নামেন্টে অভিষেক হওয়া অভিষেক দাস। তিলক ভার্মাকে নিয়ে সে ঝড় সামাল দেন জসওয়াল। অবশ্য এসময়ও রানের গতি ছিল ধীর। তানজিম সাকিব ২৯ ওভারে ফেরান ৩৮ রানে থাকা তিলককে। এরপর ৩২তম ওভারে ভারতের অধিনায়ক প্রিয়ম গার্গকে (৭) ফেরান রাকিবুল। তবে ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যান জসওয়ালকে ফেরান ম্যাচের সেরা বোলার শরীফুলই। সেটা ছিল ৪০তম ওভারের পঞ্চম বল, জসওয়াল ছিলেন ৮৮ রানে। পরের বলেই ফেরান সিদ্ধেশ ভীরকে (০)। তাতে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগলেও সেটা বাস্তবে রূপ পায়নি। তবে শুরুতে চেপে ধরে ডেথ ওভারের কাছাকাছি এসে শরীফুলের এই রুদ্র মূর্তিই ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়।
আরও পড়ুন- জুনিয়র টাইগারদের বিশ্বজয়ে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
এরপর ভারতের ইনিংস আর এগাতে পারেনি। আর মাত্র ৭ ওভার দুই বল ব্যাটিং করতে পারে দলটি। আর সে সময়ে ২১ রান যোগ করলেও আরও ৫ উইকেট হারিয়ে অলআউট হতে হয় ভারতকে। ধ্রুব জুরেল (২২) আর বিষ্ণয় (২) কাটা পড়েন রানআউটের খড়গে, আনকোলেকারকে (৩) বোল্ড করেন অভিষেক, কার্তিক ত্যাগীকেও (০) উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তিনি। সুশান্ত মিশরাকে (৩) শরীফুলের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ভারতীয় ইনিংসের সমাপ্তি ঘটান তানজিম সাকিব।
দিন শেষে উইকেট বিচারে জুনিয়র টাইগারদের সেরা বোলার অভিষেক দাস। ৯ ওভারে ৪০ রান দিয়ে তিনি তুলে নিয়েছেন ৩ ভারতীয় উইকেট। ১০ ওভারে ৩১ রান দিয়ে শরীফুল আর ৮ ওভার ২ বলে ২৮ রান দিয়ে তানজিম সাকিব তুলে নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। রাকিবুল হাসানও উইকেট নিয়েছেন ১টি, ১০ ওভারে তিনি দিয়েছেন ২৯ রান। তবে খেলা যারা দেখেছেন, তারা নিশ্চিতভাবেই জানবেন, শরীফুল যে বল করেছেন, তাতে টাইগারদের হয়ে সেরা বোলার তিনিই।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ক্রিকেট শিরোপা টপ নিউজ বিশ্বকাপ ক্রিকেট