Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মোহামেডানকে হারিয়ে ৮৬ বছরে প্রথমবার ফাইনালে রহমতগঞ্জ


২ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:০৩ | আপডেট: ২ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:০২

ঢাকা: তরুণ তুর্কিদের নিয়ে অল্প বাজেটের দল গড়েছে মোহামেডান ও রহমতগঞ্জ। বলা চলে চলতি ফেডারেশন কাপে দুই দলই আন্ডারডগ হিসেবে নেমেছে। কিন্তু ৩২ তম এই আসর যতই এগিয়ে যাচ্ছিল ততই মুগ্ধতা ছড়িয়েছে মতিঝিল ও পুরান ঢাকার এই দু’দলই। আসরের সেমিতে দুই ঐতিহ্যবাহী দলের লড়াইটা ছিল অনেক কিছু পাওয়ারও। এই যেমন ফেডারেশন কাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে পা রেখেছে রহমতগঞ্জ। সেটাও হাইপ্রেসিং কৌশলে নব্য উদ্যমে আবির্ভূত মোহামেডানকে হারিয়ে।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) মোহামেডানকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেছে রহমতগঞ্জ।

পুরো টুর্নামেন্টে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত ম্যাচগুলো পর্যবেক্ষণ করে একটা দু’দলের দুটি কৌশল লক্ষ্য করা গেছে। একদিকে মোহামেডানের হাইপ্রেসিং অন্যদিকে রহমতগঞ্জের রক্ষণ ‍দুর্গ। এই আসরে এর আগে গ্রুপ পর্বে কোন জয় না পেয়েও কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয়া একমাত্র দল রহমতগঞ্জ। গ্রুপ পর্বে দুই হ্যাভিয়েট সাইফ ও শেখ জামালকে রুখে দিয়ে শেষ আট নিশ্চিত করেছে পুরান ঢাকার দলটি। এই গ্রুপ থেকেই শেখ জামালকে বিদায় নিতে হয়েছে।

জায়ান্ট কিলার হিসেবে আখ্যা দেয়াই যেতে পারে কম বাজেটের এই দলকে। গ্রুপে আন্ডারডগ হিসেবে খেলে শেষ আটে যাওয়ার পথে সাইফকে ০-০ ব্যবধানে রুখে দিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচেও শেখ জামালকে ১-১ ব্যবধানে থামিয়ে দেয় রহমতগঞ্জ।

অন্যদিকে দুর্দান্ত ফর্মে ছিল ঢাকা আবাহনীও। শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে বিস্ফোরক হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে ধানমন্ডির জায়ান্টরা। বাংলাদেশ পুলিশকে ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচেও আরামবাগকে উড়িয়ে দেয় ৫-১ ব্যবধানে।

ফেবারিট হিসেবে নামলেও রহমতগঞ্জের রক্ষণভাগে ভালোই ভুগতে হয়েছে ঢাকা আবাহনীকেও। কোয়ার্টার ফাইনালে পুরো ম্যাচে আবাহনীকে ‍রুখে ম্যাচটাকে টাইব্রেকার পর্যন্ত ঠেলে নিয়ে সেই ম্যাচ পকেটেও পুড়েছে রহমতগঞ্জ জমাট রক্ষণ দিয়ে।

এদিকে ক্যাসিনো কাণ্ডের পর ভাঙাচোরা দল গঠন করে যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় বদলে গেছে ঐতিহ্যবাহী দলটি। সিন লেনের কোচিংয়ে দলটি যে চার বছর পর ফেডারেশন কাপের সেমিতে। সেমিতে আসতে পেরুতে হয়েছে বিশাল লম্বা পথ। সেটা সম্ভব হয়েছে লিনের হাই প্রেসিং কৌশল মাঠে খাটিয়েই। কোয়ার্টার ফাইনালটাই উদাহরণ হিসেবে নেয়া যায়। অপরাজিত চট্টগ্রাম আবাহনীকে হাইপ্রেসিং দিয়েই নাকানিচুবানি খাইয়েছে মোহামেডান। দুটি গোলও আদায় করে নিয়েছে প্রেসিং দিয়ে।

বিজ্ঞাপন

তাই স্বভাবতই ম্যাচের রঙ পাল্টাতে চেয়েছিল কৌশল দিয়েই। ম্যাচে মাঝমাঠের দখলটা মোহামেডানের হাতে থাকলেও গোলের সুযোগ বেশি তৈরি করেছে রহমতগঞ্জ। ম্যাচের ১৬ মিনিটেই শাহেদুর আলমের দারুণ ক্রস থেকে তাজিকিস্তানের তুরায়েব আকোবিরের হেডে বল খুঁজে নেয় জাল। তাতেই লিড নিয়ে ফেলে পুরান ঢাকার দলটি। পিছিয়ে পড়ে বলার মতো কোন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী দলটি।

দ্বিতীয়ার্ধে পিছিয়ে পড়া মোহামেডান ফিরে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু সমতায় ফেরার জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে সমতায় ফেরার সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করে মোহামেডান। একেবারে রহমতগঞ্জের গোলের পুনরাবৃত্তি ঘটতো গোলটি হলে। একইভাবে মনেকের ক্রস থেকে দারুণ হেড করে জাপানিজ নাগাতা। হেড বারে ঢুকতে ঢুকতে বেঁকে বারের পাশ ঘেষে বাইরে চলে গেলে হতাশ হতে হয় ফেডারেশন কাপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ী (১০বার) মোহামেডানকে।

এমন হারের পেছনে মোহামেডানের কোচ সিন লেন রহমতগঞ্জের জমাট রক্ষণকেই কারণ হিসেবে দেখেন, ‘আমরা জিততে চেয়েছি। তারা হারতে চায়নি। এইটা একটা পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’ ম্যাচে অফসাইডে গোল বাতিল হওয়া নিয়ে এই ব্রিটিশ কোচের মন্তব্য, ‘লজ্জ্বার অফ সাইড দেয়া হয়েছে।’

মোহামেডান হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফেডারেসন কাপের ফাইনালে যেতে পেরে খুশি রহমতগঞ্জের কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী, ‘আমার ইচ্ছা ছিল সরাসরি জয় নিয়ে ফাইনাল খেলার। প্রথমবার ফাইনালে গেছি। খুব ভালো লাগছে। প্রথম ১৫ মিনিট প্রেসিং করা আমাদের লক্ষ্য ছিল। সেটাই আসলে প্লানিং ছিল। ওদের ভড়কে দেয়াই উদ্দেশ্য ছিল।’ এখন চ্যাম্পিয়ন হওয়াই লক্ষ্য মনে করেন স্থানীয় এই কোচ, ‘আমাদের হারানোর কিছু নাই, পাওয়ার অনেক কিছুই আছে।’ ক্লাবে কোচিং ইতিহাসে এটাই তার বক্তব্যে সর্বোচ্চ সাফল্যের রহস্য।

এখন রহমতগঞ্জের প্রতিক্ষা ফাইনালের প্রতিপক্ষ পাওয়ার। আগামিকাল বসুন্ধরা কিংস ও বাংলাদেশ পুলিশ এফসির মধ্যকার জয়ী দলটা রহমতগঞ্জের প্রতিপক্ষ হতে চলেছে।

ফেডারেশন কাপ মোহামেডান বনাম রহমতগঞ্জ