‘গোলাপী’ টেস্টের আদ্যোপান্ত
২১ নভেম্বর ২০১৯ ১২:৫৭ | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:৪০
আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে গোলাপী বলের দিবা রাত্রির টেস্টের ইতিহাস খুব একটা বেশি দিনের না। ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু হয় এই টেস্টের। ৪ বছরে খেলা হয়েছে মাত্র ১১ টি টেস্ট। ১২ তম টেস্টে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) মাঠে নামবে বাংলাদেশ এবং ভারত। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিতব্য এই টেস্টকে নিয়ে নানা আয়োজন করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।
কি বিশেষত্ব এই দিবা রাত্রির টেস্টে! প্রধান বিশেষত্ব হল এর বল। গোলাপী বলে খেলা হয় এই টেস্ট। যা পেসারদের বাড়তি সুবিধা দেয়। কারণ গোলাপী বল বেশি সুইং করে। সেই সাথে পাওয়া যায় প্রচুর বাউন্সও। সন্ধ্যার দিকে আলোর পরিবর্তনের সাথে সাথে এই বল খেলা ব্যাটসম্যানদের জন্য আরও কঠিন হয়ে ওঠে।
২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর ইতিহাসে প্রথমবারের মত দিবা রাত্রির টেস্টে মাঠে নামে অস্ট্রেলিয়া। প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড। পেসারদের তাণ্ডবে ৫ দিনের টেস্টের ফলফাল চলে এসেছিল ৩ দিনেই। অ্যাডিলেডের সেই টেস্ট স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৩ উইকেটে। দুই দলের পেসাররা সেই ম্যাচে নিয়েছিলেন ২৫ উইকেট।
ঠিক প্রায় এক বছর পর ২০১৬ সালে ১৩ অক্টোবর দুবাইয়ে দিবা রাত্রির দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমেছিল পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যেখানে পাকিস্তান ৫৬ রানে জয় লাভ করেছিল।
গোলাপী বলের টেস্টে প্রথম ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট হেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৭ সালে তারা ইনিংস এবং ২০৯ রানে হারে। এটিই দিবা রাত্রির টেস্টে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার কোনো দলের।
২০১৫ থেকে এযাবৎকাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দিবা রাত্রির টেস্ট খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ৫ ম্যাচের ৫টিতেই জয় অজিদের। শ্রীলঙ্কা খেলেছে ৩ টি যার ভেতর ২টি জয় এবং একটি হার লঙ্কানদের।
পাকিস্তান এবং ইংল্যান্ড উভয়ই খেলেছে ৩ টি করে ম্যাচ যেখানে দুই দলেরই জয় রয়েছে একটি করে। বাকি দুইটিতেই হারের স্বাদ পেয়েছে এই দুই দল। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যন্ড খেলেছে দুইটি করে ম্যাচ যেখানে তাদের রয়েছে একটি জয় এবং একটি হার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিবা-রাত্রির টেস্টে অর্জন ৩ ম্যাচে ৩ হার এবং জিম্বাবুয়ে তাদের একমাত্র গোলাপী বলের টেস্টে পেয়েছিল হারের স্বাদ।
১১ টেস্টের সবগুলোতেই ফলাফল নিষ্পত্তি হয়েছে। নেই কোনো ড্রয়ের ইতিহাস। ইনিংস ব্যবধানে জয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে মাত্র ৪ টি ম্যাচে। যেখানে ২০১৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইনিংস এবং ২০৯ রানে জিতেছিল ইংল্যান্ড। একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় পায় ইনিংস এবং ১২০ রানে। এরপর ২০১৮ এর শুরুতে ইংলিশদের ইনিংস এবং ৪৯ রানে হারায় কিউইরা। ২০১৯ সালে লঙ্কানদের বিপক্ষে দিবা-রাত্রির টেস্ট ইতিহাসে ৪র্থ বারের মত ইনিংস ব্যবধানে জয় পায় অজিরা।
নারী দলের একটি মাত্র টেস্ট হয়েছে দিবারাত্রির। ২০১৭ সালের নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের নারী দলের সেই ম্যাচটি হয়েছিল ড্র। এটিই দিবা-রাত্রির টেস্টের একমাত্র ড্রয়ের নজির।
গোলাপী বলে বল হাতে তাণ্ডব চালান পেসাররা, যার প্রমাণ দেন অজি পেসার মিশেল স্টার্ক এবং জশ হ্যাজলউড। গোলাপী বল হাতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এই দুইজন বোলার। স্টার্কের ঝুলিতে গিয়েছে ২৬ উইকেট। সতির্থ জশ হ্যাজেলউডের শিকার ২১ উইকেট। গোলাপী বলে সেরা বোলিং ফিগার ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলার দেবেন্দ্র বিশুর। ২০১৬ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩.৫ ওভার বোলিং করে ৪৯ রানের বিনিময়ে পেয়েছিলেন ৮ উইকেট। দ্বিতীয় রেকর্ড গড়েন প্যাট কামিন্স। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২৩ রানে ৬ উইকেট শিকার করেছিলেন এই অজি বোলার।
দিবা-রাত্রির টেস্টে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড রয়েছে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান আজহার আলির। গোলাপী বলে ৩ টেস্টে ৯১ গড়ে তিনি করেছেন ৪৫৬ রান। টেস্টের এই ফরম্যাটে একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ডও এই ব্যাটসম্যানের। দ্বিতীয় রেকর্ড রয়েছে স্মিথ স্মিথের। একটি শতক এবং তিনটি অর্ধশতকে ৫০.৬২ গড়ে এই অজি ব্যাটসম্যান করেছেন ৪০৫ রান। আরেক পাক ব্যাটসম্যান আসাদ শফিকের ঝুলিতে রয়েছে গোলাপী বলে একমাত্র ডবল সেঞ্চুরির রেকর্ড।
দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড পাকিস্তানের; ৫৭৯ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সর্বনিম্ন রান জিম্বাবুয়ের। ৬৮ রানে অল আউট হয়েছিল তারা তাদের একমাত্র দিবা রাত্রির টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। দুই দিনেই ইনিংস এবং ১২০ রানের জয় পেয়েছিল প্রোটিয়ারা।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভারত এবং আয়ারল্যান্ড ব্যতিত বাকি সব টেস্ট খেলুড়ে দলই খেলেছে দিবা রাত্রির টেস্ট। ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মত গোলাপী বলে দিবা রাত্রির টেস্ট খেলতে কলকাতায় ইতোমধ্যেই পৌঁছে গেছে টাইগার বাহিনী। এখন দেখতে হবে সেই ম্যাচে ইতিহাস গড়তে চলছে কোন দল। মান বাঁচাবে বাংলাদেশ না সিরিজ জয় করবে ভারত। বাংলাদেশ সময় বেলা ১ টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
গোলাপি বলের টেস্ট টপ নিউজ দিবা-রাত্রির টেস্ট বাংলাদেশ বাংলাদেশ ভারত টেস্ট ভারত