সাকিবের ব্যাটে অবশেষে আফগান বধ
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:১০ | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:২৫
ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে উঠেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ আর আফগানিস্তান। সিরিজের ড্রেস রিহার্সেলের ষষ্ঠ ম্যাচে ১৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৬ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নিয়েছে। টাইগারদের জয় ৪ উইকেটের ব্যবধানে। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি তুলে নেন সাকিব। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের ব্যাটে অবশেষে ঘরের মাঠে আফগানদের আরেকবার হারালো বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি দুই দলের ৬ দেখায় বাংলাদেশ জিতলো দুটিতে। আফগানদের বিপক্ষে টানা চার ম্যাচ হারের পর জিতলো লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। ৫ বছর পর আফগানদের এই ফরম্যাটে হারালো বাংলাদেশ।
১৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৯ রানের মাথায় বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস। মুজিব উর রহমানের বলে আসগর আফগানের তালুবন্দি হওয়ার আগে লিটন করেন ৪ রান। দলীয় ১২ রানের মাথায় বিদায় নেন আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। অভিষিক্ত নাভিন উল হকের বলে রশিদ খানের হাতে ধরা পড়ার আগে শান্ত ব্যাট থেকে আসে ৫ রান। ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি আসে ষষ্ঠ ওভারে সাকিবের ব্যাট থেকে। মোহাম্মদ নবীর বলে ব্যক্তিগত ১৪ রানে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিক। সহজ ক্যাচ মিস হলে জীবন পান মুশফিক। জীবন পেলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, দলীয় ৭০ রানের মাথায় করিম জানাতের বলে ক্যাচ তুলে নিজের বিদায় ঘণ্টা বাজান মুশফিক। বিদায়ের আগে ২৫ বলে এক ছক্কায় করেন ২৬ রান। সাকিবের সঙ্গে জুটিতে আসে ৫৮ রান।
দলীয় ১৩তম ওভারে সাকিবের বিরুদ্ধে এলবির আবেদন আম্পায়ার নাকচ করে দেন। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি আফগানদের। এরপর বেশ কিছুক্ষণ ফ্লাডলাইটের আলোক স্বল্পতায় ম্যাচটি বন্ধ থাকে। ১৩ ওভার শেষে বোলিংয়ে প্রথমবার আসেন রশিদ খান। নিজের প্রথম ওভারেই এলবির ফাঁদে ফেলেন ৬ রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। দলীয় ৯৩ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এক ম্যাচ পড়ে সুযোগ পেয়ে আবারও ব্যর্থ সাব্বির রহমান। ব্যক্তিগত ১ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। সাকিবকে সঙ্গ দিতে পারেননি আফিফ হোসেন ধ্রুব। রশিদ খানের দ্বিতীয় শিকারে বোল্ড হয়ে বিদায় নেওয়ার আগে করেন ২ রান। দলীয় ১০৪ রানের মাথায় বাংলাদেশ ষষ্ঠ উইকেট হারায়।
এরপর সাকিব-মোসাদ্দেক মিলে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। এই জুটিতে আসে অবিচ্ছিন্ন ৩৫ রান। ৪৫ বলে আটটি চার আর একটি ছক্কায় সাকিব করেন অপরাজিত ৭০ রান। ১২ বলে ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক। ম্যাচ সেরার পুরস্কার ওঠে সাকিবের হাতেই।
মুজিব উর রহমান ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। নাভিন উল হক ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে পান দুটি উইকেট। করিম জানাত ৩ ওভারে ৩১ রান খরচায় নেন একটি উইকেট। গুলবাদিন নাইব ২ ওভারে ১৬ এবং মোহাম্মদ নবী ৩ ওভারে ২৪ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। রশিদ খান ৩ ওভারে ২৭ রান দিয়ে পান দুটি উইকেট।
ফাইনালের আগে নিয়মরক্ষার ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলপতি সাকিব আল হাসান। সিরিজের ষষ্ঠ ম্যাচে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে আফগানরা তোলে ১৩৮ রান। চার ম্যাচের তিনটিতে হেরে বিদায় নিয়েছে সিরিজের আরেক দল জিম্বাবুয়ে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মাঠে নামে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। ম্যাচটি সরাসরি দেখা যায় গাজী টিভির পর্দায়। একাদশে একটি পরিবর্তন বাংলাদেশের। আগের ম্যাচে অভিষিক্ত স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ইনজুরিতে পড়ায় এই ম্যাচে একাদশে এসেছেন সাব্বির রহমান। এদিকে, আফগানদের এই ম্যাচে অভিষেক হয়েছে নাভিন উল হকের। আগের ম্যাচ থেকে বাদ পড়েছেন ফজল নিয়াজাই এবং দৌলত জাদরান। একাদশে আসেন করিম জানাত।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে শফিউল ইসলামের বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন হজরতউল্লাহ জাজাই। একেবারেই সহজ ক্যাচ হলেও সেটা নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলীয় ৭৫ রানের মাথায় বিদায় নেন হজরতউল্লাহ জাজাই। ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথমবারের মতো সাকিব বোলিং আক্রমণে আনেন আফিফ হোসেনকে। নিজের প্রথম ওভারেই জাজাইকে বিদায় করেন তিনি। আউট হওয়ার আগে জাজাই ৩৫ বলে ছয়টি চার আর দুটি ছক্কায় করেন ৪৭ রান। একই ওভারে আফিফ ফেরান আসগর আফগানকে। নিজের প্রথম ওভারে কোনো রান না দিয়েই আফিফ নেন জোড়া উইকেট।
ইনিংসের দশম ওভারে আফিফ জোড়া আঘাত হানার পরের ওভারে আঘাত হানেন মোস্তাফিজ। তার কাটার বুঝতে না পেরে লিডিং এজে ফেরেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তার আগে ২৭ বলে দুই চার, দুই ছক্কায় করেন ২৯ রান। ৬ বলে ৪ রান করা মোহাম্মদ নবীকে বিদায় করেন সাকিব। দলীয় ৮৮ রানের মাথায় আফগানরা চতুর্থ উইকেট হারায়। দলীয় ৯৬ রানের মাথায় রানআউট হন ১ রান করা গুলবাদিন নাইব।
ইনিংসের ১৬তম ওভারে আক্রমণে এসে সাইফউদ্দিন দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড করেন ১৬ বলে এক ছক্কায় ১৪ রান করা নাজিবুল্লাহ জাদরানকে। দলীয় ১১৪ রানের মাথায় শফিউল ইসলামকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোস্তাফিজের হাতে ধরা পড়েন ৪ বলে ৩ রান করা করিম জানাত। শফিকুল্লাহ ১৭ বলে ২৩ এবং রশিদ খান ১৩ বলে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন।
সাকিব ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে তুলে নেন একটি উইকেট। মাহমুদউল্লাহ ১ ওভারে ১৬ আর মোসাদ্দেক ১০ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। আফিফের বোলিং ফিগার ৩-১-৯-২। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৪ ওভারে ২৩ রান খরচায় তুলে নেন একটি উইকেট। শফিউল ইসলাম ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট। মোস্তাফিজ ৩ ওভারে ৩১ রানের বিনিময়ে তুলে নেন একটি উইকেট।
বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে ভালো শুরুর আভাস দিয়েছিল। পরের ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে হারতে হয় সাকিবের দলটিকে। তবে, নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আবারও জিম্বাবুয়েকে হারায় বাংলাদেশ। তাতে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে সাকিব-মুশফিকরা। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর মিরপুরে ফাইনালে রশিদ খানের আফগানিস্তানের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন, আফিফ হোসেন, সাব্বির রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শফিউল ইসলাম এবং মোস্তাফিজুর রহমান।
আফগানিস্তান একাদশ: হজরতউল্লাহ জাজাই, রহমানুল্লাহ গুরবাজ, শফিকুল্লাহ, আসগর আফগান, মোহাম্মদ নবী, নাজিবুল্লাহ জাদরান, গুলবাদিন নাইব, রশিদ খান, করিম জানাত, নাভিন উল হক এবং মুজিব উর রহমান।
ত্রিদেশীয় সিরিজের ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচার করছে গাজী টিভি। বরাবরের মতো এবারও বিশ্বের নানা প্রান্তে থাকা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য খেলা দেখার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোল। এই প্রথমবার বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উপভোগ করা যাচ্ছে টাইগারদের খেলা। প্রায় ২০০ দেশ থেকে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজটি সরাসরি উপভোগ করতে ক্লিক করুন এখানে: www.rabbitholebd.com
ছবি: শ্যামল নন্দী
আফগানিস্তান গাজী টিভি টপ নিউজ ত্রিদেশীয় সিরিজ বাংলাদেশ র্যাবিটহোল