Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিকষকালো আঁধারে বাংলাদেশের ক্রিকেট


১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২০:৩৭ | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২০:৪৬

নিজেদের মাঠ, কন্ডিশন নিজেদের অনুকূলে, ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতায় যোজন যোজন এগিয়ে। কিন্তু তারপরেও পুঁচকে আফগানিস্তানের কাছে ছন্নছাড়া বাংলাদেশ! ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স শূন্য। শারীরিক ভাষাও নিদারুণ দীনতায় ভরা। মুশফিক, সাকিব, মাহদুদউল্লাহ, সৌম্য, লিটনরা যেন খেলাই ভুলে গেছেন!

বিশ্বকাপে এই দলটিই দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তানকে হারিয়েছিল? বিশ্বাস হচ্ছে না। কেবলই মনে হচ্ছে ভুল করে জয় তিনটি এসেছিল।

বিজ্ঞাপন

কেনই বা মনে হবে না বলুন? টেস্টে প্রায় ২০ বছরের অভিজ্ঞ দলটিকে বলে কয়ে হারিয়ে দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটে সদ্য জন্ম নেওয়া আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টিতেও তাই। যেন সাকিব-মুশফিকদের ক্রিকেট শিখিয়েছে ক্রিকেট অবকাঠামো বলে যাদের কিছুই নেই। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত, তালেবান অধ্যুষিত একটি দেশ, নিজেদের একটি খেলার মাঠও নেই। খেলতে হয় অন্যের দেশে গিয়ে। কখনও আরব আমিরাত কখনও ভারতের দেরাদুন যাদের হোম ভেন্যু। সেই দলটির সামনে চুর্ণ, বিচুর্ণ বিত্তশালী বাংলাদেশ। আফগানদের বিপক্ষে এই পর্যন্ত খেলা ৫ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ৪টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। সাদা পোশাকে প্রথম মোকাবেলাও তথৈবচ অবস্থা।

অনেকেই বলতে পারেন, বিশ্বকাপের সঙ্গে তুলনা করাটা অপ্রাসঙ্গিক। কেননা ওটা ওয়ানডে ফরম্যাট ছিল। ত্রিদেশীয় সিরিজে ফরম্যাট ভিন্ন। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ এমনিতেই পিছিয়ে।

কিন্তু তাই বলে আফগানিস্তানের কাছে এবং নিজেদেরে ঘরের মাঠে হার? আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই ২০১৪’র নভেম্বর থেকে ২০১৮’র নভেম্বর; ঘরের মাঠে দুর্বারের তকমা পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টানা চার বছরে ক্রিকেটের এমন কোনো শক্তি নেই যারা বাংলাদেশ সফরে এসে ওয়ানডে ফরম্যাটে হারেনি। টেস্টের ফলাফল অতটা সাফল্যমন্ডিত না হলেও নেহায়েত খারাপ বলা যাবে না। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ড্র করে এই ফরম্যাটে নিজেদের সুদিনের জানান দিয়েছিল। এই তো গেল বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ তে সিরিজ হারিয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সেই বাংলাদেশের এই হাল কেন? কি এমন ঘটে গেল? আফগানিস্তানের সঙ্গে কেন জেতা যায় না? আফগান ধাক্কায় ক্রিকেট দলের অবস্থা হয়েছে এমন-দাড়ালে হাঁটু কাঁপে, বসলে বুক ধড়ফড় করে! প্রতিবন্ধকতাটা আসলে কোথায়? জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের নন্দিত কোচ সারোয়ার ইমরানের কাছে।

তিনি বললেন, আফগানিস্তানের মতো টি-টোয়েন্টি কালচার বাংলাদেশের নেই বলেই এই অবস্থা। আমাদের দেশে এখনও এই কালচার গড়ে ওঠেনি। আমরা এক বিপিএল ছাড়া আর কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলি না। কিন্তু ওরা আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগ (এপিএল) ছাড়াও অসংখ্য টুর্নামেন্ট খেলে থাকে। ওদের তিনজন ক্রিকেটার (মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান) নিয়মিতই আইপিএলের মতো টুর্নামেন্ট খেলে। সেখানে বাংলাদেশের খেলে কেবল সাকিব। এটাই একটা বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশকে ভালো করতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।

এতো গেল টি-টোয়েন্টির আলোচনা। সাদা পোশাকে মাত্রই জন্ম নেওয়া দলটির বিপক্ষে হার নিয়ে কি বলবেন? এই হারের ব্যাখ্যা কি? জবাবে সারোয়ার ইমরান বললেন, এখানে আমাদের টিম ম্যানেজমেন্টের ভুল ছিল। তাদের বোঝা উচিত ছিল, আফগানিস্তানের স্পিন আক্রমণ আমাদের চাইতে অনেক শক্তিশালী। চট্টগ্রামে স্পিন উইকেট দেওয়া ঠিক হয়নি। পেস উইকেট অনায়াসেই দেওয়া যেত।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের সার্বিক অবস্থা মনে হচ্ছে কোথাও আটকে গেছে। ক্রমশই অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচক থেকে শুরু করে বিসিবি সভাপতি; সবাই বলছেন আমাদের পাইপ লাইন সমৃদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। ম্যাচের পর ম্যাচ তামিম, লিটন, সৌম্যরা বিবর্ণ ব্যাটিং উপহার দিয়েই চলেছেন। কিন্তু তাদের বিকল্প যেন খুঁজেই পাচ্ছে না। আলোকবর্তীকা হাতে কেউই অবতীর্ণ হচ্ছেন না।

ক্রিকেটারদের মাঠের পারফরম্যান্সের মতো নির্বাচকদের নির্বাচন পদ্ধতিও আঁধারে আচ্ছন্ন। তা না হলে এক ত্রিদেশীয় সিরিজেই কেন তিনবার দল দিতে হলো? কেন তারা দল নির্বাচনে যুগান্তরী পদক্ষেপ নিতে পারছেন না? প্রশ্নগুলোর আশু উত্তর মিললে ভালো। তা না হলে সেদিন খুব বেশি দূরে নেই যেদিন এদেশের ক্রিকেট ব্যর্থতার বালুচরে মুখ থুবরে পড়বে।

আঁধারে ক্রিকেট বাংলাদেশ বিসিবি সারোয়ার ইমরান