ক্যারি-স্টার্ক নৈপুণ্যে বিধ্বস্ত নিউজিল্যান্ড
৩০ জুন ২০১৯ ০৩:৩৭ | আপডেট: ৩০ জুন ২০১৯ ১৫:১৭
লড়াই ছিল একাদশ বিশ্বকাপের সেরা দুই হিসেবে ফাইনালে খেলা চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও রানার্স-আপ নিউজিল্যান্ডের। জমজমাট একটা লড়াইয়ের আশা করছিল ক্রিকেট বিশ্ব। বোল্টের হ্যাটট্রিকে ম্যাচের প্রথম ভাগে অস্ট্রেলিয়াকে ২৪৩ রানে বেধে রাখতে পারলেও কিউইরা এড়াতে পারেনি বিশাল হার। মিশেল স্টার্কের বোলিং নৈপুণ্যে ৮৬ রানের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।
শনিবার (২৯ জুন) দ্বাদশ বিশ্বকাপের ৩৭তম ম্যাচে মাঠে নামে তাসমান পাড়ের দুই দেশ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও রানার্স-আপ নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করে গাজী টিভি।
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অজি দলপতি অ্যারন ফিঞ্চ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে অজিরা তুলে ২৪৩ রান। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করেন নিউজিল্যান্ড পেসার ট্রেন্ট বোল্ট।
ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৯২ রানেই টপঅর্ডারের ৫ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ওপেনার এবং দলপতি অ্যারন ফিঞ্চ ৮, ডেভিড ওয়ার্নার ১৬, স্টিভ স্মিথ ৫, মার্কাস স্টয়নিস ২১ আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ০ রান করেন। দলের এমন বিপদের সময় হাল ধরেন উসমান খাজা আর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারি। এই জুটিতে আসে ১০৭ রান।
ক্যারি ৭২ বলে ১১টি চারের সাহায্যে করেন ৭১ রান। খাজা শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে করেন ৮৮ রান। তার ১২৯ বলে সাজানো ইনিংসে ছিল ৫টি চার। ট্রেন্ট বোল্টের পর পর দুই বলে আউট হন খাজা, মিচেল স্টার্ক। হ্যাটট্রিক বলে তুলে নেন জেসন বেহেরনড্রফকে। প্যাট কামিন্স ১৯ বলে ২৩ রান করে অপরাজিত থাকেন।
২৪৪ রানের জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে সাবধানতার সঙ্গেই খেলে নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলাস। উদ্বোধনী জুটিতে প্রথম ৯ ওভারে নিউজিল্যান্ড সংগ্রহ করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৯ রান। ইনিংসের ১০ম ও ব্যক্তিগত চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে কিউইদের ওপেনিং জুটি ভাঙেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার জেসন বেহনড্রফ। ব্যক্তিগত ৮ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যারিকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন নিকোলাস।
কিউই দলপতি এবং টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত দুইটি সেঞ্চুরি করা কেন উইলিয়ামসন মাঠে নেমে জুটি বাধেন গাপটিলের সঙ্গে। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি সেই জুটিও। ইনিংসের চতুর্দশ ও ব্যক্তিগত ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই গাপটিলকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন জেসন বেহেরনড্রফ। গাপটিলের সংগ্রহ ছিল ২০ রান।
অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান টেইলরকে নিয়ে জুটি বাধেন উইলিয়ামসন। দুইজন মিলে গড়ে তোলেন ৫৫ রানের পার্টনারশিপ আর চেষ্টা করেন নিউজিল্যান্ডকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার। আর ঠিক সেই সময়েই আঘাত মিশেল স্টার্কের। ইনিংসের ২৫ ও স্টার্কের ব্যক্তিগত চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে উইকেটের পেছনে ক্যারির গ্লাভসে বল জমা দিয়ে ব্যক্তিগত রান করে সাজঘরে ফিরে যান কেন উইলিয়ামসন।
অস্ট্রেলিয়ার আরেক পেসার কামিন্সের বলে উইকেটের পেছনে ক্যারির গ্লাভসে বল দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান টেইলরও। টেইলরের সংগ্রহ ছিল ৩০ রান। নিউজিল্যান্ডের দলীয় সংগ্রহ ছিল ৩২ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১১৮ রান।
এর পরের ওভারেই কোনো রান সংগ্রহ না করেই সাজঘরে ফিরে যান নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার গ্রান্ডহোম। স্মিথের করা দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে লং অফে উসমান খাজার তালুবন্দি হন গ্রান্ডহোম।
ইনিংসের ৩৬তম ওভারের তৃতীয় বলে স্টার্কের বলে ব্যক্তিগত ১৪ রানে আউট হন লাথাম। দুর্দান্ত ক্যাচ নেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক দলপতি স্মিথ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে সফল নিশামও এগুতে পারেননি বেশিদূর। ইনিংসের ৩৯ ও লায়নের ব্যক্তিগত অষ্টম ওভারের প্রথম বলেই বোলারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ব্যক্তিগত ৯ রান সংগ্রহ করে সাজঘরে ফিরে যান নিশাম।
ইনিংসের বাকি অংশটুকু পুরোটাতেই ছিল স্টার্ক নৈপুণ্য। সোধিকে ব্যক্তিগত ৫ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন স্টার্ক। নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল তখন ৪০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রান। ইনিংসের ৪১তম ও ব্যক্তিগত নবম ওভারের প্রথম বলেই ফার্গুসনকে শূন্য রানে বোল্ড আউট করে সাজঘরে ফেরান স্টার্ক।
ইনিংসের ৪৪তম ও স্টার্কের ব্যক্তিগত দশম ওভারের চতুর্থ ওভারে লং অফে বেহেরনড্রফের হাতে তালুবন্দি হয়ে নিউজিল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরে যান স্যান্টনার। আর এতেই ১৫৭ রানে অল আউট হয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া পায় ৮৬ রানের বিশাল জয়। ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত জন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারি।
বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের শীর্ষস্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়া আগেই সেমি ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করেছে। ৮ ম্যাচ খেলে সাতটিতে জয় এবং কেবল একটি হারে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ১৪ পয়েন্ট। অন্যদিকে সমানসংখ্যক ম্যাচ খেলে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ১১ পয়েন্ট। ভারতের বিপক্ষে তাদের ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়। ম্যাচ হেরেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
নিউজিল্যান্ডের পরবর্তী ম্যাচ স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ জুলাই এবং অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ পর্বে তাদের শেষ ম্যাচ খেলবে ৬ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।
সারাবাংলা/এসবি