Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেত নয় শিক্ষকের আশীর্বাদপুষ্ট হাতই শিক্ষাদানে অধিক কার্যকর

প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন
৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৫৮

পৃথিবীর সকল মানুষের মেধা, জ্ঞান, শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গি একরকম হয় না। কিছু বিষয় আছে বিশেষ করে সবার শৈশব স্মৃতিতে কম-বেশি মিল থাকে। তেমনি আমাদের প্রজন্মের শিক্ষার্থী বন্ধুদের দেখা হলেই আলাপচারিতায় কিংবা স্মৃতিচারণে প্রথমেই চলে আসে স্কুলজীবনে স্যারের বেতের মার খাওয়ার মধুর শৈশব স্মৃতি। ছাত্র জীবনে স্যারের বেতের মার খাওয়া, নিলডাউন হয়ে থাকাসহ হরেক রকম শাস্তি কত যে খেয়েছি তার হিসেব নেই। তবে এগুলোতে তেমন একটা লজ্জা বা দু:খ আমরা এখনও পাই না। অদ্যাবধি আমরা এরুপ স্মৃতিকে সর্বোচ্চ আনন্দও সম্মানের সাথে স্মরণ করি। সেসময় এরকম শাস্তির ভ্যাকসিন না পেলে হয়তো আজকের সামাজিক মর্যাদার সুন্দর আলট্রাসনো রিপোর্ট বা যেধরনের সম্মানজনক পেশায় আছি সেই অবধি পৌছানো সম্ভব হতো না।

বিজ্ঞাপন

মুরব্বীরা বলতেন শিক্ষক যে জায়গায় মারে সেজায়গা দোযখের আগুন স্পর্শ করতে পারে না। বাবা-মা শিক্ষকের সাজা দেয়ার কথা শুনলে খুব খুশি হতেন। তারা ভাবতেন তাদের সন্তান স্যারদের সুনজরেই আছে। তবে আমাদের প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জন্য মার খেয়েছে বলে কোন নজির নেই। কোনো পড়া না বুঝলে শ্রদ্ধেয় স্যার সেটিকে অত্যন্ত সুন্দর ও সহজভাবে বুঝিতে দিতেন। এজন্য আমাদের কখনও মারেন নি। স্কুলে অনুপস্থিত থাকা, হাতের লেখা না নিয়ে যাওয়া, বাড়ির কাজ না করা (অংক না করা), নামাজ না পড়া, স্কুল পালানো, দেরিতে স্কুল আসা, হাতের নখ না কাটা, চুল না কাটা ইত্যাদি কোনো একটির কারণে মার খেতে হতো। সময় পাল্টেছে এখন ১৯৯৩ সালে শিক্ষকতায় আসার পর মাঝে মধ্যে টিভিতে বা পত্রিকায় দেখা যেত শিক্ষক নামধারী কিছু ব্যক্তি অহেতুক কারণে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীকে শিকল দিয়ে বেধে মারছে, ব্লেড দিয়ে ত্বক কেটে মরিচের গুড়া দিয়ে শিক্ষার্থীকে কষ্ট দিচ্ছে এমনকি মারের কারণে শিক্ষার্থীর চোখ নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে ইত্যাদি অনেক ঘটনা প্রকাশিত হওয়ায় জনমনে অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আবার দেখা যায় কিছু অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সামান্য মানবিক শাসনেও শিক্ষকের ওপর চড়াও হচ্ছে কিংবা শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করছে। অনেক সময় প্রশাসনও তদন্ত করতে গিয়ে দেখছেন শিক্ষকের কোনো দোষই নেই যা হয়েছে তা শিক্ষার স্বার্থে কিংবা শিক্ষার্থী যেহেতু সন্তানতূল্য তাই শিক্ষক মহোদয় যা করেছেন তা যথার্থই। কিন্তু অভিযোগকারি মোটেই সন্তুষ্ট নয়। এমন ক্ষেত্রে বিষয়গুলো আদালত পর্যন্ত গড়াচ্ছে। এ ধরণের অহেতুক অভিযোগে প্রশাসন বা আদালত সবাই বিব্রতবোধ করছে।

একটি বাস্তব ঘটনার কথা বলছি- একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান কোনো এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের ভ্যাকসিন প্রদান করার সময় যেহেতু কামিজের হাতা গোটাতে হয় সেখানে পুরুষ শিক্ষক কিংবা কোন ছেলে শিক্ষার্থী থাকা সমীচীন নয়। কিন্তু একজন ছেলে সেখানে থাকবেই। তাকে কয়েকবার বলার পরও সে উক্ত স্থান ত্যাগ না করায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক মহোদয় উক্ত শিক্ষার্থীকে সরানোর জন্য সামান্য শাসন করেন। কিন্তু সেই শিক্ষার্থী ও তার ক্ষমতাধর পিতা ইউএনও বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন। ইউএনও সাহেব তদন্তে এরূপ ঘটনা জানতে পেরে অভিভাবককে শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে অনুরোধ করেন। কিন্তু অভিভাবকের সাফ কথা প্রধান শিক্ষকের শাস্তি না হলে তিনি আদালতে যাবেন।

শিক্ষকসহ যে কোনো বিবেকবান মানুষ শিক্ষার্থীদেরকে অহেতুক আহত করার মতো শাস্তি প্রদান সমর্থন করেন না। আবার একজন অভিভাবক হিসেবে মনে করি আমার সন্তানের ভুল শোধরানোর জন্য যেমন শাসন করার আমার অধিকার আছে ঠিক ততটুকু অধিকার আমার সন্তানের ওপর তার শিক্ষকেরও আছে। শিক্ষককে এটুকু অধিকার, সম্মান, মর্যাদা এবং দায়িত্ব না দিলে তিনিই বা কিভাবে আমার সন্তানকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে, একজন সত্যিকারের মানবিক মানুষ হিসেবে এবং সৃষ্টি কর্তার প্রতি একজন আনুগত্যশীল ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলবেন। এসবকিছু একেবারেই অতি সাধারণ বোধ, চেতনা এবং চিন্তার মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়। তবে কোনে কিছুর অতিরিক্ত মাত্রা নি:সন্দেহে পরিহারযোগ্য। ইংরেজিতে একটি কথা আছে- Excess of everything is very bad.

ব্রিটেনে ১৯৭০ সালের সময়টাতে ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডের স্কুলগুলিতে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তিদান করা বৈধ ছিল। সে সময় অনেক ব্রিটিশ অভিভাবক এবং শিক্ষকই মনে করতেন যে ছেলেমেয়েকে ‘মানুষ’ করতে হলে কিছুটা শাসনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু ইউরোপের স্কুলগুলিতে এটা তখন অবৈধ। ১৯৭৬ সালে গ্রেস ক্যাম্বেল (শিক্ষার্থী অ্যান্ড্রু ক্যাম্বেলের মা) এবং আরেকজন স্কটিশ ছাত্রের মা জেন কোস্যান্স আদালতে শিক্ষার্থীদের বেত দিয়ে শাসন করার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে ইউরোপের আদালত ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক রায় প্রদান করে। এই রায়ে ব্রিটেনের সব সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থীদের মারধর নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯৮০’র দশকের এক জরিপে জানা যায়, প্রতি তিনজন ছাত্রের মধ্যে একজন এবং প্রতি ১২ জন ছাত্রীর মধ্যে একজন স্কুলে পিটুনির শিকার হয়েছে এবং জনপ্রতি গড়ে ১৪ দিন ধরে তারা শিক্ষকের মার সহ্য করেছে। বিশ্বের মধ্যে সুইডেন প্রথম ১৯৭৯ সালে সেদেশে শিক্ষার্থীদের দৈহিক শাসন নিষিদ্ধ করে আইন পাস করে। বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে এক পরিপত্রের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬৭টি দেশে (২০১৬) শিক্ষার্থীদের দৈহিক শাসন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরাও এ ধরণের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। কারণ শাসনের ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক বা শারীরিক ক্ষতের সৃষ্টি হোক যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে ভীতি, ঘৃণা বা অনাগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমে অকালে শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি টেনে আনুক তা কারো কাম্য নয়।

তবে স্কুলে শিশুরা ইচ্ছাকৃত ভুল করলে শারীরিক শাস্তির পরিবর্তে মোটিভেশনাল স্পীচ, আদর সোহাগ-এর পাশাপাশি শাস্তি হিসেবে চক বোর্ড মুছা, গাছে পানি দেয়া, কবিতার কয়েক লাইন মুখস্থ বলা, দুই পাতা হাতের লেখা আনা, দুইটা অংক কষে আনা ইত্যাদির মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক শাস্তি দেয়া যেতে পারে। পরের দিনের দৈনিক সমাবেশে জাতীয় পতাকাকে সালাম/শপথ বাক্যপাঠ/সুরা পাঠ/জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া/ নামতা বলা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের শাস্তি শিশুদের বয়স/শ্রেণি বিবেচনায় দেয়া যেতে পারে। গত ৩/৫ মাসে শিক্ষার্থীরা ভুলের জন্য কি ধরণের শাস্তি পেয়েছে তা অভিভাবক সমাবেশে শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ না করে অবহিত করলে সকলের জন্য বিদ্যালয়ের নিয়ম-শৃঙ্খলা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকতে এবং বাস্তবায়নে সহজ হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ভার্কি ফাউন্ডেশনের গবেষণা মতে শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকদের সম্মান জানানোর গড় স্কোর ৩৫। চীনের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের বেশি শ্রদ্ধা করে এবং তাদের স্কোর ৮১। শিক্ষকরা সবেচেয়ে বেশি মর্যাদা পান এমন শীর্ষ ১০টি দেশ হচ্ছে- ১. চীন, ২. মালয়েশিয়া, ৩. তাইওয়ান, ৪. রাশিয়া, ৫. ইন্দোনেশিয়া, ৫. দক্ষিণ কোরিয়া, ৭. তুরস্ক, ৮. ভারত, ৯. নিউজিল্যান্ড, ১০. সিঙ্গাপুর। গবেষণায় দেখা গেছে, চীন, ভারত বা ঘানায় এখনও পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের শিক্ষক হতে উৎসাহিত করে। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষকদের ভিআইপি, ফ্রান্সে আদালতে শিক্ষকদের বসতে চেয়ার দেয়া হয়, কোরিয়ায় শিক্ষকদের মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যেসব সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা বেশি, সেখানে শিক্ষার্থীরা ভালো শিক্ষা পায়।

শিক্ষকের মর্যাদার বিষয়টিও নিশ্চিত করার দায়িত্ব শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিশ্ববাসী সকলের। এমনকি শিক্ষকের নিজেরও দায়িত্ব রয়েছে তার মর্যাদা রক্ষা করে চলা। প্রেসিডেন্ট ওয়াইজম্যানের মৃত্যুর পর বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনকে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে গবেষণাকেই জীবনের ব্রতজ্ঞানে বেছে নিয়েছেন। আইনস্টাইনের ভাবনায় গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতেই আনন্দ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা মূল্যহীন। আমরা শিক্ষকরাও যদি এমন করে ভাবতে পারি, তাহলে নিজেরা জ্ঞানের নতুন পথ সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের মেলে ধরতে পারি এবং শিক্ষার্থীদের সম্মুখে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে রেখে যেতে পারি।

মেসোপোটমিয়ান বীর গিলগ্যামেশ অমর হতে চেয়েছিলেন। তিনি অনেক সাধনার পর নদীর ধারে এক সাধুর দেখা পেয়ে তার বাসনা জানালেন। সাধু বললেন এই খরস্রোতা নদীতে ডুব দিয়ে একটি ফুল তুলে আনতে হবে। শত প্রতিকুলতার মাঝেও তিনি ফুলটি নিয়ে আসলেন। এবার সাধু বললেন ফুলটি কলার পাতায় রেখে গোসল সেরে এসে ফুলটি খেলেই অমরত্ব লাভ করা যাবে। তবে ফুল রেখে যাওয়া থেকে গোসল সেরে এসে খাওয়া পর্যন্ত পিছনে তাকানো যাবে না। তা হলে অমরত্ব লাভ হবে না। তিনি যখন ফুলটি কলার পাতায় রাখেন তখনই ফুলের দিকে একটি বড় বিষাক্ত সাপকে আসতে দেখেন। তারপরও সাধুর কথামতো গোসলে নেমে পড়েন । ফুলটি হয়তোবা সাপে খেয়ে ফেলেছে এমন ভাবনায় নিজেকে সামলাতে না পেরে পিছনে তাকামাত্র দেখতে পেলেন সাপ ফুলটি মুখে তুলে নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিল। অসহনীয় দু:খ কষ্ট নিয়ে সাধুর নিকট এসে বললো যা ঘটে গেল তা কোনোভাবেই তিনি মানতে পারছেন না। তার দীর্ঘদিনের সাধনার সমাধি হলো। সাধু বললেন শুধু মানুষ নয়, প্রত্যেক সৃষ্টিকেই মরতে হবে। তবে মানুষকে অবশ্যই পিছনে ফিরে তাকাতে হবে। তাহলে মানুষ তার অতীতের কর্মাকাণ্ডে অনেকগুলো ভুল দেখতে পাবে। সে ভুলগুলো ভবিষ্যতে যাতে না হয় সে ব্যাপারে মানুষ সতর্ক হতে পারবে। আর যে ভালো কাজগুলো অতীতে করেছে তা থেকেও মানুষ প্রেরণা পাবে। শুধুমাত্র অতীতের ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়েই মানুষ সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌছাতে পারে তথা অমরত্বের সন্ধান পায়।

প্রিয় পাঠক উপরোক্ত গল্পটির সারকথা অনুধাবন করে আপনি একজন শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক হিসেবে যদি একটু অতীতে বা পিছনে ফিরে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন গ্রীক বীর আলেকজান্ডার তার শিক্ষক এরিস্টটল সম্পর্কে বলেছেন- To my father, I owe my life, to Aristotle the knowledge of how to live worthily. কবি কাজী কাদের নেওয়াজ তার শিক্ষাগুরুর মর্যাদায় বাদশা আলমগীর কিভাবে তার সন্তানকে শিক্ষকের প্রতি আনুগত্যশীল হতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছেন। আবার পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালে কিংবা হালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজর রাখলে হরহামেশাই শিক্ষকদের হেনস্তার খবর লাঞ্ছনার খবরও দেখতে পাওয়া যায়। গিলগ্যামেশের সেই সাধু বাবার পরামর্শ মতো ভালো-মন্দ দুটোই দেখা যাবে। এ থেকে গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা করা যাবে, প্রয়োজন হবে না বেতের। একটা সময় ছিলো যখন রাস্তা দিয়ে শিক্ষক হেঁটে গেলে আশেপাশের মানুষজন সম্মানার্থে সাবধান হয়ে যেতো। কোনো আচার-আচরণে শিক্ষক যেন কষ্ট না পান, বা তাকে যেন কোনো ধরনের অসম্মান করা না হয় তা নিয়ে তার শিক্ষার্থীরা তটস্থ থাকতেন। এ ধারণা গুলো থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে পারস্পরিক স্নেহ আর শ্রদ্ধায় রোপিত হবে একটি নতুন সভ্যতার বীজ যা কাল থেকে কালান্তরে টিকে থাকবে। অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় হিসেবে বিস্তৃতি লাভ করবে পৃথিবী টিকে থাকার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত।

কোনো সন্দেহ ছাড়াই আমরা এখন বলতে পারি, শিক্ষককে মর্যাদা দেয়া বা সম্মান করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব যা কোনো দেশের শিক্ষার মানের জন্য জরুরী। পরিবর্তিত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এবং শিক্ষকতাকে একটি চ্যালেজ্ঞিং পেশা বিবেচনায় বেত ছাড়াও শিক্ষকগণ তাদের অর্জিত মেধা, দক্ষতা ও পারদর্শিতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ফলপ্রসুভাবে জ্ঞান দান করবেন তাতে কোনো সন্দেহে নাই। শিক্ষকের নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক গুণাবলি, মেধা, চিন্তা ও কাজে আন্তরিকতা, সৎ এবং নির্লোভ ব্যক্তিত্বের সাথে বেত মানানসই নয়। শিক্ষকের আশীর্বাদপুষ্ট হাত দু’টি অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের মাথায় বুলিয়ে দিলেই তা শিক্ষাদানে বেতের চেয়ে সহস্রগুণ কাজ দেবে। একজন শিক্ষক তার অন্তর্দৃষ্টি ও জ্ঞান ভিত্তিক চিন্তার আলোকেই শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলেন। শিক্ষার্থীকে শিক্ষার মহাসড়কে তুলে দেবার দায়িত্ব শিক্ষকের পাশাপাশি একটি যুগোপযোগী পাঠ্যপুস্তক ও পাঠ্যক্রম, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সূধীজনসহ সংশ্লিষ্ট সবার। শিক্ষক শব্দের পূর্ণরূপ (শি) শিষ্টাচার,(ক্ষ) ক্ষমা ও (ক) কর্তব্যপরায়ণতা। এই তিন গুণ যিনি আয়ত্ত করেছেন, তিনিই শিক্ষক। আর এমন শিক্ষকই গড়ে তুলতে পারেন সত্যিকারের মানুষ, যারা প্রকৃতই জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে পরিগণিত হবে। মানব সভ্যতায় শিক্ষাব্যবস্থার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছেন শিক্ষক আর সেই শিক্ষকের মর্যাদার সাথে টিকে থাকবে সভ্যতা। একটি সভ্য সমাজের মানুষের মধ্যে ছাড় ও সমঝোতার ভিত্তিতে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে যার কারিগর এই মহান শিক্ষক।

লেখক: অধ্যক্ষ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম

সারাবাংলা/এএসজি

প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন মত-দ্বিমত শিক্ষক শিক্ষকের আশীর্বাদ শিক্ষাদান

বিজ্ঞাপন

লন্ডনের পথে খালেদা জিয়া
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৩৯

আরো

সম্পর্কিত খবর