তামিম ফিরেছেন, সমস্যা কি মিটছে?
৮ জুলাই ২০২৩ ১১:৪৯
প্রধানমন্ত্রী ডাকলেন। গণভবনে তামিম সস্ত্রীক দেখা করলেন। কথা বললেন। গণভবন থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমাণ মিডিয়া কর্মীদেরকে জানালেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টাচ্ছেন। অবসর প্রত্যাহার করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছেন। তবে এখনই নয়, দেড় মাস বিশ্রামের পর এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে খেলবেন তিনি।
তামিমের এই ঘোষণার পর ২৮ ঘণ্টার ক্রিকেট ঝড় থেমেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে অপ্রত্যাশিতভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার কথা বলেছিলেন তামিম ইকবাল। সংবাদ সম্মেলনে তার কান্না, অশ্রুসজল চোখ, দেশবাসীকে মর্মাহত করেছিল। দেশজুড়ে ক্রিকেট ভক্তরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তামিম ভেঙে কিছু বলেননি, কিন্তু বিশ্বকাপের তিন মাস আগে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের মাঝখানে তার এই হঠাৎ বিদায়ের ঘোষণার পেছনে যে গুরুতর কারণ রয়েছে সেটি আঁচ করেছিলেন সবাই।
কেন মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহ,তামিমদের ক্ষোভে, দুঃখে, বেদনায় এভাবে বিদায় নিতে হয়, সে প্রশ্নটি বড় হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়।
কারো কারো প্রশ্ন তামিম কি পেশাদারিত্বের পরিচয় দিলেন সিরিজের মাঝখানে পদত্যাগ করে? বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতের কাছাকাছি থাকলে তারা হয়তো বুঝতে পারতেন মাশরাফি, রিয়াদ, মুশফিক, তামিমরা কোন পরিস্থিতিতে এমন বিদায় জানাতে বাধ্য হন? কেন তারা বিদায় নেওয়ার কথা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন না তাদের অভিভাবক বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে। টস করতে গিয়ে মাশরাফি কেন বিদায়ের কথা বলেন, টেস্টে ভালো পারফরমেন্সের পরেও রিয়াদ কোন দুঃখে গুডবাই বলেন, মুশফিক সেঞ্চুরির পরও কেন বলেন আর খেলবেন না ওই ফরমেটে? এসব জানলে কেউ কেউ এই প্রশ্নগুলো আর করতেন না।
মাশরাফি বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট বক্সে খেলোয়াড়দের কাপড় খুলে সমালোচনা করা হয়। তামিম বলেছেন, আপনাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর যদি আপনি বোঝেন যারা দায়িত্ব দিয়েছেন তারা চান না আপনি এই দায়িত্বটি পালন করেন কিংবা তারা সরিয়ে দেওয়ার জন্য কলকাঠি নাড়চ্ছেন তাহলে আপনি কী করবেন? এসবের নেপথ্য কাহিনী জেনে তবেই খেলোয়াড়দের দায় দেওয়া উচিত।
এই যে তামিম হঠাৎ করেই বিদায়ের কথা বলেছিলেন তাতে বিজ্ঞাপন চুক্তিগুলোর জন্য তার কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হত সে অংকের ফিগার জানলেও বিস্মিত হবেন অনেকে। আর দীর্ঘদিনের পেশা থেকে আয়ের পথটি নিজের হাতে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি একজন খেলোয়াড় কোন পরিস্থিতিতে নেন সেটি জানলে অনেকেই খেলোয়াড়দের দোষ দেবেন না। নীতি নৈতিকতার কথা বলবেন না।
তামিমের হঠাৎ বিদায়ের ঘোষণা আমাদের ক্রিকেটের সাংগঠনিক দুরবস্থার বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে। অসুস্থ পরিবেশের কথা জানিয়েছে। বোর্ডে ২৫ জন ডিরেক্টর কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সামর্থ্য, সক্ষমতা কারোর ছিল না। বিসিবি অনেকটা ওয়ান ম্যান আর্মি বোর্ড। সব ঘটনাতেই প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনকেই সক্রিয় হতে হয়। তিনি আবার প্রায়ই কথা বলতে গিয়ে সরল মনে বেশি কথা বলে ফেলেন। সুযোগসন্ধানী কোন কোন মিডিয়া সেসব কথা নিয়ে আগুনে বাতাস দেয়। এই যেমন এবার ফিটনেস নিয়ে তামিমের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পাপন যা বলেছিলেন তাতে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়। পাপন বলেছেন তিনি একজন সাংবাদিকের সঙ্গে জাস্ট কথা বলেছেন এটি যে ছাপিয়ে দেওয়া হবে তা তিনি ভাবেননি। মিডিয়াকে আগ বাড়িয়ে সব কথা বলতে নেই। চরম মূল্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রথম পোস্টার বয় মোহাম্মদ আশরাফুল সেটি বোধহয় বুঝেছেন সবার চেয়ে বেশি।
মিডিয়া ম্যানেজমেন্টে বোর্ড সভাপতি এবং বোর্ডের অন্যদের যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। অনেকেই ভিতরের নানা খবর নানাভাবে মিডিয়ায় যোগান দেন। কখনো সংবাদের তথ্য হিসেবে, কখনো অশুভ এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশে। এবার যেমন বোর্ডের একজন একটি চ্যানেলের সিনিয়র এক সাংবাদিককে নাকি বলেছিলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তামিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে যেতে বাধ্য হবেন। দুইয়ে দুইয়ে চার যখন মিলে গেল তখন সবাই বুঝলেন তামিমের এই সরে যাওয়ার পিছনে বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে। সে কারণেই পুরো দেশ জুড়ে ক্রিকেটভক্তরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
এসব এখন অতীত। বর্তমানের সত্যটি হচ্ছে তামিম আবার ফিরে এসেছেন। খেলবেন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে। তামিমের ফিটনেস নিয়ে কথা উঠেছে। সাকিব-তামিমদের মতো প্লেয়াররা চাইলে ফিটনেস ফিরে পেতে ১৫-২০দিন লাগে না। ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জেতা পাকিস্তান দলের অধিনায়ক ইমরান খানতো পুরো ফিট ছিলেন না। ১৯৯৬ সালে পুরো ফিট ছিলেন না শ্রীলংকার অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা। কিন্তু তারা অভিজ্ঞতার আলোকে দলকে যথাযথ নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন। গেল বছর মিচেল স্টার্ক বলেছিলেন, পুরো ফিট হয়ে খেলতে হলে তার পাঁচ দশটা টেস্টও খেলা হতো না, কিন্তু তিনি খেলেছেন ৭৫টি টেস্ট।
ইনজুরির গুরুতর সমস্যা না থাকলে অভিজ্ঞদের জন্য ফিটনেস খুব বড় সমস্যা নয়। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে তামিমকে আনফিট মনে হয়নি। তামিম চাইলে এশিয়া কাপের আগেই পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবেন বড় মঞ্চের জন্য। হঠাৎ বিদায় এবং আবার ফিরে আসায় তামিমের জন্য এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ কঠিন পরীক্ষার ক্ষেত্র হয়ে গেল। ভালো না করতে পারলে মাথা নিচু করে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতে হবে। তবে বড় খেলোয়াড়রা এসব ক্ষেত্রে দারুণভাবে কামব্যাক করেন। তামিমও দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করতে পারেন, যেমনটি করেছিলেন এর আগে এশিয়া কাপে টানা চারটি ফিফটি মেরে। মেসি ফিরে এসে আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন কোপা আমেরিকা এবং বিশ্বকাপ। কোচ স্ক্যালোনি তাকে নিজের মত খেলার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।
তামিম কে কী কোচ সেরকম স্বাধীনতা দেবেন? এশিয়া কাপে, বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে অধিনায়ক সে তামিম বা যে কেউ হোক না কেন তাকে তার মত করে দল পরিচালনার স্বাধীনতা দিতে হবে। ক্রিকেটে নির্বাচক, কোচ এবং অধিনায়কের কাজের ক্ষেত্রটি একদম পরিষ্কার। বিভিন্ন দলে সে প্র্যাকটিসটিই আছে। দল নির্বাচনের দায়-দায়িত্ব নির্বাচক প্যানেলের। তাদের মতামত জানাতে পারেন, পরামর্শ দিতে পারেন কোচ এবং অধিনায়ক। কোন অবস্থাতেই খবরদারী নয়।
কোচের কাজ তিনটি। এক-তিনি দলের শৃঙ্খলার দিকে নজর রাখবেন। দুই-তিনি খেলোয়াড়দের টেকনিক্যাল ফাইন টিউনিং এর পরিচর্যা করবেন। তিন-খেলার স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ঠিক করবেন। এটি কোচের কাজের সীমানা।
কোচের খেলার গেম প্ল্যান অনুযায়ী একাদশ নির্বাচন এবং মাঠে দল পরিচালনার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব অধিনায়কের। কোচের খবরদারী এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত নয়। কোচের পরামর্শ সহযোগিতাকে অধিনায়করা স্বাগত জানাতে পারেন কিন্তু খবরদারী মেনে নিতে পারেন না। ক্রিকেট অন্য খেলা থেকে একটু ভিন্নরকম গেম যেখানে কোচ নয় অধিনায়কের ভূমিকাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু আমাদের দেশের মতো দেশগুলোতে সমস্যা এটিই-কোনো কোনো কোচ সব ক্ষেত্রেই খবরদারীর চেষ্টা করেন। হাথুরু সিংহে এক্ষেত্রে জটিল এক চরিত্র। যে কারণে তিনি যেখানেই যান সেখানেই ঘাপলা বাধে। তার ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্য তিনি দলের দায়িত্ব নিয়েই অধিনায়কদের কোণঠাসা করেন। অপদস্থ করেন দলের অন্যদের সামনে। সিনিয়রদের চাপের মধ্যে রাখেন। বাংলাদেশে প্রথমবার এসেও তিনি এই কাজটি করেছেন। বাংলাদেশকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে শ্রীলংকা গিয়েও তিনি একই ঘটনা ঘটিয়েছেন। দলের হারমনি নষ্ট করেছেন । ফলে সম্ভাবনামায় শ্রীলংকা দলটি এশিয়া কাপে, বিশ্বকাপে বাজে সম্ভাবনাময় করে। মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিকের মতোই অধিনায়ক ম্যাথিয়ুসকেও ক্ষোভের মধ্যে বিদায় নিতে হয়েছে। লঙ্কান অধিনায়ক কোচের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
শ্রীলংকা বোর্ড অধিনায়কের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে কোচ হাথুরু সিংহেকে বরখাস্ত করে। বাংলাদেশ দলে আবার এসে হাথুরু বলেছেন সময় অনেক পেরিয়েছে তিনি আর আগের মত নেই। এখন অনেক অভিজ্ঞ। হ্যাঁ, তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন । আগে সরবে অধিনায়ক, সিনিয়রদের কোণঠাসা করতেন এবার নিঃশব্দে একই কাজ করছেন বলে ভেতরের খবর। হাথুরুকে তার কাজের সীমানায় না রাখতে পারলে এশিয়া বা বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যে স্বপ্ন দেখছে সেটি শ্রীলংকার মত দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে।
তামিম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন অনেক কিছু বলার আছে কিন্তু তিনি বলছেন না। সংবাদ সম্মেলনে বা মিডিয়াকে তিনি বলেননি কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে তিনি কি নেপথ্যের কারণগুলো বলেছেন? ১৬ বছর জাতীয় দলকে সার্ভিস দেওয়ার পর বিশ্বকাপের তিন মাস আগে একটা সিরিজের মাঝখানে কেন তাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলো? কী এমন গুরুতর সমস্যা ছিল? কেন বিভিন্ন অধিনায়ককে, সিনিয়রদের এভাবে খেলা থেকে বিদায় নিতে হয়? প্রধানমন্ত্রী কি সেগুলো শুনেছেন? তিনি কি সমস্যাগুলো আমলে নিয়ে তা সমাধানের উদ্যোগী হবেন? যদি না হন তাহলে এমন ঘটনা আরও ঘটবেই। তামিমকে মাঠে ফিরিয়েও কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের দেখা মিলবে না।
প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই ধন্যবাদ। কারণ ক্রিকেটের একটি জটিল সমস্যার সমাধান হয়েছে তার উদ্যোগে। এর আগেও ক্রিকেটে বেশ কয়েকটি সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীকেই এগিয়ে আসতে হয়েছে। এটি ক্রিকেটের জন্য ভালো ব্যাপার নয়। ক্রিকেট পরিচালনার জন্য ডাইরেক্টরেটদের বিশাল বহর রয়েছে। স্বয়ং সভাপতি রয়েছেন । নানান ধরনের কমিটি রয়েছে। তারা থাকতে প্রধানমন্ত্রীকে যদি সমস্যার সমাধান করতে হয় তাহলে এই বোর্ডের এত হর্তাকর্তার দরকার কী? ক্রিকেট পরিচালনায় বিশাল বহরের এই বোর্ড পরিচালকদের যোগ্যতা নিয়েই তো তখন প্রশ্ন উঠছে।
আগের দিন গভীর রাতেও বোর্ড সভাপতি মিডিয়াকে জানান ফোন করে, এসএমএস পাঠিয়ে, তামিমের ভাই নাফিস ইকবালকে খবর দেওয়ার পরও তামিম তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। এর আগে মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক বিদায় বলার সময়ও তাকে কিছু জানাননি। বোর্ড সভাপতি একবারও কী ভেবেছেন সন্তানের মত ক্রিকেটাররা তাকে কেন একজন অভিভাবক হিসেবে মনে করেন না? সভাপতি যোগাযোগ করতে পারেননি তামিমের সঙ্গে, কিন্তু মাশরাফি ঠিকই যোগাযোগ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে তামিমকে নিয়ে গেছেন। বোর্ড সভাপতি মাথা ঠাণ্ডা করে ভাববেন কী, এতে তার এবং বোর্ডের পরিচালকদের বিশাল বহরের সম্মান, মর্যাদা, অস্তিত্ব, গুরুত্ব কোথায় গিয়ে ঠেকল? মাশরাফি যেটি করতে পারলেন তামিমের সঙ্গে সেই যোগাযোগটি তিনি এবং বোর্ডের অন্য কেউ করতে পারলেন না? যে সমস্যাটি সমাধান করা তাদের দায়িত্ব এবং এটি তাদেরই কাজ সেটি করতে হলো দেশের প্রধানমন্ত্রীকে?
এরপর ক্রিকেটারদের অভিভাবক হিসেবে এবং বোর্ডের কর্তা হিসেবে তারা নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জা পাবেন কিনা এটি একান্তই তাদের ব্যাপার। তবে জনগণের কাছে কিন্তু ভিন্ন বার্তা গেল।
প্রধানমন্ত্রী সব শুনেছেন। এখন কি একটি সিরিয়াস তদন্ত হবে? কেন এমন ঘটনা বারবার হচ্ছে? এতে কোচ হাথুরু সিংহের ভূমিকা কী? বোর্ডের যে কর্তা একটি চ্যানেলের সাংবাদিককে বলেছিলেন ১৫ দিনের মধ্যেই তামিম সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হবেন সেটি তিনি কিসের ভিত্তিতে বলেছেন? বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের দূরত্ব তৈরিতে কাদের ভূমিকা রয়েছে? অধিনায়ক, সিনিয়র খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে আড়ালে কারা কলকাঠি নাড়েন? খেলোয়াড়রা কেন এমন করেন? তাদের কি পেশাদার আচরণের অভাব রয়েছে? বোর্ড সভাপতির বক্তব্য অনুযায়ী তারা কি আসলেই ইমোশনাল ডিসিশন নেন? এমন খেলোয়াড়দের তো তাহলে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেওয়াই ঠিক নয়। এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে এবং তামিম ইকবাল যা বলেননি সেসব বিষয় তদন্ত করে,বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। খেলোয়াড়রা অনিয়ম করলে, অপরাধ করলে তাদের সতর্ক করা হয়, জরিমানা করা হয়, দল থেকে বাদ দেওয়া হয়, ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়।
যেসব ঘটনা একের পর এক ঘটছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বার্থে সে সব ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। তদন্ত শেষে এসব কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে তিনি বোর্ড কর্মকর্তা, কোচ, কোচিং স্টাফ,নির্বাচক কিংবা খেলোয়াড় যেই হন না কেন। অন্য কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী ক্রিকেটের এ ধরনের কোনো সমস্যা সমাধান করতে উদ্যোগী হয়েছেন সেটি শোনা যায় না। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়াবান্ধব জননেত্রী বলেই তিনি উদ্যোগী হয়ে সমস্যার সমাধান করে দেন। কিন্তু এ ধরনের সমাধান একেবারেই কসমেটিক ট্রিটমেন্ট। এতে ক্ষতের নিরাময় হয় না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মান্য করে আকরাম খান, তামিমরা তাদের দায়িত্বে ফিরে আসেন। সাময়িক সমাধান মিলে। কিন্তু দুষ্টচক্রের বিনাশ না হওয়ায় নেপথ্যে ক্রিকেটের ক্ষত আরও দগদগে হয়। বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশের ক্রিকেটে মেজর সার্জারি জরুরি। কালপ্রিটদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিতে পারলে ক্রিকেটে সুস্থ পরিবেশ তৈরি হবে না। সু-সংস্কৃতি গড়ে উঠবে না।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, ক্রীড়া বিশ্লেষক
সারাবাংলা/এসবিডিই/আইই