শেখ হাসিনা: তাকে নিয়ে গর্বিত
২১ আগস্ট ২০২২ ১৬:১৬ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২২ ১৬:৩০
নেতৃত্বের বন্ধ্যাত্ব ঘুচতো না, যদি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় একজন শেখ হাসিনা বেঁচে না যেতেন। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অপশক্তির ধারাবাহিক আক্রমণ হতে বেঁচে গিয়েছিলেন। এরপর দেড়যুগের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের আলেখ্য জানান দেয়, শেখ হাসিনা বিশেষ কেউ। তিনি অনন্যসাধারণ কেউ।
বেঁচে গিয়েছিলেন বলেই শেখ হাসিনার মধ্যে বাংলাদেশ একজন বিশ্ববরেণ্য নেতার পরিণত রূপ দেখতে পেল। বঙ্গবন্ধুর পর ৫১ বছর বয়সী বাংলাদেশের প্রাপ্তি হিসাবে শেখ হাসিনার নেতৃত দেওয়ার সক্ষমতাকে দেখা যেতে পারে বলে অনুমিত হয়। তাকে না নিয়ে মুখরিত রাজনীতিকে উপভোগ করা যায় না। তাকে অতি গুরুত্ব দিয়ে গবেষণায় সিক্ত হয়ে ধারাভাষ্য দেওয়ারও সময় তাই হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক আলোচনায় মত্ত হতে গিয়ে প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক, অমর একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরীর কথা মনে পড়ে। যিনি আমাদের ছেড়ে খুব নিকট সময়ে গ্রহান্তরীত হয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সেদিন শেখ হাসিনা মারা যাননি এটি বাংলাদেশের জন্য সৌভাগ্য। যদি মারা যেতেন তাহলে বাংলাদেশ এখন একটি তালেবানিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাকে পরিণত হতো। এটা একটা মৃত্যুকূপের দেশ হতো তথা বাংলাদেশ হতো কান্ট্রি অব ডেথ। রক্তাক্ত পরিস্থিতি চলত এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে মার্কিন সৈন্যরা এসে তারা যেমন ঘাঁটি গেড়েছে আফগানিস্তানে, ইরাকে এরকম এসে ঘাঁটি গাড়ত। মার্কিনিরা ঘাঁটি গাড়লে সেখানে রাশিয়া-চীন তারাও নিষ্ক্রিয় থাকত না। বাংলাদেশ একটা আন্তর্জাতিক চক্রান্তের রণক্ষেত্রে পরিণত হতো।’
গাফফার চৌধুরী আমার মনের কথাগুলোকে তার হৃদয় ক্যানভাসে অঙ্কিত করে করুণ সুরে বলেছিলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন দৈবক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করতে হয়েছে। এখনও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হননি। এ অবস্থায় ২১ আগস্ট আমাদের জাতীয় জীবনে ১৫ আগস্টের পরে আরেকটি বিরাট কলঙ্কের ছাপ এঁকেছে। এ সময় বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ছিলেন। এই ২১ আগস্ট কোনো নতুন ষড়যন্ত্র নয়। এটা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ৩রা নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় এই ২১ আগস্ট; এটি আমাদের বুঝতে হবে। ১৫ আগস্ট যে জন্য নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড হয়েছিল, একই কারণে ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ড হয়েছে। সেদিনও উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে তার পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিশিষ্ট নেতাদের হত্যা করে বাংলার স্বাধীনতার লক্ষ্যটাকে নষ্ট করে দেওয়া, এর ভিত্তিটাকে নষ্ট করে দেওয়া।’
ইতিহাসের এমন সত্যটার ধারাভাষ্য শোক কে শক্তিতে নিয়ে যায়, অন্তত যারা আমরা নিয়মিত কলম না ধরে মাে ময়দানের রাজনীতিটা করি।
এই তো সেদিন ১৪ আগস্ট। রাজধানীর একটি সভায় বললাম, ‘দুর্ভিক্ষ সৃষ্টিসহ নানা কৌশলের’ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ক্ষেত্র কারা তৈরি করেছিল, অনুসন্ধানী মন কি উত্তর দেয়?
বঙ্গবন্ধুর খুনিরা ভাড়াটিয়াা; ফারুক, রশিদ, হুদারা ছিল স্রেফ ভাড়াটিয়া খুনি। মূল মাস্টারমাইন্ড পশ্চিমা পরাশক্তি, সঙ্গে পাকিস্তানের সে সময়ের প্রভাবশালীরা। অন্যদিকে বিদেশি শক্তি বাদ দিলে জিয়াউর রহমানই ছিলেন প্রধান হোতা। সন্দেহ নেই যে, তৎকালীন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র যারা করেছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র তৈরির পেছনে তাদেরও ভুমিকা ছিল। কিন্তু জিয়ার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নগ্ন হয়ে উন্মোচিত হয়, যখন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে নিজের নাম দিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়া শুরু করেছি। পরে যখন বলা হলো, আপনাকে কে চেনে? আপনি ঘোষণা দেওয়ার কে? তখন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ঘোষণা দিল!
এই যে জিয়াউর রহমানের উচ্চাভিলাষ, তখন থেকেই খন্দকার মোশতাক, বদরুল হুদা, রশিদ, ফারুক, ডালিম- তাদের মধ্যে একটা যোগসূত্র হল। তারই প্রমাণ হল ১৯৭৫ সালে, বঙ্গবন্ধু খুন হয়ে সিঁড়িতে পড়ে আছেন। তখন জিয়াউর রহমান সাড়ে ৪টার দিকে লাইট জ্বালিয়ে শেভ করছেন, তৈরি হবেন। কারণ তার মিশন কমপ্লিট হয়ে গেছে।
‘৭৫ এ ষডযন্ত্রের পেছনে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দারা ছিলেন, আমেরকিার ষড়যন্ত্র ছিল এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সামরিক সহচর, বেসামরিক সহচর, আওয়ামী লীগের একটি অংশ খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে এই ষড়যন্ত্রে ছিল। জিয়াউর রহমান কিছু দিনের জন্য মোশতাককে ক্ষমতায় দিলেন, খুনির দায়মুক্তি দিয়ে জিয়ার নির্দেশে পার্লামেন্টে পাঠাল। পরে জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করল।
বাংলাদেশ ভূরাজনীতির অংশ হয়ে পরাক্রমদের পছন্দের দেশ, তা মানতে অসুবিধে নেই কারও। আর তাদের যারা, বাংলাদেশ নিয়ে অতি ভাবনায় সঁপে দেয়, তারা বুঝতে পেরেছিল, হিমালয়ের মতো করে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের এক নেতা। যিনি দুর্বল নয়, এক সবল সাহসী ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার নেতা হয়ে বিচরণ করছেন।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর হয়ে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ওই সেই রাজনৈতিক অপশক্তির প্রেতাত্মারা বসে থাকেনি। তারা তাদের এক্সপ্রেসকে চলমান রাখে। জিয়াউর রহমান ছিলেন ১৯৭৫ সালের সেই পৈশাচিক খুনের নেপথ্যে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট্রের নেপথ্যে ছিলেন তারই স্ত্রী বেগম জিয়া ও পুত্র তারেক রহমান। কী বর্বর অসংস্কৃতি! আর এখন তো সেই শেখ হাসিনা এক দক্ষ চালক।
২০০৪ সালের শেখ হাসিনা আর আজকের শেখ হাসিনার মধ্যে অনেক তফাৎ। তখন ছিলেন তিনি আওয়ামী লীগের নেত্রী। আর এখন পুরো বাংলাদেশের আস্থার প্রতীক। একজন সত্যিকারের অভিভাবক। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। বাংলাদেশে নেতৃত্বের বন্ধ্যাত্ব ঘুচে গিয়েছে। যা কাম্য ছিল। তিনি একজন মা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নারী হিসাবেই তাকে দেখবার সুযোগ রয়েছে। সঙ্গত যুক্তিতে তার জীবনের ঝুঁকি আরেও বেড়েছে। হায়েনারা ওৎ পেতে অপেক্ষায় আছে।
আমি নিশ্চিতাকরে বলতে পারি, একজন বঙ্গবন্ধু দেশের সেবায় মাত্র দশ বছর পেলে তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালিই শুধু নয়, এই গ্রহের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক হয়ে থাকতেন। তা বুঝতে পেরেছিল পরাক্রমেরা। আধিপত্যবাদী শক্তি, সাম্রাজ্যবাদীশক্তিরা চেয়েছিল, বাংলাদেশে দুর্বল শাসক থাকুক। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল। এই দেশে তাই জিয়া ও এরশাদ বিদেশিদের পছন্দেই রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছিল। বেগম জিয়াকে অতি দুর্বল শাসক ধরেই তারা আশীর্বাদ দিয়েছিল। আমাদেরকে তাই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, কান্ট্রি ইজ নাও প্যাসেঞ্জার মেইল ট্রেন উইথ এফিসিয়েন্ট ড্রাইভার।
কষ্ট হয় একজন শেখ হাসিনার জন্য। এইতো সেদিন ১৫ আগস্টের শোকাবহ আর্তনাদের ভাষায় ধ্বনিত সুরে আমাদেরকেই বললেন, বঙ্গবন্ধুর লাশ যখন সিঁড়িতে পড়েছিল, দলের একটি কর্মীও কেন সাহস করে রুখতে যায়নি? প্রিয় জননেত্রী, ক্ষমা করে দিন আমাদের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের। কিন্তু, আপনার জন্য জীবন দেওয়ার মানসিকতায় পুনরায় যোদ্ধা হওয়ার ব্যক্তিসত্তা হয়ে বলছি, বাংলাদেশের জন্য আপনার নেতৃত্বকে সূর্য হিসাবে দেখেই একটা সকাল হয়। যে সকাল দিনকে পার করে সন্ধ্যা হয়ে রাত্রি হয়। আঁধারও স্বস্তির, যেন একটা ছায়া ঘিরে রেখেছে লাল সবুজের বাংলা কে। সেই ছায়ার নাম শেখ হাসিনা।
অযাচিত প্রেক্ষাপট তৈরির অন্তরায় হয়ে শেখ হাসিনার জন্য, প্রিয় দলের জন্য এবং বাংলাদেশের জন্য বাকি জীবনে লড়ে যেতে চাই। বাংলাদেশ এখন বড়াই করে বলতে পারে, আমাদের একজন নেতা আছে। দেশের বাইরে এলেও তারা বলে যে, তোমাদের তো একজন শেখ হাসিনা আছেন। হ্যাঁ, আছেন। আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত। বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক অপশক্তিকে ছাড় দেওয়া যাবে না। সেই কাজটিই করতে হবে। শেখ হাসিনাকে নিরাপত্তা দিতে হবে। কর্মী হয়ে বলতে পারি, বাংলাদেশের জনশ্রেণি সেই দায়িত্ব নেবে।
জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু! জয় শেখ হাসিনা!
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সারাবাংলা/একে/এএসজি
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন টপ নিউজ মত-দ্বিমত শেখ হাসিনা: তাকে নিয়ে গর্বিত