Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ

সজীব ওয়াফি
৮ মে ২০২২ ১৯:২০

রাজনৈতিক মাঠে এই মুহূর্তে কোন শক্তিশালী একক বিরোধী দল নেই। দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতিতে একটা বড়সড় শূন্যতা বিরাজমান। সংসদে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে কাগজ-কলমে থাকলেও আদতে তারা মহাজোটের শরিক। জোট-মহাজোটের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক জোট গণসংশ্লিষ্ট কর্মসূচি নিয়ে হাজির হলেও ব্যাপক অর্থে জনগণের কাছে পৌঁছতে পারেনি, এ জোটের কর্মসূচি জেলা শহর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। বিএনপি নাজেহাল হয়েছে বহু আগেই। নতুন করে দলীয় নানামুখী সিদ্ধান্ত ভাঙনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে; যদিও রোজার আগে থেকেই ‘ঈদের পরে আন্দোলন’ ইঙ্গিত করে সরকারকে বারবার হুমকি ধামকি দিচ্ছে দলটি। সে তুলনায় সংসদের বাইরে থাকা ছোট ছোট দলগুলোকে বরং ভালো ভূমিকায় দেখা গেছে। যাদের ভিতরে গণসংহতি আন্দোলন এবং নাগরিক ঐক্য অন্যতম, জাতীয় সরকারের ধারণা প্রকাশ করে বর্তমানে এই সারিতে যুক্ত হয়েছে আ স ম আবদুর রবের জেএসডি। নানান চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে আকাঙ্ক্ষা উদ্দীপনায় আত্মপ্রকাশ ঘটেছে চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে উত্থান হওয়া ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরদের বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদ। তাদের বয়স একেবারেই কম, বলতে গেলে শৈশবে।

বিজ্ঞাপন

বিরোধী ভূমিকায় ছাত্র সংগঠনগুলোর ভিতরে খুবেই অল্প সময়ে উল্লেখযোগ্য ক্যারিশমা দেখিয়েছে নুরুল হকদের ছাত্র অধিকার পরিষদ; আন্দোলন-সংগ্রামে বরাবরের মতো সোচ্চার ছিল ছাত্র ইউনিয়ন এবং গণসংহতি আন্দোলনের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গার দখল নিয়েছে রাষ্ট্রচিন্তা। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রচিন্তার ভিতর থেকে আবার রাজনৈতিক অংশের আত্মপ্রকাশ করেছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নামে। অন্যদিকে গেল বছরের শেষাশেষি গণসংহতি আন্দোলনের ৪র্থ জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন করতে একটা গুরুত্ব অনুভূত হলো। তারও পূর্বে মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, শহিদ মিনারে প্রতিবাদ কর্মসূচিসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালনে এক মঞ্চে একীভূত দেখা গেল রাষ্ট্রচিন্তা, গণ অধিকার পরিষদ নেতৃবৃন্দ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ এবং গণসংহতি আন্দোলনকে। যদিও নানান প্রশ্নের মুখোমুখি দু’একটি সভায় গণ অধিকার পরিষদ নেতৃবৃন্দ অনুপস্থিত ছিলো। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা অলিখিত জোটের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো ছিলো। এমনকি হঠাৎ করে একসাথে এই চার সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম নড়েচড়ে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ। চার সংগঠন মিলিয়ে প্রথমে এক দল হওয়ার খবর আলোচিত হলেও সেটা আর চোখে পড়েনি। পরবর্তীতে জোট বিষয়ে চাউর হয়েছিল যে মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতেই সন্তোষ থেকে কোন ঐতিহাসিক ঘোষণা আসতে পারে। যা হোক চার সংগঠন মওলানার মাজারে কর্মসূচি করলেও ঐতিহাসিক কিছু পাওয়া যায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত নতুন করে সাত দলের সমন্বয় রাজনৈতিক মঞ্চ গঠনের খবর ছড়িয়ে পরলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে তাদের অগ্রগতি যা হওয়ার মওলানার মাজারেই হয়েছে। হয়তো আরও অনেককে যুক্ত করার তাগিদে বিশেষ কোন রণকৌশল নিয়েছিলো।

বিজ্ঞাপন

২০০২ সালে গণসংহতি আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। যাদের ইতিহাস বলে পূর্বে তারা একীভূত হয়েছিলো মজদুর পার্টির সাথে। এক মঞ্চে এসে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পর ২০১৬ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে রাজনৈতিক দল হলেও গণসংহতি আন্দোলনের নিবন্ধন নেই। নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনের তালবাহানার সম্মুখীন হয়ে গত নির্বাচনের আগে ধর্ণা দিয়েছেন আদালতের বারান্দায়। আদালত থেকে তাদের পক্ষে রুল জারি হয়েছিল। অতঃপর ২০১৯ সালের এপ্রিলে উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয় গণসংহতি আন্দোলনকে নিবন্ধন দেওয়ার। নিয়ম অনুযায়ী- রায়ের অনুলিপি নির্বাচন কমিশন পাওয়ার ৩০ কর্ম দিবসের মধ্যে গণসংহতির নিবন্ধন পাওয়ার কথা। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই; নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কেবলই নিরব। বিগত নুরুল হুদা নির্বাচন কমিশনকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছিলো দলটি, কোন সুরাহা না হওয়ায় বিদায়বেলায় মামলা খেতে হয়েছে, নুরুল হুদাকে বিতর্কিত হতে হয়েছে। অর্থাৎ নিবন্ধনের সমস্ত শর্ত পূরণ করলেও আজানা কারণে গণসংহতি রয়ে গেছে অনিবন্ধিত। অভিযোগ আছে উচ্চ আদালতের রায়ের পরেও তারা নির্বাচন কমিশনের দ্বিচারিতার শিকার হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আছে একটানা দীর্ঘ ৩ মেয়াদে। পৃথিবীর ইতিহাসে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যা নজিরবিহীন। একটানা কোন দল ক্ষমতায় থাকলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে দলীয় কোন্দল যেমন বাড়ে, তেমনি দলকে বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক চর্চা থেকে পিছিয়ে দেয়। রাষ্ট্রে জন্ম নেয় নানান উগ্রবাদী মতাদর্শ। দুর্বল করে দেয় রাজনৈতিক চর্চার ভিত্তি। একটানা ক্ষমতায় থাকায় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগও যে অস্বস্তিতে দিন অতিক্রম করছেন এটা তাদের নেতা-নেত্রীদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়। কাজেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগেরও একটা শক্তিশালী বিরোধী দল অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এটা তারা ভালো করেই বুঝেন। তবে ২০০৪ সালে বিএনপি জোট ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার উপরে গ্রেনেড হামলা এবং তৎপরবর্তী বিএনপির কার্যক্রমে বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের আপসের সুযোগ একেবারেই ক্ষীণ। দ্বিতীয়ত বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগের উন্নয়নমূলক অসমাপ্ত কাজ বন্ধের সম্ভাবনা শতভাগ এটাও সরকার নেতৃত্ব হাড়েহাড়ে বুঝেন। তৃতীয়ত বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান মামলার সাজাগত কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে আযোগ্য ঘোষিত হবেন, সে ক্ষেত্রে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চাইলেও নেতা নির্বাচন নিয়ে অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য সৃষ্টি অব্যসম্ভাবী। চতুর্থত নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা ও না করা নিয়ে ইতোমধ্যে অনেকেই বহিস্কৃত, কেউ কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পদাবনতিতে উষ্মা হয়ে হয়েছেন এবং সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে সংস্কারপন্থীদের দিকেও। ফলে নির্বাচনের আগে তাদের ভিতরে অভ্যন্তরীণ ভাঙনের আওয়াজ বিদ্যমান। ত্যক্তবিরক্ত জনগণের কাছেও দ্বিদলীয় রাজনীতির বাইরের অন্য কোন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি গ্রহণের সুযোগ প্রবল। মারামারি হানাহানির অবসানে সুস্থ রাজনৈতিক ধারা তাদের কাম্য। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে সারাদেশে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা তারই ইঙ্গিত বহন করে।

আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে গণ অধিকার পরিষদ আহ্বায়ক বলেছিলেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিবেন। আন্দোলন সংগ্রামে জোটগত ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন প্রশ্নোত্তর পর্বে। অথচ দলগতভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বাঁধা রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন। দল গঠনের সাথে সাথেই নিবন্ধন পেয়ে কেউ নির্বাচন করবেন এটা সহজ কথা নয়। তারউপর ডাকসু’র সাবেক এই ভিপি আছেন সরকার বিরোধী হিসেবে পরিচিত জোনায়েদ সাকি, মাহমুদুর রহমান মান্না এবং রাষ্ট্রীয় নানা সংস্কার করতে আলোচিত সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার ব্লকে। দল গঠন সম্পর্কে ভিপি নুরুল হক পূর্বে বলেছেন তাদের নেতারা হবেন দলকেন্দ্রীক; কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দল গঠনের প্রারম্ভেই পত্র-পত্রিকায় উঠে এসেছে দলীয় সভাপতি যেই হোক কার্যক্রম চলবে নুরুল হক কেন্দ্রীক। সুতরাং নুরুল হকদের দল নিবন্ধন পাবে কি পাবে না, সেটা গণসংহতি আন্দোলনের নিবন্ধন না পাওয়া এবং দুই দফা আবেদন করেও গণ অধিকার পরিষদের আত্মপ্রকাশের কর্মসূচি করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ার দৌড়েই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন করতে হলে তাদেরকে রাজনৈতিক জোট গঠনের বিকল্প নেই।

বর্তমানে আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাওয়া উদ্যোগী রাজনৈতিক মঞ্চের সাথে যে সকল ব্যক্তি, সংগঠন বা দল আছেন এদের ভিতরে যোগাযোগ দক্ষতা, রাজনৈতিক জোট গঠন, জোটগত আন্দোলন, জোট টিকিয়ে রাখা, জোটগত নির্বাচন এবং পরিচালন করতে ঝানু অবিজ্ঞতা আছে গণসংহতি আন্দোলনের। কারণ গণসংহতি আন্দোলন এই অলিখিত জোটের বাইরেও বিগত দীর্ঘ এক দশকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শরিক দল। পাশাপাশি বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা আছে ঐতিহাসিক লড়াইয়ের অন্যতম নেতা আ স ম আবদুর রবের। অন্যদিকে কল্যান পার্টির প্রধান মেজর মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এক মঞ্চে এসেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভাসানী অনুসারী পরিষদের সাথে ওঠা-বসার কারনেই। আবার গত নির্বাচনের আগে নির্বাচনী জোট ঐক্যফ্রন্টে থাকার কারনে কল্যাণ পার্টির সাথে নাগরিক ঐক্য এবং জেএসডিরও সম্পর্ক আছে। ইতোমধ্যে ঘরোয়া এক সমাবেশে জনাব ইব্রাহিম প্রকাশ্যে বলেই ফেলেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার গুরুজন, তিনি তাকে উঠতে বললে উঠবেন, বসতে বললে বসবেন। বিপরীতে জনাব ইব্রাহিমের সাথে বিএনপির এক নেতার ঘনিষ্ঠতার কারণে পদাবনতির তীর ছুটেছে। নতুন মঞ্চ কোন ‘রাজনৈতিক জোট’ হিসেবে বর্তমানে আত্মপ্রকাশ না করলের ভবিষ্যতে রাজনৈতিক জোট হওয়ার সম্ভাবনা তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নতুন মঞ্চটির উদ্যোগতারা জানিয়েছেন আগামীতে অন্যান্য সমমনা দলগুলোকে এই মঞ্চে অংশ নেওয়ার সুযোগ রেখেই মঞ্চ করা হচ্ছে। অর্থাৎ কল্যাণ পার্টিসহ অনেকেই বর্তমানে মঞ্চের শরিক না হলেও ভবিষ্যতে এই মঞ্চে আসার সম্ভাব্য সুযোগ বিদ্যমান। অপরপক্ষে বাম গণতান্ত্রিক জোট সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে জোটগত অংশ নিলেও তারা নিজস্ব নিজস্ব মার্কায় নির্বাচন করেছেন। গণসংহতি আন্দোলনের নিবন্ধন না পাওয়ায় তাদের সদস্যরা নির্বাচন করেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কোদাল মার্কায়। বোঝাই যাচ্ছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে গনসংহতির প্রকাশ্য সখ্যতা। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হকও ইতোমধ্যে গণসংহতির কর্মসূচিতে একেই মঞ্চে দৃশ্যমান লক্ষণীয়, যে কর্মসূচিতে নুরুেরাও উপস্থিত ছিলেন, উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না। অর্থাৎ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ভিতরে সংকীর্ণতা কাজ করেনি, আবার নাগরিক ঐক্যেরও সীমাবদ্ধতা ছিল না; উভয়ের কেবল উদারতাই প্রকাশ পেয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে তৃতীয় রাজনৈতিক বলয় গঠনে উদার এবং প্রগতিশীল ভাবধারার গণতান্ত্রিক শক্তির প্রাধান্য উল্লেখযোগ্য।

ছাত্র অধিকার পরিষদের উত্থান এবং দুঃসময়ের দিনগুলোতে- বিশেষ করে কোটা সংস্কার আন্দোলন, ডাকসু নির্বাচন, বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যা বিরোধী আন্দোলন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে গণসংহতি আন্দোলন ও তাদের ছাত্র সংগঠন, নাগরিক ঐক্য এবং রাষ্ট্রচিন্তার দায়িত্বশীলদের ভূমিকা অত্যন্ত ব্যাপক। আইনী সহযোগীতা দিতেও এসকল দায়িত্বশীলেরা ছিলেন পর্দার আড়ালে। সে হিসেবেই হয়তো গণসংহতি, নাগরিক ঐক্য এবং রাষ্ট্রচিন্তা নুরুল হকদের অকৃত্রিম বন্ধু। এদের মধ্যে গণসংহতির আছে রাজনৈতিক ইমেজ, আদর্শ এবং লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য; আছে মওলানা ভাসানীর মতো শক্তিশালী আদর্শিক রাজনৈতিক চর্চা, প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির আছে জনপ্রিয়তা। কিন্তু তাদের ঘাটতি কেবল সংখ্যায়, লোকবলে। হাসনাত কাইয়ুমের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রচিন্তা বা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনে বুদ্ধিবৃত্তিক লোকজনের সমাবেশ, আইনী সহায়তা বলয়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে তারা একেবারেই নগন্য। লড়াই সংগ্রাম বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়। বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনীতিক নেতার যে আকাশ-পাতাল তফাত বিরাজমান! সুতরাং জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠা হাসনাত কাইয়ুমদের জন্য কষ্টসাধ্য। লোকবল বিবেচনায় তাদের সংখ্যাও হাতেগোনা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের থেকে উঠে আসায় নুরুল হকদের পক্ষে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছাত্রদের বড় একটা অংশ এবং তরুণদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার শক্তি। বিপরীতে তাদের রাজনৈতিক পরিপক্বতা অনুপস্থিত। তাদের যেমন ঐতিহাসিক লড়াই-সংগ্রামের কোন অর্জন নেই, তেমনি সাংগঠনিকভাবে নেই ঝানু প্রবীণ অবিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকজনের অংশগ্রহণ। আছে বিশৃঙ্খলা এবং থিংক ট্যাঙ্কের অভাব। ফলে বিগত দিনে মাঝেমাঝেই ভিপি নুরুল হককে দেখা গেছে সকালে এক কথা বলে বিকালে সেই সিদ্ধান্তে আর স্থির থাকতে পারেননি। এমনকি গন অধিকার পরিষদের আত্মপ্রকাশের দিনেও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি অনভিপ্রেত। পাশাপাশি এই মঞ্চে যুক্ত আছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো প্রতিষ্ঠান। জনাব চৌধুরীর কারণে ভাসানী অনুসারী পরিষদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

গণসংহতি সমন্বয় বারবারই ঐক্যের আহ্বান করেছেন। নুরুল হকদের আত্মপ্রকাশ হওয়া দল লড়াই সংগ্রামে শানিত হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। সারাদেশে সফর করে সাংগঠনিক শক্তিশালীকরণে সমন্বয়কারী চষে বেড়িয়েছেন সারাদেশে। দলের সাংগঠনিক চাঙ্গা করতে গণসংহতির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলন, রাষ্ট্রচিন্তার রাজনৈতিক দল গঠন, গণ অধিকার পরিষদের আত্মপ্রকাশ, ভিন্ন মাত্রায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, ইতোপূর্বে ৪ সংগঠনের একেত্রে কর্মসূচি পালন, গণমাধ্যমে আসা ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতাদের প্রকাশ্য বক্তব্যে একেত্রে কাজ করার বার্তা এবং জেএসডির জাতীয় সরকারের ধারণা রাজনীতির নতুন সমীকরণ দেখাচ্ছে; যেখানে সময়ের পরিক্রমায় যুগপৎ হিসেবেও হয়তো অনেকে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রশ্ন দাঁড়ালো— রাজনৈতিক দলগুলো সরকার বিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্য একত্রিত হচ্ছে, সেখানে যদি তারা সফল হয় তবে ফসল উঠবে কার ঘরে? রাজনৈতিক জোটে রূপান্তরিত না হয়ে তার ফসল কি তারা ধরে রাখতে পারবে? প্রস্তুতি না থাকলে জনগণের নতুন ভোগান্তির দ্বার উন্মোচন অব্যসম্ভাবী।

এক পাই, এক আনা করতে করতেই ষোল আনা হয়। জেএসডির ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ন্যায়-নিষ্ঠা, গণসংহতির রাজনৈতিক পরিপক্বতা, মাহমুদুর রহমান মান্নার দীর্ঘ পথ, রাষ্ট্রচিন্তার বুদ্ধিবৃত্তিক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা এবং নুরুল হকদের লোকবল এক চতুরঙ্গের সমাবেশ। স্বস্তি যেমন আছে তেমন অস্বস্তিও আছে। এবার দেখা যাক এই মঞ্চ বাস্তবায়িত হলে আন্দোলন সংগ্রাম করে বিশেষ কারো ঘরে ফসল তুলবে, নাকি নিজেরাই ইতিহাস রচনা করবে! তবে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা তো আমরা রাখতেই পারি। সময়ের পরিক্রমাই বলে দিবে কে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়।

লেখক: প্রাবন্ধিক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

মত-দ্বিমত রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ সজীব ওয়াফি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর