অর্থনীতিতে ‘টু ইন ওয়ান’ হাওয়া
১৫ এপ্রিল ২০২২ ১৩:২৪ | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২২ ১৮:৫৯
ব্যাপক–বিস্তর না হলেও দু’বছরের ধকলের পর এবার কিছুটা আমেজ এসেছে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে। রমনা বটমূলসহ রাজধানীতে উদযাপন হয়েছে দিনটি। গ্রাম–গঞ্জেও মেলাসহ কিছু আনুষ্ঠানিকতা চলেছে। এবারের সময়ক্ষণেও একটু ভিন্নতা। নববর্ষ এবং ঈদ; দুই উপলক্ষকে ঘিরে জামা–কাপড়, জুতা, প্রসাধনীর বেচাকেনা মন্দ নয়। অন্তত গত দুই বছরের তুলনায়। সেইসঙ্গে খাদ্যপণ্য, গৃহসামগ্রীর বেচাকেনাও ভালো।
একসময় বাংলা নববর্ষকে ঘিরে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষ একটি প্রবাহ তৈরি হতো। পরে ক্রমান্বয়ে তার বিস্তার ঘটে শহুরে অর্থনীতিতেও। করোনায় গত দু’বছরে তাতে ছেদ পড়েছে। ব্যাপক না হলেও এবার কিছুটা ছন্দের তাল পড়েছে। বৈশাখি অফারসহ নানা স্কিমে বিভিন্ন কোম্পানি কেমন লাভবান হয়েছে তা জানতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে মিষ্টি, ফল–ফলাদি, ফার্নিচার, টিভি–ফ্রিজসহ গৃহস্থালি বেচাকিক্রিসহ গত ক’দিনের কেনাকাটা পরিস্থিতিতে ধারনা করা যায়, লাভ প্রচুর না হলেও লোকসান গুনতে হবে না তাদের।
কোথাও কোথাও বৈশাখী হলখাতা মেলানোর খবরও রয়েছে। হালখাতার চল অনেকটা ফিকে হলেও পুরান ঢাকার অনেক ব্যবসায়ী এখনো নতুন খাতা খুলে বছর শুরু করেন। রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হালখাতা উৎসব নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে বরাবরই আগ্রহ থাকে। করোনার কারণে গত দু’বছর তা থমকে গেলেও এবার ফের কিছুটা জমেছে। তবে, এ সংক্রান্ত অর্থনৈতিক সার তথ্য নেই। এ ছাড়াও পয়লা বৈশাখে কত টাকার বাণিজ্য হয়, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতিবিদের ধারণা, সারা দেশে নববর্ষকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। ঈদ বা পূজার সঙ্গে বর্ষবরণ উৎসবের তফাত হচ্ছে, এ সময় দেশীয় পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের ঝোঁক থাকে। তাই বৈশাখকেন্দ্রিক বেচাবিক্রিতে গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ চাঙা হয়ে ওঠে।
গত কয়েক বছর ধরে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বৈশাখে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন। একইভাবে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা–কর্মচারীরাও পাচ্ছেন ভাতা। বর্ষবরণে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অনুষ্ঠানও বাড়ছে। এতে বৈশাখকেন্দ্রিক ব্যবসা–বাণিজ্য রাজধানী থেকে পল্লি অঞ্চলে বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে। মিষ্টি–নিমকি দিয়ে ক্রেতা ও বন্ধুবান্ধবকে আপ্যায়ন করার ঐতিহ্যটি এখনো টিকে আছে। গরমের কারণে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসির বিক্রি বেড়েছে। বিশেষ ছাড়সহ কিছু অফার দেয়ায় টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর ও ক্যামেরার মতো শৌখিন জিনিসের বিক্রিও বেড়েছে। এ ছাড়া বৈশাখী অর্থনীতির আকার নিয়ে দেশে কোনো গবেষণা হয় না। সবই খণ্ডিত, ভাসাভাসা।
এবার রমজানের মধ্যে বৈশাখ, এর পরপরই ঈদ–এই দুইয়ে মিলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মযজ্ঞ অর্থনীতির জন্য একটি ঘটনা। রমজান, বৈশাখ, ঈদ মিলিয়ে বিপণিবিতানগুলোতে কয়েক দিন ধরে কেনাকাটা বেড়েছে। বৈশাখ ও ঈদের সম্মিলিত বেচাকেনা নিয়ে ব্যবসায়ীরা আশাবাদী। যা তাদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর উপলক্ষ। হালখাতার কল্যাণে অনেক আগে থেকেই পয়লা বৈশাখে মিষ্টির ব্যবসা চাঙা হয়। আর বৈশাখী পোশাক টুকটাক কেনাবেচার প্রচলন হয় এক থেকে দেড় দশক আগে। ধীরে ধীরে সেটির পরিধি বাড়তে থাকে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আসবাব, ইলেকট্রনিকসহ বিভিন্ন পণ্য।
২০১৬ সাল থেকে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিরা বৈশাখী ভাতা পেতে শুরু করেন। বেসরকারি কিছু ব্যাংকও ভাতা দিচ্ছে। বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানেও দিনটি উপলক্ষে বাড়তি কিছু আয়োজন চলছে। আর আয়োজন মানে খরচপাতি, অর্থনৈতিক ক্রিয়াকর্ম। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলো উৎসবকেন্দ্রিক। রাজধানীর বিপনী বিতানগুলোতে এমন কি ফুটপাতেও কিছুদিন ধরে চলতে থাকা বেচাকেনা বৈশাখ এবং ঈদ দুটি ঘিরেই। রাজধানীর বুটিক ও ফ্যাশন হাউসগুলো এবার এমনভাবে পোশাকের নকশা করেছে, যাতে বৈশাখের পাশাপাশি তা যেন ঈদেও মানায়। একের ভেতর দুই হলেও তা অর্থনীতির পালে হাওয়া দিয়েছে। সেইসঙ্গে নির্জ্জলা সত্য হচ্ছে, অর্থনীতির যোগসূত্র ছাড়া কোনো উৎসবই হয় না। কখনো কখনো হলেও টেকে না।
লেখক: সাংবাদিক–কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
সারাবাংলা/এসবিডিই