ভারতের লক্ষ্মীর দৌড়েও অটল বাংলাদেশ
৯ অক্টোবর ২০২১ ১৯:০১ | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২১ ১৭:২১
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে বলে আভাস বিশ্বব্যাংকের। করোনা মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ৬ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। বৃহস্পতিবার ‘সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক ফোকাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আভাসটি জানানো হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার ভুটান, নেপাল এবং পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের চেয়ে কম হবে। এক্ষেত্রে ভুটানের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, নেপালের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ভারতের হতে পারে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
কিছুদিন আগে, এশীয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক- এডিবির দেয়া আভাসও প্রায় এমনই ছিল। তারা বলেছিল, করোনাকালেও বাংলাদেশের জিডিপি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির হিসাব এখন কাছাকাছি চলে এসেছে। তবে, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে তথ্য ও ধারনার সঙ্গে কিছু মন্তব্যও রয়েছে। সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার কথা আছে। চেষ্টাটির ভঙ্গুর এবং অসম অবস্থার কথাও বাদ যায়নি। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ সেফার বলেছেন- এগিয়ে যাওয়া, টিকাকরণের গতি, নতুন কোভিড রূপের সম্ভাব্য উত্থানের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।
বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনার ধকল সয়েও ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে শিল্প কারখানা ও রফতানি খাত ঘুরে দাঁড়ানোয় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ৭ শতাংশের বেশি। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি বিবেচনায় এটি কমের মধ্যে বেশি। এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেছিলেন, জীবিকা রক্ষায় জীবন বাঁচানোর জন্য সরকারের নীতিগুলো বাংলাদেশের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছে, যা সাম্প্রতিক কঠিন সময়ে প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি। এমন উচ্চাশা ও প্রশংসার মধ্যে টিকা নিয়ে কী তথ্য দেয়া হলো বিশ্বব্যাংকের সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক ফোকাসে? সেখানে টিকার সাফল্যে দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ফেলা হয়েছে ৭ নম্বরে। ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান-সবাই বাংলাদেশের আগে। পরে কেবল আফগানিস্তান! কী বার্তা পেলাম আমরা?
তবে, স্থানীয় বা অঞ্চলভিত্তিক তুলনা করতে গেলে আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এখনো ভারতের চেয়ে ভালো অবস্থায়। দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাহাতক অবস্থার যেসব খবর গণমাধ্যমে আসছে তা রীতিমতো ভয়াবহ। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্টেও এসেছে কিছু তথ্য। সেখানে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে সোনা বন্ধক রেখে ধার নেওয়ার পরিমাণ এক বছর আগের তুলনায় ৬৬ শতাংশ বেশি। গত বছর মার্চের শেষে তা ছিল প্রায় ৩৩ হাজার কোটি রুপি, যখন করোনা মোকাবিলায় লকডাউনে সব বন্ধ। সেই বিধিনিষেধ শিথিলের পরে সে বছর আগস্টে স্বর্ণঋণ বেড়ে ৩৭ হাজার কোটি রুপিতে পৌঁছায়। আর এ বছরের আগস্টে তা-ই রকেট গতিতে বেড়ে পৌঁছেছে প্রায় ৬৩ হাজার কোটিতে। ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের মধ্যে স্বর্ণঋণের হার ২ দশমিক ১ শতাংশ, দুই বছর আগে যা ছিল ১ দশমিক ২ শতাংশ।
তথ্যগুলো ভাবলে কী ভাসে চোখের সামনে? অসংখ্য মানুষ সোনার দোকানে বা মহাজনের কাছে গহনা বন্ধক রেখে ধার করলেও সেই হিসাবে আসেনি। ভারতে স্বর্ণ গহনা ঘরের লক্ষ্মী হিসেবে বিবেচিত। আর কোনো উপায় না থাকলে মানুষ গহনা বন্ধক রেখে টাকা নেয়। এই বন্ধকির সাম্প্রতিক অংক দেশটির করুণ অবস্থা নির্দেশ করে। নানামুখী দুর্নীতি, অনেক সমালোচনা-ব্যর্থতার পরও বাংলাদেশের কোথাও লক্ষ্মীছাড়া হওয়ার মতো কুখবর নেই। আমাদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা, দক্ষতা এবং গ্রামীণ উন্নয়ন, পানি ও স্যানিটেশনের অবস্থার মান গর্ব করার মতো না হলেও ভারতের মতো শোচনীয় নয়। প্রসঙ্গ ভারতের কারণে তুলনাটা সামনে চলে আসছে। ভারতে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় লকডাউন শুরুর পর তিন মাসে জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন সঙ্কুচিত হয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ যা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। তাদের উৎপাদন, নির্মাণ, হোটেল, পরিবহন, আবাসনসহ অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই সঙ্কোচন। লকডাউনের আগে থেকেই ক্রমাগত সঙ্কুচিত হচ্ছিল ভারতের অর্থনীতি, লকডাউন বিরতিহীনভাবে ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ দিয়েই চলছে।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
সারাবাংলা/এসবিডিই