স্রোত-ভূতেই পদ্মায় অবিরাম ধাক্কাধাক্কি?
৩১ আগস্ট ২০২১ ১৩:৪০ | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২১ ১৬:০৭
আবারও ধাক্কা স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে। মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকায় পদ্মা সেতুর স্প্যানে ফেরির ধাক্কা লেগেছে। মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ২ ও ৩ নম্বর পিলারের মাঝের স্প্যানে আঘাত হানে ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর। এতে ফেরির মাস্তুল ভেঙে গেছে। নগদে এবার দোষারোপ করা হয়েছে পদ্মার তীব্র স্রোতকে। শটকাটে খবর এদ্দূরই। এর আগে, অন্তত আরো চার দফার ধাক্কায় কখনো দায়ী করা হয়েছে মাস্টার-সুকানিদের। কখনো ষড়যন্ত্রকে। ক’দিন পরে আলোচনাটা থমকে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে আর কতো?
সেতুর দুটি পাইলের মধ্যে ব্যবধান প্রায় ১৫০ মিটার। এটি বিশাল জায়গা। তারপরও কেন ফেরিগুলো ক’দিন পর পর পিলারে গিয়ে ধাক্কা খায়? প্রশ্নটা যে কারো জন্যই বিব্রতকর। পদ্মা নদী সম্পর্কেই যেন নতুনভাবে জানতে হচ্ছে। স্রোতের তীব্রতার জন্য এই নদী বিশ্বখ্যাত। স্রোত আর নদীর তলদেশের মাটি প্রতিনিয়ত ধুয়ে যাওয়ার কারণে পদ্মা সেতুর ৪টি পাইলের নকশা পর্যন্ত পাল্টাতে হয়েছে। তবে, বিআইডব্লিউটিসির ব্যর্থতা সামনে আনা থেমে নেই। সুকানি-মাস্টারদের অসতর্কতা আর উদাসীনতার প্রসঙ্গ তো আছেই। তাদের অনেককে এরইমধ্যে চাকরিও হারাতে হয়েছে। তারওপর নাশকতার গন্ধ তো আছেই।
কয়েক দিনের ব্যবধানে পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা লাগার ঘটনার বাইরেও এই নৌ রুটে চলাচলরত ফেরি অন্যকিছুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনায় পড়ার বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রাত ১২টার দিকে এই রুটে ড্রেজারের পাইপের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডাম্ব ফেরি রানীগঞ্জের তলায় ফাটল ধরে। পরে যাত্রী ও যানবাহন বাংলাবাজার ঘাটে দ্রুত নামিয়ে দেওয়ার পর নোঙর করা হলে ফেরিটি ডুবে যায়। এর জন্য দায়ী করা হয়েছিল প্রচণ্ড কুয়াশাকে। ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় এই নৌ রুটে শিমুলিয়া ঘাটের অদূরে মাঝ পদ্মায় ড্রেজারের পাইপের সঙ্গে ধাক্কায় যমুনা নামে একটি ডাম্প ফেরির তলা ফেটে যায়। পরে পদ্মার চরে নোঙর করে পানি অপসারণ করে ফেরিটি মেরামত করা হয়েছিল।
পদ্মা কেবল নদী নয়। পদ্মা বলতে একটি সেতুও মনে করা হয়। স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এই সেতুকে ঘিরে দুর্নীতির আওয়াজে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকেই ঠেকানো হয়েছিল মন্দ রাষ্ট্রে। সরকার পড়েছিল এক চরম বিব্রতকর অবস্থায়। সেই যাত্রা সামলে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তব রূপ নিতে থাকে। বিভিন্ন বছরের বিভিন্ন মাস নাগাদ ঘোষিত তারিখে উদ্বোধন না হলেও একের পর এক পিলার ওঠার সচিত্র সুখবর দেখেছে মানুষ। এই অভিযাত্রা পথেই পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের মাথার চাহিদা বিষয়ক কাউর বেধেছে। তাও উৎরেছে। মাঝে আবার ক’দিন চলেছে পদ্মা সেতুর কাছে কিনার থেকে হাফ-ফুল মিলিয়ে পাগল ধরার কাণ্ড। সেটারও লাগাম পড়েছে। এখন সেখানে যোগ হয়েছে সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কার সিরিজ। তা পাগল, স্রোত বা ভূতের নিস্পত্তি না করায়?
উদ্বোধনের দুয়ারে এসে ক’দিন পর পর সেতুর পিলারের সাথে বারবার ফেরির ধাক্কা কেনো লাগছে? এ পর্যন্ত অন্তত ৪ বার ধাক্কার খবর এসেছে। এক পিলারে পর পর দুইবারও ধাক্কা পড়েছে। এগুলো এমনি-এমনি? না-কি কোনো পরী বা ভূত-পেত্নি আছর করেছে। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ষড়যন্ত্র আছে কি-না খতিয়ে দেখা হবে। খতিয়ে দেখার খবর মন্ত্রীর জানানো বা না জানানো বিষয় নয়। পদ্মা আবেগের বিষয়। কলিজায় আঘাত দেয়ার মতো ঘটনা তো তদন্তের দাবি রাখেই। নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আগের ঘটনায় দূষেছেন ফেরির মাস্টার-সুকানিদের। এসব ধাক্কায় সেতুর ক্ষতি হবে না-এমন আশার বানীও দিয়েছেন তিনি। ক্ষতি যদি না-ই হবে তা হলে পিলারে ফেরি এভাবে বা আরো বেশি করে ধাক্কা দিতে থাকলে সমস্যা কী? এর আগে কল্লা রহস্যেরও কিনারা হয়নি। বাংলাদেশে সেতু নির্মাণ বা এরকম বড় কোন স্থাপনা নির্মাণ কাজে নরবলির গুজব নতুন নয়। হয় তো সেই রেওয়াজ বা ষড়যন্ত্র থেকেই এসেছিল কল্লার গুজবটা। সেটার কি একটা নিস্পত্তি জরুরি ছিল না?
তাহলে পরবর্তীতে দফায় দফায় ধাক্কাকাণ্ড না-ও হতে পারতো। চালকের অদক্ষতা হয়ে থাকলে প্রথমবার ধাক্কা দেয়ার পরেই চালক বদলানোর দরকার ছিল না? ফেরিটি আসলেই টেকনিক্যালি নিয়ন্ত্রন রক্ষা করার মতো যোগ্য না হয়, তাহলে ফেরিটি এই রুট থেকে সরানোর দরকার ছিল। ব্রেকফেল গাড়ি চালাতে দিয়ে তো ড্রাইভারকে দোষ দেয়া যায় না। ড্রাইভার দক্ষ, কিন্তু গাড়িতে গোলমাল অথবা গাড়ি ভালো ড্রাইভারে ত্রুটি- কোনোটাই কাম্য নয়। মোটকথা পয়সালা জরুরি।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
সারাবাংলা/এসবিডিই
মত-দ্বিমত মোস্তফা কামাল স্রোত-ভূতেই পদ্মায় অবিরাম ধাক্কাধাক্কি?