Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোন সিস্টেমের সলতে জ্বল জ্বল রাখতে এসব ‘টর্চার সেল’?


১১ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৩৬ | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:৩৩

কাবেরী গায়েন

‘মেধাবী হলেই মানুষ হয় না’
‘বুয়েটের ছেলেমেয়েরা খালি রেজাল্টের পেছনে দৌঁড়ায়, মানবিকতা শেখে না’
‘বাড়ি থেকে, স্কুল-কলেজ থেকে মানবিকতা শেখানো হয় না।’
‘বুয়েটে খালি টেকনিক্যাল জিনিস শেখানো হয়, সাহিত্য-সুকুমার বৃত্তি শেখানো হয় না’

– মোটামুটি এই জাতীয় লেখাগুলো পড়তে পড়তে ভালো এবং বিরক্তি দুই-ই লাগছে। ভালো লাগছে যে অনেকেই ভাবছেন বিষয়টি নিয়ে। বিরক্তি লাগছে দেখে যে অনেক বড় বড় মানুষজন, যারা গভীর চিন্তা করতে সক্ষম বলেই জানি, তারা মূল কারণ এড়িয়ে উপরভাসা বিষয়গুলো নিয়ে মেতে রয়েছেন।

বুয়েটের এই ঘটনায় আবরারকে যারা খুন করেছে তারা ‘ক্রাচের কর্ণেল’ কিংবা ‘হিমু সমগ্র’ পড়া ছেলে। আবরার নয়, এই বইয়ের তাক খুনি হিসেবে অভিযুক্তদের একজনের। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যাটা হল যে রাজনৈতিক সিস্টেমে এইসব ছেলেমেয়েরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বা যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে ছাত্রসংগঠনের দখল বেশি সেই ছাত্রসংগঠনের নেতা হয়ে ওঠে, নেতা হয়ে আছে, এবং নেতৃত্ব ধরে রাখতে চায়, সেই সিস্টেমে। আমি বরং বলি, এদের প্রতিদিন মানবিকতার বড়ি নিয়ম করে খাওয়ালেও কিছু হবে না সিস্টেমকে না পালটে।

আমি মনে করতে পারি আমার স্কুল জীবনে চট্টগ্রামে শিবিরের নেতা হারুন খুন করেছিলো তার রুমমেট ছাত্রইউনিয়ন নেতা শাহাদাতকে। আমি তখন প্রতিবাদ মিছিলে দাঁড়িয়েছিলাম বরিশালে। আমার সারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কেটেছে ছাত্রদলের তান্ডবে। হল দখলকে কেন্দ্র করে জিয়া হল-মুজিব হলে সারা সারা রাত শত শত রাউন্ড গুলি বিনিময় হত। শেষরাতে আমরা বিজয়ী দলের উল্লাস শুনে ঘুমাতে যেতাম কিন্তু পরদিন সকালে খোঁজ নিতে থাকতাম উদবেগের সাথে, আমাদের সহপাঠীরা বেঁচে আছে তো! হল দখলের বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারের সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্যে শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রবিরোধী মিছিলে শ্লোগান দিয়ে নিহত হলেন রাজু, এই তো সেদিনের কথা।
দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় ছাত্রলীগ। নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের চাঁদাবাজি-আক্রমণ-নির্যাতনের নিয়মিত খবর পাই ব্যক্তিগত পরিসরে, খবর পাই পত্রিকায়। আমি তো ভেবে পাই না, এইসব খবর নতুন হল কীভাবে?

বিজ্ঞাপন

বরং প্রশ্ন তুলুন, সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো কি জানে না তাদের ছাত্রসংগঠন কী করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে? বা আদর্শহীন রাজনীতিতে কী কী ক্ষমতা দিয়ে এইসব ছাত্রনেতাদের ধরে রাখতে হয়? কে কার পরে নেতা হবেন, কে নেতৃত্ব ধরে রাখবেন তা কি কে কত ‘ক্ষমতা’ দেখাতে পারে শিক্ষাঙ্গনে, তার উপর নির্ভর করে না? যে ভিন্ন দল, ভিন্ন মতকে যত বেশি টুঁটি টিপে ধরতে পারে, তার নেতৃত্বই কি তত নিশ্চিত হয়ে ওঠে না? কাজেই প্রথম আঙ্গুল তুলুন রাজনৈতিক দলটির দিকে। তাকে প্রশ্ন করুন।

দ্বিতীয়ত প্রশ্ন তুলুন, ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের প্রতি। তারা কি জানেন না কী হয়? তারা সব জানেন শুধু না, এইসব কাজে সাহায্য করে তারা নানা পদে টিকে থাকেন। ভিসি থেকে শুরু করে হাউস টিউটর পর্যন্ত। তাদের প্রশ্ন করুন প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। পড়েছেন নিশ্চয়ই এতোক্ষণে যে, উপরে ভিন্নমতের ছাত্রকে মারে সরকারদলের ছাত্রনেতা, নীচে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রভোস্ট।

তাহলে ক্রিমিনাল কারা?
বড় ক্রিমিনালদের ধরুন আগে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একই ধারা। এই সিস্টেম উৎখাত না করে আবরারদের হত্যাকান্ড ঠেকেনো যাবে না। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের লাঠিয়াল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বর্তমান ‘রাজনীতির’ রমরমা বন্ধ না করে এইসব হত্যাকান্ড বন্ধ করা যাবে না।

পাবলিকের টাকায় চলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বলে চালানো হচ্ছে। ওগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার আওয়াজ তুলুন। আবরার হত্যাকান্ডে যাদের ধরা হয়েছে, তাদের শাস্তি তো দিতেই হবে, তার আগে জেনে নিন, কাদের বা কোন সিস্টেমের সলতে জ্বল জ্বল রাখতে এসব ‘টর্চার সেল’? কে পোষে এদের?

বিজ্ঞাপন

আজ এ পর্যন্তই। বাকি কথা পরে হবে।

আবরার ফাহাদ আবরার হত্যা বুয়েট

বিজ্ঞাপন

নতুন বছরে টেকনোর নজরকাড়া অফার
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:১০

চমক জয়া আহসান!
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:০৫

আরো

সম্পর্কিত খবর