Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এদের প্রমোট করা ছেড়ে দিন… বিফোর ইট’স টু লেইট!


৭ আগস্ট ২০১৯ ১১:৫১ | আপডেট: ৭ আগস্ট ২০১৯ ২৩:১৪

দেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি, উদ্ভূত অবস্থা বিশেষ করে ডেঙ্গু, গুজব ইত্যাদি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেছেন। এই সময় তিনি দেশের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিত ব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর নিজের অবস্থানও তুলে ধরেছেন।

একদিকে যেমন তিনি অনস্বীকার্য কিছু কথা বলেছেন – যেমন আমাদের সীমাবদ্ধতার মাঝেও নানা কাজ হচ্ছে এবং অবশ্যই আমরা তার ফল পাচ্ছি, একেবারেই অহেতুক ফালতু গুজব খুব পরিকল্পনা করেই ছড়ানো হয়েছে দেশে ঝামেলা সৃষ্টি করার জন্যই (যেমন পদ্মাসেতুর কল্লা) এবং মেয়র বা মন্ত্রীরা কোনই কাজ করেন নি একথাগুলোও ঠিক নয়, এসব কথাই ঠিক। কিন্তু অন্যদিকে এবং সামগ্রিক উপসংহার বিচারে তাঁর কিছু কথায় আমরা কিঞ্চিৎ হতাশ হয়েছি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের ট্যাক্স পেয়ার নাগরিকের জায়গা থেকে নয়, প্রধানমন্ত্রীর সমর্থকের জায়গা থেকে হতাশ হয়েছি।

ডেঙ্গুর বিষয়টাই যদি ধরি – একথা ঠিক সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে সচেতন ও সক্রিয় না হলে এবারের এই কমপ্লেক্স ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব রোধ করা যাবেই না। সিটি কর্পোরেশন ও বাসায় বাসায় গিয়ে লার্ভা নিধন করতে পারবে না।

তারপরও মেয়রের তো একটা প্রধান জব রেস্পন্সিবিলিটি হচ্ছে মানুষকে সঠিকভাবে ব্রিফ করা। আতঙ্ক ছড়াক আর না ছড়াক – সিচুয়েশন যত ভালভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, মানুষ মুখে যাই বলুক, মনে মনে আশা করে একটা উপায় নিশ্চয়ই হবে।

কমিউনিকেশন স্কিল মেয়রদের বড় অস্ত্র। সে জায়গায় প্রথমেই তারা এমন কিছু কথা বলেছেন যা মানুষের আস্থাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ক্রাইসিস টাইমে ডিনায়াল সব সময় ভাল ফল বয়েও আনে না। ফেরতই যদি আসতে হলো, তাহলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অ্যাট দ্য ফার্স্ট প্লেস মালেয়েশিয়া যাওয়ারই বা কি প্রয়োজন ছিল? তারপরেও যে তিনি ফিরেছেন, সেটা কেন তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।

বিজ্ঞাপন

ফলে এরপর মেয়রদ্বয় আর মন্ত্রী মহোদয় যতই ভালো আর সঠিক কথা বলুন না কেন, মানুষের আস্থা ফেরত পাননি। এখন মেয়ররা স্লিভ কাপড় পরতে বলেছেন, ঘরে এক বিন্দুও পানি জমে না থাকার কথা বলেছেন, নির্মাণাধীন বাড়ির জমে থাকা পানি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরিস্কার করবেন বলেছেন, যার প্রায় সবগুলোই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞও বলেছেন।কিন্তু মানুষ এখন আর তাদের কথা আমলে নিচ্ছে না। তার কিছু কারণ অবশ্যই রাজনৈতিক। কিন্তু ঐ যে শুরুতেই কেটে গেছে তার!

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা আশা করি এই স্কিলের জায়গায় ব্যর্থ হওয়ার জন্য মেয়রদের যে ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন সেটাই যেন দেওয়া হয়। তাদের ডিফেন্ড করার কিছুই নাই, অন্তত গণমানুষের সামনে।

সরকারি সব হিসাব অগ্রাহ্য করে এক্সট্রিম নাম্বারগুলোও যদি আমরা নেই, তাহলে ধরে নেই প্রায় দুই লাখের মতো লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত বা সংক্রমিত। এর মধ্যে হয়তো লাখ দেড়েক সুস্থ ও হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১৭ শিশুসহ ৯০ এর ওপরে। এই সংখ্যা ও এমনকি ডেঙ্গুক ‘মহামারি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে না, outbreak বা প্রাদুর্ভাবের জায়গাই হয়তো বড় জোর প্রতিষ্ঠিত করে। কিন্তু এটাকে শুরুতেই পদ্মাসেতুর লেভেলে গুজব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা একটা সিকনেস (অসুস্থতা) – অ্যাকিউট ডিনায়াল সিনড্রোম। যেটাই বরং প্রথমে অবিশ্বাস জন্ম দেয়, পরে গুজববাজ আতঙ্কিত জনপদ গড়ে তোলে।

কিন্তু তারপরেও যার বাচ্চাটা মারা গেছে তার মাথায় কোনো সংখ্যা বা ব্যাখ্যা কাজ করে না। তাদেরকে কী কী কাজ হয়েছে তার ফিরিস্তি দিয়ে লাভ নেই। তাদের পরিণতি অসহায়ের মতো চেয়ে দেখা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে ‘কোন কাজ হয়নি এটা ঠিক নয়’ বলেও আস্থায় ফেরত আনা যাবে না। কথাটা ১০০% সত্য হওয়া সত্ত্বেও।

মিডিয়াগুলো মৃত্যুর খবর প্রচার বেশি করছে। সেটা যদি হয়, তাহলে তথ্যমন্ত্রীর তো নায়ক নায়িকাদের নিয়ে ঝাড়ু ক্যাম্পেইনে না গিয়ে সম্পাদকদের সঙ্গে বসা লাগতো মিডিয়া স্ট্র্যাটেজি নিয়ে।

আজ শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেছেন, স্কুল বন্ধ করার প্রশ্নই আসে না। কারণ স্কুল থেকেই বাচ্চারা যে ডেঙ্গু পেয়েছে, তার কোনো প্রমাণ নেই। কিন্তু স্কুল থেকেই যে পায়নি তার প্রমাণও তো শিক্ষা উপমন্ত্রীর কাছে নেই।

বাংলাদেশের অসংখ্য আরবান স্কুলে, যেখানে এডিস ইজিপ্টাস নামের খানদানি মশা এই মরনঘাতী রোগ ছড়াচ্ছে, পানির আধার আছে। পরিস্কার পানি। স্কুলের আশে পাশে নির্মাণাধীন বাড়িঘর তো আছেই যেখানে জমে থাকা পানিকে ডেঙ্গুর প্রধান উৎস বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ যিনি প্রায় দশক ধরে মশা নিয়ে কাজ করছেন। বেশিরভাগ স্কুলে নার্সারি আর কেজি শ্রেণির ক্লাস হয় এক তলায়। যেখানে মশা কামড়ানোর সুযোগ বেশি। আর নার্সারি কেজির বাচ্চারাই এবার সব চেয়ে বেশি আক্রান্ত, এমনকি ক্যাজুয়ালটির শিকার।

এই সব কিছু একটু সিরিয়াস আমলে নিয়ে ঈদের ছুটির সাথে একটু বেশি দিন স্কুল বন্ধ থাকলে আমাদের মহাভারত ক্ষতি হয়ে যেত না। বাবা-মায়েরা তখন বরং অনেক রিল্যাক্সড হতেন। আতঙ্ক বাড়তো না, বরং অনেক কমে যেত। এখন বরং উল্টো হচ্ছে। বাবা মারা আস্তে আস্তে স্কুল যাওয়া বন্ধই করে দিচ্ছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে স্কুলে পাঠানোর কোন যৌক্তিক কারণ ও দেখি না। অথচ শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেই দিলেন, স্কুল বন্ধের প্রচারণা সোশ্যাল মিডিয়া প্রসূত, বাস্তববিবর্জিত আর গুজব সৃষ্টির প্রয়াস। …আমরা কোথায় যাব?!!

প্রধানমন্ত্রী নিজে হাজার ভাল কাজ করলেও কিছু লোকের কখনোই পছন্দ হয় না, হবেও না। এই কিছু লোক “অপশান নাই” নিয়া টিটকারি মারবে, মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে সংঘাত উস্কে দেবে, যখন অপশান চেঞ্জ করার অপশান পাবে, তখন অপশান হিসেবে কামাল হোসেন, কমিউনিস্ট পার্টি বাদ দিয়ে আবার নিজামী সাকা চৌধুরীদের উত্তরসুরীদের  ভোট দেবে। উইনিং কোয়ালিশনের থিওরি কপচাবে, রাস্তা আটকে লাইসেন্স চেক করবে, কিন্তু ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় বসে মেয়র ট্রলিং আর কাশ্মীর নিয়া কাঁদবে…।

সবই ঠিক আছে…বাট দ্য ফ্যাক্ট ইজ… প্রধানমন্ত্রী তো এদেরও প্রধানমন্ত্রী।

এদের ফেরাতে হবে। লাইনের বাইরে গেলে আইনত শায়েস্তাও করতে হবে। কিন্তু এদেরকে প্রতিপক্ষ ভেবে প্রধানমন্ত্রীর জায়গা থেকে বাকী জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস থেকে সরে গেলে তো আমরা হেরেই গেলাম।

ডিনায়ালে যাওয়া যাবে না। প্রশাসনে কোন মানসম্মত বা পাস মার্ক পায় এরকম কোনো স্পোকসপার্সন বা মুখপাত্র নেই। এটা দরকার ছিল খুব। ক্রাইসিস পয়েন্টে পাবলিক অ্যাড্রেস করার ক্ষমতা প্রায় জিরো। আমার তুলনা হোয়াইট হাউসের সাথে না। ভারত, শ্রীলঙ্কা আর মিয়ানমারের সাথে। ক্যাবিনেট সদস্যরা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান কম, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমলারা এই সুযোগে তাদের এক্সপ্লয়েট করছে। মিডিয়াগুলো একদিকে প্রধানমন্ত্রীকে তেল দিচ্ছে, অন্যদিকে পাবলিককেও উস্কানি দিচ্ছে। এগুলো দেখার প্রফেশনাল লোক আছে। তারা আপনি বললেই একটা লাইনে আনতে পারে সবাইকে।

“কিন্তু কিছুই হচ্ছে না, সব ঠিকই আছে” – এই বুঝটা দিয়ে কোন ফায়দা নেই। কারণ এতে ঝামেলা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতিদিনের ঘটনা আগের দিনের ঘটনাকে ভুল বা মিথ্যা প্রমাণ করছে। তখন পাবলিক রি-অ্যাকশনের এস্কেলেশন আপনাকেই হ্যান্ডেল করতে হচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আবারো বলছি উন্নয়ন আর ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে টিটকারি মারা লোক কোন দিনই আপনার পক্ষে আসবে না। যেমন হেফাজত আসেনি। কিন্তু আপনার নেতৃত্বেই বা আপনাকে সামনে রেখে অনেক মানুষ সমস্যার বিরুদ্ধে অর্থবহ লড়াই করতে চায়, সমস্যা থেকে না পালিয়ে সমস্যার ভেতরে ঢুকতে চায়, ডিনাই না করে সমস্যার মুখোমুখি হতে চায়। এরা হয়ত হতভাগ্য, কিন্তু বাস্তব বিবেচনায় বাংলাদেশের বড় বীর। আনসাং হিরো। দেখুন ডাক্তারদের, নিন্দুকের কথা ঠিক হলে এখানে স্বাচিপের লোকজনই তো আছে, দেখুন ছাত্রলীগে জায়গা না পাওয়া ভলান্টিয়ারদের, দেখুন কিভাবে রক্তের সময় রক্ত দিয়ে আর সরাসরি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিয়ে দে আর মেকিং ডিফারেন্স….

একবার এদেরকে দেখুন!

আরেকবার আপনার মেয়র আর ক্যাবিনেট কলিগদের দেখুন। প্রথম গ্রুপটা কোন রিওয়ার্ড আর রিকগনিশন ছাড়াই শুধু দেশপ্রেম থেকেই লড়ছে। মেয়র মন্ত্রীদের মত সুবিধাজনক জায়গায় থেকে বালুতে মুখ গুঁজেনি এরা। থাকতে হলে বরং এদের পাশেই থাকুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এদের কথা আর কাজ বিবিসি বাংলায় তুলে আনুন, এদের স্পিরিট কে আপনার স্পিরিটের সাথে সংশ্লেষ করুন। আমার ভুল হতে পারে, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো হচ্ছে …।

‘ভরসা রাখুন হাসিনায়’ বলে যারা বড়জোর প্রতীকী কর্মসূচি পর্যন্ত উঠতে পেরেছে, নিজেদের উপরেই ভরসা রাখতে পারে নাই, এদের প্রমোট করা ছেড়ে দিন… বিফোর ইট’স টু লেইট!

সারাবাংলা/এমএম

 

গুজব ডেঙ্গু ডেঙ্গু প্রতিরোধ প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর