Wednesday 22 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহামারিতে দুর্গা পূজা: ‘অকাল’ নাকি ‘আকাল’ বোধন

সন্দীপন বসু
২১ অক্টোবর ২০২০ ২১:৫৯ | আপডেট: ১০ মার্চ ২০২২ ১৬:১৮

দুর্গা পূজা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। শুধু বাংলাদেশই নয়, সারাবিশ্বেই সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালিরা নানা আয়োজনে এই শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করে থাকেন।  ‘অকালবোধনে’ নানা আড়ম্বড়ে দেবী দুর্গার পূজা ও প্রার্থনা করা হয় এই সময়ে।

দেবী দুর্গার পূজা ও প্রার্থনায় এই ‘অকালবোধন’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা হয় কেন? সংস্কৃত ভাষার শব্দ ‘অকাল’-এর আভিধানিক অর্থ ‘অসময়’। শব্দটিকে পূজা বা এ ধরনের শুভকাজের অনুপযুক্ত সময় হিসেবেও সংজ্ঞায়িত করা হয়। আর ‘বোধন’ অর্থ ‘জাগরণ’। হিন্দু সংস্কার মতে এই শব্দ দু’টির অর্থ দাঁড়ায় ‘অসময়ে বোধন’, তথা ‘অসময়ে দেবী দুর্গার উদ্বোধন বা আরাধনা’।

বিজ্ঞাপন

শরৎকালে দেবী দুর্গার এই পূজাকে সচরাচর ‘অসময়ে দেবী দুর্গার উদ্বোধন’ হিসেবেই অভিহিত করা হয়। কেন এই ‘অকালবোধন’? এর ব্যাখ্যা খুঁজতে যেতে হবে কৃত্তিবাস ওঝা বিরচিত রামায়ণের কাছে।

কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণের কাহিনীমতে, রাবণ যখন শ্রী রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতাকে অপহরণ করে লংকায় নিয়ে গেলেন, স্ত্রীকে উদ্ধারে বিশাল বাহিনী নিয়ে শ্রী রাম লঙ্কা আক্রমণ করেন। শুরু হয় মহাযুদ্ধ। যুদ্ধ চলাকালীন রাম ও তার বীর ভাই লক্ষণের হাতে একে একে রাবণের বীর সেনাপতিরা মারা পড়ছেন। রাম ও হনুমানের হাতে পড়ে একবার রাবণও নাস্তানাবুদ হলেন খুব। অবস্থা সঙ্গীন দেখে দেবী অম্বিকার আরাধনা শুরু করেন রাবণ। তিনি বরাবরই দেবীর প্রিয়পাত্র ছিলেন। এবারও তার প্রার্থনায় দেবী সাড়া দিলেন, কালীরূপে আবির্ভূত হয়ে রাবণকে দিলেন যুদ্ধজয়ের অভয়বার্তা।

এদিকে শ্রী রামও রাবণের অনাচারে বীতশ্রদ্ধ অন্যান্য দেবদেবীদের প্রিয়ভাজন ছিলেন। সেই দেবদেবীরা মা কালীর এহেন আশ্বাসে সন্তস্ত্র হলেন। ভাবতে বসলেন এবার কী করা যায়। বুদ্ধি করলেন, প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে গিয়ে জানাবেন এই ঘটনা। ভাবনামতো দেবরাজ ইন্দ্র ব্রহ্মার কাছে গিয়ে উপায়বুদ্ধি চাইলেন, যেন শ্রী রাম দূরাচারী রাবণকে বধ করতে পারেন। সব শুনে ব্রহ্মা নিদানে বললেন, বলো কী! কালীরূপে যুদ্ধজয়ের আশ্বাস দিয়েছেন! ঘোর বিপদ! দেবী দুর্গার আরাধনা ছাড়া তো উপায় দেখছি না।

বিজ্ঞাপন

এদিকে তখন শরৎকাল চলছে। দেবী ঊমা তখন মর্ত্যে বাবার বাড়ি আসতেন বসন্তে। উৎকণ্ঠিত অন্যান্য দেবদেবীসমেত শ্রী রাম এবার বললেন, শরৎকাল তো অকাল, এই সময়ে কীভাবে দেবী দুর্গার বোধন হবে? কীভাবে পূজা হবে মায়ের? তখন ব্রহ্মা বললেন, শরতের শুক্লা ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন করো। তোমার কল্যাণ হবে।

সব শুনে প্রজাপতির নিদানে রামচন্দ্র দেবী দুর্গার অকালবোধনের প্রস্তুতি নিলেন। নিজ হাতে তৈরি করলেন মৃন্ময়ী প্রতিমা। বিধান অনুযায়ী চণ্ডীপাঠে তন্ত্রমন্ত্রে দেবীর বোধন হলো। বনফুল আর ফলে নানা উপাচারে, আয়োজনে দেবীর পূজা হলো। কিন্তু দেবী দেখা দিলেন না।

শ্রী রামের মন তখন খুব খারাপ। কী আয়োজন বাকি থাকল যে অধরাই রইল দেবীর দর্শন! ততদিনে রাবণের ভাই বিভীষণ দলত্যাগ করে শ্রীরামের ডেরায় ভিড়েছেন। তিনি বুদ্ধি দিলেন, একশ আটটি নীল পদ্মে দেবীর পূজা করতে হয়। নীল পদ্মে পূজা করলে নিশ্চয়ই দেবী প্রসন্ন হবেন। কিন্তু আশপাশে কোথাও তো নীল পদ্ম নেই! শরতে কোথায় মিলবে নীল পদ্ম! এ অবস্থায় অগতির গতি হয়ে এগিয়ে এলেন রামভক্ত হনুমান। দেব-দেবীদের হ্রদ দেবীদহ থেকে ১০৮টি নীল পদ্ম এনে শ্রীরামের হাতে দেন তিনি।

এরপর রামচন্দ্র বসলেন পূজায়। কিন্তু পূজায় বসে রামচন্দ্র দেখেন— এ কী, নীল পদ্ম যে ১০৭টি! আরেকটি নীল পদ্ম গেল কোথায়? খোঁজ, খোঁজ… কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পাওয়া গেল না আরেকটি নীল পদ্ম। এদিকে পূজার প্রহর সমাপ্তপ্রায়। পূজা তো তাকে শেষ করতেই হবে। তখন শ্রী রাম দেবীর উদ্দেশ্যে নিজের একটি চোখ নিবেদনের সিদ্ধান্ত নিলেন। উপস্থিতদের বললেন, সবাই তো আমার নীল চোখের জন্যে আমায় পদ্মলোচন বলে, আমার একটি চোখ দেবীর পাদপদ্মে অঞ্জলি দেবো। বলে যেই শ্রী রাম তীরের ফলায় নিজের আঁখি উপড়াতে উদ্যত হলেন, তখনই দেবী সিংহবাহিনী কাত্যায়নী হয়ে দেখা দিলেন রামের সামনে। যুদ্ধজয়ের আশীর্বাদ করলেন এবং জানালেন, তিনিই একটি পদ্ম লুকিয়ে শ্রীরামের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন।

এরপর দেবীর আশীর্বাদে শ্রী রামচন্দ্র সপ্তমী তিথিতে যুদ্ধ শুরু করে অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে রাবণকে বধ করেন। দশমীর দিনে রাবণকে দাহ করা হয়। আর সেদিনই শ্রীরাম দশমী পূজা করে মৃন্ময়ী দেবীপ্রতিমার বিসর্জনে অকালবোধন সমাপ্ত করেন।

এখানে উল্লেখ্য, রামায়নের রচয়িতা বলে স্বীকৃত বাল্মীকির গ্রন্থের কোথাও কিন্তু শ্রী রামচন্দ্রের দুর্গা পূজার বিবরণ নেই। এ বিবরণ আছে কেবল কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণে, যা রচিত হয়েছিল খ্রিস্টীয় চৌদ্দশ শতকে। কৃত্তিবাস ওঝা বাংলার সামাজিক রীতিনীতি ও লৌকিক জীবনের নানা অনুষঙ্গ ও গল্পের প্রয়োগ করেছিলেন তার রচিত বাংলা রামায়ণে। এছাড়া নবম ও দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে লেখা দেবীভাগবতপুরান ও কালিকাপুরানেও রামের দেবী দুর্গার আরাধনার কথা উল্লেখ করা আছে। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, একাদশ শতাব্দীতেও দুর্গা পূজার ব্যাপক প্রচলন ছিল এবং এ দুর্গা পূজা ছিল বাঙালির জীবনের অন্যতম প্রধান উৎসব।

ইতিহাসমতে বহুকালের চলে আসা নিয়ম ভেঙে দুর্গা পূজা বা অকালবোধন করেছিলেন স্বয়ং রামচন্দ্র। এবারে সেই ‘অকালবোধন’-এর সময়ে পড়েছে ‘আকালে’। এই আকাল বা মহামারির সময়ে দেবীর আরাধনায় দুর্গতিনাশ হবে বলে বিশ্বাস হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের। কিন্তু তার জন্যে যে আয়োজন, তা দেখে শঙ্কা জাগে যে দুর্গতিনাশের চেষ্টায় আমরা আরও দুর্গতি ডেকে আনছি না তো!

ঋতুর হিসেবে আমাদের দেশে এখন হেমন্তকাল চলছে। হিম থেকে হেমন্ত। ঢাকায় পুরোদমে ঠান্ডা না পড়লেও এই কার্তিক মাস থেকেই শীত আস্তে আস্তে জানান দিয়ে আসছে। এদিকে আবার বিশ্বব্যাপী অনেকটা পূর্বঘোষণা দিয়েই আসছে প্রলয়ংকরী মহামারি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এই সময়ে সাড়ম্বরে দুর্গা পূজায় আমরা ‘চোখ নিবেদন’ বা ‘চক্ষুদানের’ আয়োজন করছি না তো!

রামচন্দ্রের পদ্মলোচন বা নীল চোখকে যদি প্রতীকী অর্থে ধরি, তাহলে স্পষ্টতই বুঝতে পারব— আমাদের প্রাণ, আমাদের পরিবার-স্বজন কিন্তু এক অর্থে আমাদের চোখই। আমাদের সন্তানরা আমাদের ‘অ্যাপল অব আইজ’, আমাদের বাবা-মা- ভাইবোন আমাদের নয়ণমণি। রামচন্দ্র চোখের মণি তুলতে উদ্যত হলে যেভাবে দেবী কাত্যায়ণী এসে বিরত করেছিলেন, সেভাবেই আমাদের নিজেদের ‘চোখের মণি’ নিজেদের প্রাণ ও স্বজনদের বাঁচাতে এই মহামারিতে জনসমাবেশ, উৎসব পালনে বিরত থাকতে হবে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেছেন, মহামারিতে শারদীয় দুর্গোৎসব বাঞ্ছনীয় নয়। এতে বাড়তে পারে সংক্রমণ। সংগঠনগুলোর নেতারা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে পূজার আহ্বানও জানিয়েছেন। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাশগুপ্ত সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, এবারে দুর্গোৎসব হবে না, কেবল দুর্গা পূজা হবে।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, মহামারিতে এবার মিশনে কেবল দুর্গা পূজা হবে, হবে না কোনো উৎসব। বহু বছর ধরে মঠে প্রচলিত অষ্টমী তিথির কুমারী পূজাও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে বাদ দেওয়া হয়েছে। দাতব্য এই সংগঠনটি ভারতে তাদের সব মঠেও একই নীতি গ্রহণ করেছে।

এছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাঙালি অধ্যুষিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে দুর্গা পূজার প্যান্ডেলে দর্শনার্থীদের সমাগম না করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রাজ্যটির আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শুধু পূজার সংগঠকেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্যান্ডেলের ভেতরে উপস্থিত থাকতে পারবেন, কোনো দর্শনার্থী নয়। দুর্গা পূজায় করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে শঙ্কায় কোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত সারাবাংলাকে বলেন, এবারের দুর্গা পূজায় সচেতনতা অপরিহার্য। সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রিয়জনের প্রাণরক্ষায় দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে। এই দুঃসময়ে দুর্গা পূজা যে মহাসমারোহে করতে হবে, তা একেবারেই নয়। হিন্দু ধর্মেই মানসপূজার বিধান রয়েছে। সবাই পূজামণ্ডপে ভিড় না করে ঘরেই দুর্গতিনাশিনীর কাছে এই দুর্যোগ থেকে মুক্তির প্রার্থনা করতে পারেন।

মিলন কান্তি দত্ত সারাবাংলাকে আরও জানান, এবারের পূজায় ভক্তদের জন্যে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ফেসবুক পেজে মহাষ্টমীর প্রণাম ও পূজা লাইভে থাকবে। তিনি ভক্তদের স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়ে বলেন, পূজার অঞ্জলি ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা এই মহামারির সময়ে ঘরেই করা উচিত। ঘরে বসে ভক্তিভরে অঞ্জলী দিন। দেবীর আরাধনা করুন। এতে নিজের ও অন্যের জীবন শঙ্কার মধ্যে পড়বে না।

পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতির এহেন বক্তব্যের পরও শঙ্কা রয়ে যায়। এতকালের অভ্যাস প্রচলিত প্রথা কি এত সহজে শুধু করোনার ভয়ে ত্যাগ করব ধর্মপ্রাণ এই আমরা! কই, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় তো সেই নজির দেখাতে পারিনি আমরা। এবারও যে রাত ৯টার আগে পূজামণ্ডপে সর্বোচ্চ ৫০ জনের উপস্থিতির বিধিনিষেধ মানব আমরা, সেই নিশ্চয়তা কে দেবেন?

ক’দিন ধরে দেখছি, শারদীয় উৎসবকে ঘিরে পথে ঘাটে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া ভিড়ভাট্টায় করোনা আতঙ্ক একেবারেই উধাও! যদিও এজন্য বোধহয় শুধু শারদীয় উৎসবকে দায়ী করা মোটেই ঠিক হবে না। তবে এ কথা ঠিক, পূজার আগের এই সময়ে পুরানো ঢাকার চকবাজারে, নিউমার্কেটে কেনাকাটায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভিড় চোখে লাগার মতো। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও জেনেছি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ক্রেতার আধিক্যের কথা। দেশের অন্য স্থানেও পূজা উপলক্ষে অর্থনীতির চাকা ঘোরার সংবাদ এসেছে সংবাদমাধ্যমেও। কিন্তু এ কথাও তো সবার জানা, এই ভিড়ভাট্টায় লুকিয়ে সংক্রমণ। ওঁৎ পেতে আছে আছে মৃত্যুও।

এসবই আশঙ্কার কথা। এই আশঙ্কাগুলো আশাবাদে পাল্টে যাবে, যখন আমরা যথাযথ দায়িত্বশীলতা দেখাতে পারব। আমাদের ‘চোখের মণি’ আমাদের প্রাণ, প্রাণপ্রিয় স্বজনের জীবনরক্ষায় তো দেবী দুর্গা এসে আমাদেরকে পূজার উৎসব থেকে বিরত করবেন না। সচেতন হতে হবে আমাদেরকেই। সামান্য অসাবধানতায়, আনন্দ উপলক্ষে আমরা যেন আমাদের পরিবারের বয়োজেষ্ঠ্য সদস্য, আমাদের স্বজনদের জীবন বিপন্ন না করি। মহামারিতে আমাদের সতর্কতার বাঁধনগুলো যেন কোনোভাবেই আলগা না হয়।

লেখার শুরুতে বলেছিলাম দেবীর অকালবোধনের কথা, কিন্তু এখন এই মহামারিতে যে ‘না থাকার’, ‘না পাওয়ার’, ‘জীবনধারণের মৌলিক চাহিদাগুলোর’ আকাল চলছে, তার কথা কীভাবে ভুলি! আমাদের অনেকের কাছে তো পূজা মানেই আনন্দ, উৎসবের এক উপলক্ষ। কিন্তু একবার ভাবি তো সেইসব মানুষের কথা, যাদের কাছে এই দুর্গা পূজাটিই জীবনের অনেককিছু। ভাবি সেই প্রতিমানির্মাতার কথা, এই আকালে যার হাতে কোনো কাজ নেই; কিংবা সেই পুরোহিতের কথা, যার মন্দিরের পূজাটি এবার হয়নি; পূজার পাঁচ দিনের এই উৎসবে গাজীর পট দেখিয়ে রোজগার করা সেই মানুষটার কথা বা মাটির হাড়ি বিক্রি করে যাদের সংসার চলে, সেই কুমোরটির কথাও ভাবি। ভাবি এমন আরও অনেক মানুষের কথা যাদের কাছে এই দুর্গা পূজা সারাবছরের রুটিরুজির উপলক্ষ।

এই ‘আকালে’ বাঙালির ‘অকালবোধনের’ দেবীর অনেকগুলো নামের একটি নাম স্মরণ করিয়ে দিতে চাই— দেবী ‘অন্নপূর্ণা’। হিন্দু পুরাণ ও অন্নদামঙ্গলকাব্যে উল্লেখ আছে, দেবী পার্বতী ভিক্ষারত শিবকে অন্নপ্রদান করে এই নাম লাভ করেন। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, অন্নপূর্ণার পূজা করলে ঘরে অন্নাভাব থাকে না। দেবী দূর্গার এই মাহাত্ম্যে অনুপ্রাণিত হয়ে মহামারির সময়ের এই পূজায় যদি আমরা প্রত্যেকেই নীরব ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই ‘আকালে’ ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি মানুষের জন্য একেকজন অন্নপূর্ণা হয়ে উঠতে পারি, তবেই বোধহয় দেবীর শিক্ষা ও মহিমা সার্থক হবে।

পূজার শুভেচ্ছা সবাইকে।

তথ্যসূত্র:
০১. রামায়ণ, কৃত্তিবাস ওঝা বিরচিত, হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ
০২. পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়
০৩. দুর্গা পূজা ও উৎসব; একটি যুক্তিযুক্ত পন্থা- সৌমেন্দ্র চন্দ্র নন্দী, গবেষণা নিবন্ধ

লেখক: সংবাদকর্মী

সারাবাংলা/এসবিডিই

অকালবোধন করোনাভাইরাস টপ নিউজ দুর্গা পূজা বৈশ্বিক মহামারি মহামারি রামায়ণ শারদীয় দুর্গোৎসব সন্দীপন বসু

বিজ্ঞাপন

টিভি শো উপস্থাপনায় তাহসান
২২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৪

আরো

সম্পর্কিত খবর