Friday 03 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহে ভাটা


১ আগস্ট ২০১৯ ১৩:২০ | আপডেট: ১ আগস্ট ২০১৯ ১৪:২৯

আর্থিক খাতের দুরবস্থা অনেকদিন ধরে উচ্চারিত। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তরফে নতুন অর্থবছরে কী ধরনের মুদ্রনীতি আসে, সেদিকে দৃষ্টি ছিল সবার। বুধবার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির তার সহকর্মীদের নিয়ে যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছেন তাতে বেসরকারি খাতের কপালে ভাঁজ পড়েছে। আশঙ্কা কিংবা ধারণা যা ছিল, তা-ই হয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কমিয়ে চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে বাড়ানো হয়েছে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা। সার্বিকভাবে মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায় কিছুটা সংশোধন ছাড়া বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগের গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং সরকারি খাতে ছিল ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।

একটা বিষয় বেশ লক্ষ্যণীয়, নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংকিং জগতে তারল্য সংকট, খেলাপি ঋণ, মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রার বিনিময় হারের অতি মূল্যায়নকে মেনে নেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো— এর থেকে উত্তরণের পথ কী? সংকোচনমূলক এই মুদ্রানীতিকে বিনিয়োগবান্ধব বলা যাচ্ছে না। এতে উদ্যোক্তারা পর্যাপ্ত ঋণ পাবেন না। ঋণের বেশিরভাগ যাচ্ছে সরকারি খাতে। ২৪ শতাংশ ঋণ সরকার নিলে বেসরকারি খাত আসলে শেষ পর্যন্ত ১৪ শতাংশ ঋণও পাবে না। ব্যক্তি খাতে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণের লক্ষ্য এই খাতে চাহিদার তুলনায় কম। যদি আমরা সত্যি সত্যি ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চাই, তাহলে ব্যক্তি খাতে ঋণের লক্ষ্য ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ নির্ধারণ করা প্রয়োজন ছিল।

৮ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ লাগবে জিডিপির প্রায় ৩৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। যদি সরকারি খাত থেকে এক-চতুর্থাংশ আসে, তাতেও ব্যাক্তি খাতের বিনিয়োগ লাগবে ২৫ শতাংশের বেশি, যা টাকা অঙ্কে সাত লাখ কোটি টাকার বেশি। নতন মুদ্রানীতিতে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলেও তা বিনিয়োগের মাত্র ২০ শতাংশ অবদান রাখতে পারবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ ব্যাক্তি খাত। এ পর্যন্ত যে পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে অর্থনীতি, তাতে ব্যাক্তি খাতই বড় ভূমিকা রেখে এসেছে। সাম্প্রতিককালে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে এক ধরনের সংকট থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এমন সংকোচনের পথে চলতে হচ্ছে, সেটা সবাই বুঝতে পারছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের একটি অংশের দুর্নীতি একটি বড় শঙ্কার জায়গা। গভর্নর তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছেন, একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকেরা ঋণের নামে টাকা নিয়েছেন। তাই চাইলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এদের কেউ কেউ অন্য ব্যাংকের পরিচালক পদে রয়েছেন। এতে নিয়মের ব্যত্যয় হয়নি। তাহলে বলতেই হচ্ছে নিয়ম করেই তারা অনিয়ম করেছেন।

বিজ্ঞাপন

পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো নয়। ফলে বিনিয়োগকারীদের অর্থ পাওয়ার উৎসে আঘাত লেগেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতে তারল্য সংকটের কথা স্বীকার করে না সরাসরি, বলে— কিছু সমস্যা আছে। খেলাপি ঋণের আধিকক্য, তারল্য সংকট এবং ঋণ ও আমানতের অনুপাত সমন্বয়ের চাপে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে ধীরে চলো নীতিতে রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংকই শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন বন্ধ করেছে। অন্যদিকে উচ্চ সুদসহ আরও কিছু কারণে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারদের দিক থেকেও ব্যাংকঋণের চাহিদা কমছে।

বাস্তবতা হলো— আমরা গুণগতমানের উচ্চ প্রবৃদ্ধি চাই। সেটা অর্জন করতে হলে বেসরকারি ঋণে গতি আনার বিকল্প নেই।

লেখক: এডিটর ইন চিফ, সারাবাংলা ডটনেট, দৈনিক সারাবাংলা ও জিটিভি

টপ নিউজ বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মুদ্রানীতি

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর