Friday 03 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অরিত্রীকে আমরা ভুলে যাব


৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৩৬

দু’দিন পরেই আমরা ভুলে যাব অরিত্রীকে। হ্যাঁ, আমি নিশ্চিত হয়েই বলছি, আমরা অরিত্রীকে ভুলে যাব। এর আগেও এমন অনেককে আমরা ভুলে গেছি। যে ভিকারুননিসাকে নিয়ে আমরা আজকে এত সমালোচনা করছি, দু’দিন বাদেই শুদ্ধ হয়ে যাবে ভিকারুননিসা স্কুল। ক’দিন বাদেই এই স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করাতে অভিভাবকরা ভোরে লাইন দিয়ে দাঁড়াবেন- ভর্তি ফর্ম কেনার জন্য। কোটি কোটি টাকার লেনদেন হবে ভর্তি বাণিজ্যে।

এর আগে ঘটা করে কোচিং বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল দেশজুড়ে। বন্ধ হয়েছে কি কোচিং সেন্টারগুলো? দেদারসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই চলছে রমরমা বাণিজ্য। কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ হবে না। কারণ এর সাথে জড়িয়ে আছে সমাজের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত অনেকে। লাভবান হচ্ছেন রাঘব-বোয়ালরা।

বিজ্ঞাপন

আইন করে বন্ধ করা হয়েছিল স্কুলে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন। কিন্তু এখনও আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ভিডিও দেখি, যেখানে নির্মমভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের দৃশ্য দেখা যায়। শহরের বাইরে অনেক স্কুলে এখনো বেত নিয়ে ঘোরেন শিক্ষকরা। বেতের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শরীর-মন। বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে সমাজ ব্যবস্থাকে নিয়ে।

হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল- শিশুদের ব্যাগের বোঝা কমাতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! উচ্চ আদালতকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্কুলগুলো শিশুদের ব্যাগে নতুন নতুন বই দিয়ে ভারি করে তুলছে। এখন কি কারো মনে হচ্ছে, আমরা আসলেই দু’দিন পর সবকিছু ভুলে যাই?

অরিত্রী হয়তো (নিশ্চিত নয়) একটা অপরাধ করেছে, কিন্তু সেটার জন্য পরবর্তী পরীক্ষা থেকে সরিয়ে দিতে হবে কেন? অথচ এই অপরাধের সঠিক বিচার ব্যবস্থা কি হবে, তা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও স্কুলের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানের বক্তব্য সাংঘর্ষিক। আবার সন্তানের অপরাধের তথ্য বাবা-মাকে ডেকে তো বলাই যায়, তবে সেটা সেই সন্তানকে শুধরে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেটা না করে উল্টো অরিত্রীর সামনে তারই বাবা-মাকে অপমান, অপদস্ত করা কতোটুকু যৌক্তিক? ভাবুন তো একবার, বাবা-মাকে অপমানের জন্য শিশুমনে দাগ কেটে গেল, অথচ শিক্ষিত শিক্ষকরা বুঝলেনই না বিষয়টির ভিন্ন কোনো সমাধান হতে পারতো।

বিজ্ঞাপন

অরিত্রীরা ভুল করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কারণ ভুল করার বয়সটাই তো ওদের। ওদের শুধরে দেওয়ার জন্যই তো স্কুলে পাঠানো হয়। শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি ভুলগুলোও শুধরে নেয় এই কোমলমতি শিশুরা। বাবা-মা যেমন পরম মমতায় সন্তানকে মানুষ করেন, তেমনি শিক্ষকের ভূমিকাটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলে অরিত্রীরা দিনের অনেকটা সময় পার করে সহপাঠী ও শিক্ষকের সাথে। পড়া-লেখার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। সাথে প্রয়োজন শিশুদের মানসিক বিকাশে খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়ানো। এখনই নজর দিতে হবে শিক্ষার্থীদের দিকে, তা না হলে এ সমাজ মানুষ হারাবে, রয়ে যাবে মানুষ নামের মেশিন।

কারণ ওরাই আগামী দিনের বাংলাদেশের নেতৃত্ব। আর সেজন্য প্রয়োজন সামাজিক গুণাবলী সম্পন্ন শিক্ষিত মানুষ। আর অভিভাবকরা জিপিএ’র পেছনে না ছুটে, কোমলমতিদের গাদা গাদা বই আর কোচিং এর চাপে না ফেলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও একটু নজর দিন। ওদের সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিন– আমাদের নতুন প্রজন্মের এই ‘দমবন্ধ’ পড়াশুনার অপ-সংস্কৃতি থেকে বের করে না আনলে আমরা আরও অনেক অরিত্রীকে হারাব।

লেখক: দিপন দেওয়ান | সাংবাদিক, বাংলাভিশন

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর