Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওই মেয়েদের কেতন ওড়ে!


২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ২১:০৬ | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ২১:২১

বিজয়ের মাস তাই বিজয়ের উদযাপনটাও দীর্ঘ হলো!

কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামালে হুট করে ঢুকলে কেউ চমকে যেতে পারতেন আজ। দেশের ফুটবলে মরা গাঙে কবে থেকে এমন বান ডাকল? সে প্রশ্ন করতেই পারতেন। গ্যালারি খুব বড় নয়, মেরেকেটে হাজার আটেক লোকের হয়তো জায়গা হবে। আজ হয়তো সব মিলে হাজের পাঁচেক লোক ছিল, কিন্তু ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ ধ্বনি যেন লাখো কন্ঠে মুখর হয়ে ভেসে বেড়াল ইথারে। যতক্ষণ সেই গর্জন শোনা গেছে গ্যালারিতে, ততক্ষণই মাঠে ‘ভিক্টরি ল্যাপ’ দিয়ে গেছে মারিয়ারা। লাউডস্পিকারে ‘বাংলাদেশ, চলো বাংলাদেশ’ গানের সঙ্গে চলছে কোরাস। বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক দিন ধরেই নতুন দিনের গান শোনালেও ট্রফি শোকেসটা এতোদিন শূন্যই ছিল। অবশেষে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জয়ে ‘সেই শূন্য ঘরে আসিল সুন্দর, অনেক দিনের পর…’।

বিজ্ঞাপন

মারিয়া এমনভাবে ট্রফিটি জড়িয়ে ধরল, যেন কোনোভাবেই কাছছাড়া করা যাবে না। সেই ট্রফি নিয়ে যখন সংবাদ সম্মেলনে এলো, উত্তেজনার আতিশয্যে কথাই বলতে পারছিল না। ভারতকে হারানোর জন্য আলাদা কী পরিকল্পনা ছিল, নিজেরা কী কী ছক কষেছিলে?- এসব প্রশ্নে পাশ থেকে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনকেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উত্তর দিতে হলো। বরং আজকের একমাত্র গোলদাতা শামসুন্নাহারই মাঠের মতো এখানেও কিছুটা সপ্রতিভ ছিল।

‘কোচ আমাকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন ভালো খেলার’- এমন কথায় খানিকটা হাসির রোলও পড়ে গেল।

আজ ফরোয়ার্ড হিসেবে খেললেও এটা তার স্বাভাবিক পজিশন নয়, মূলত শামসুন্নাহার একজন লেফটব্যাকই। কিন্তু কোচ তাঁতিয়ে দিয়েছিলেন, যে ভালো সে সবজায়গায় ভালো।

শামসুন্নাহার কথাটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিল, নইলে তো আজ বাংলাদেশ আজ সবেধন নীলমণি গোলটা পায় না !
তবে দল হিসেবে তো একটা পরিকল্পনা ছিলই। এই ভারতকেই গ্রুপ পর্বে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই হার থেকে শিক্ষা নিয়েই হয়তো, আজ ভারতের মেয়েরা মাঝমাঠ ছেড়ে খুব একটা ওঠেইনি। বরং মারিয়া-মনিকার মাঝমাঠকেও বোতলবন্দি করে রাখতে পেরেছিল কিছুটা সময়। মারিয়া পরে জানাল, তাদের পরিকল্পনাই ছিল ভারতকে হাই-প্রেসিং করে চাপে রাখা। বল যেন কোনোভাবেই তাদের দখলে না যায়।

বিজ্ঞাপন

নিচ থেকে সেই কাজটা সবচেয়ে ভালোভাবে যে করল, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা তার কাছেই গেছে। আঁখি খাতুন পনের পেরুনোর আগেই বেশ লম্বা হয়ে গেছে। মুখে সেও ততটা সড়গড় নয়, কিন্তু মাঠে অমন খেললে কথার আর দরকার কী? রক্ষণভাগ যেভাবে একা সামাল দিল, তাতে আঁটুনি যেমন বজ্র গেরোও তেমন শক্ত ছিল।

অনেক বড় ডিফেন্ডারও কখনো কখনো প্রতিপক্ষের আক্রমণে খেই হারিয়ে ফেলে, কিন্তু আঁখির মাথা আজ যেন বরফের মতো শীতল। কোনো তাড়াহুড়ো নেই, বালসুলভ কোনো অস্থিরতাও নেই। যখন দরকার বল ক্লিয়ার করেছে, আবার নিচ থেকে বল যোগানও দিয়ে গেছে সমানে। ম্যাচ শেষে লাজুক হেসে জানাল, তার প্রিয় ফুটবলার বার্সেলোনার জাভি।

নিশ্চিত বলা যায় আজ আঁখি যেভাবে খেলেছে, তাতে জাভি গ্যালারিতে থাকলে নিশ্চয় বারকয়েক হাততালি দিতেন!

মারিয়ার প্রিয় ফুটবলারদের মধ্যে আবার রোনালদো-মেসি দুজনেই আছেন। নিজে অবশ্য মধ্যমাঠে খেলেছে, গোল করার চেয়ে গোল করানোর দিকেই ঝোঁকটা বেশি। একটা সময় দুই বেলা দুই মুঠো খাওয়া জোটাটাই ছিল সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা, শরীরের গড়নও ছিল তেমনই। কিন্তু আজ সেই মারিয়ার বলের ওপর দখল দেখলে ছেলেদের প্রিমিয়ার লিগের অনেক ফুটবলারও চমকে যেতে পারেন। পারিবারিক অবস্থা যেমন ছিল, যে কোনো সময় ফুটবল বন্ধ হয়ে যাওয়াটাই বিচিত্র ছিল না। সেই মারিয়ার সঙ্গে মনিকার যুগলবন্দিতে পুরো টুর্নামেন্টে তো মধ্যমাঠে ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশই।

তবে একটা কথা, এত লোকের সামনে তো খেলতে অভ্যস্ত নয় আমাদের মেয়েরা। তার ওপর প্রেসবক্সও যখন হয়ে যায় গ্যালারি, সমর্থনের মাত্রাও ছিল অনেকখানি বাড়তি।

এত উল্লাস, চিৎকার এসব কি বাড়তি চাপ ছিল? মনিকা যেন প্রশ্নটাকে ব্যাকভলি করেই বাইরে পাঠিয়ে দিল। দর্শকদের জন্য বরং বাড়তি প্রেরণা পেয়েছে সবাই, মনিকার এমন কথা তো নতুন দিনের জন্য আলোকবর্তিকা হয়েই আসে।

তবে এই উল্লাস, এই উদযাপনে থাকতে পারতো আরও একজন। কলসিন্দুরের সাবিনা খাতুন থাকতে পারতো বাংলাদেশের এই দলে, কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে জ্বরে ভুগে চলে যায় না ফেরার দেশে। এমন জয় তাই সাবিনার জন্যই উৎসর্গ করেছে গোটা দল। না থেকেও তাই ছিল সাবিনা, থাকবে আরও অনেক দিন।

এই মেয়েরা হয়তো একদিন সাফের পর জয় করবে এশিয়া, নতুন নতুন সাম্রাজ্য লুটিয়ে পড়বে তাদের পায়ে। আর দূর আকাশের তারা হয়ে সেই জয় দেখবে সাবিনা। এই জয় তো আসলে তার জন্যই! তবে সব কিছু ছাপিয়ে মারিয়াদের জয় দেশের জন্য। প্রিয় বাংলাদেশের জন্য।

সারাবাংলা/এএম/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর