‘শিল্পায়নে ছাড় দিতে গিয়ে রাজস্ব আদায় চ্যালেঞ্জ হবে’
৪ জুন ২০১৮ ০৯:৪০ | আপডেট: ৪ জুন ২০১৮ ১৪:৩০
আগামী ৭ জুন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরই মধ্যে প্রায় সবকিছুই চূড়ান্ত হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত বাজেটে কী থাকছে— এ নিয়ে কৌতূহল রয়েছে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের। সরকারের আয়ের বড় অংশই আসে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স আদায় করে। তাই, বাজেটে সবার নজর থাকে রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তার ওপরও। নতুন বাজেটের কিছু বিষয় নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া কথা বলেছেন জিমি আমিরের সঙ্গে।
সারাবাংলা: অনেক বিষয়েই ছাড় দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে? তাহলে আগামী অর্থবছরে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হবে কিভাবে?
এনবিআর চেয়ারম্যান: দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠে গেছে। সেজন্য প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। দরকার অনেক শিল্পায়নের। তাই শিল্পায়নের জন্য অনেক কিছুই ছাড় দেওয়া হয়েছে নতুন বাজেটে। তবে অনলাইন ভ্যাট আদায় ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে বাজেটে নির্দেশনা থাকছে। প্রতিটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা দোকানে ইএফডি বা ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস দেওয়া হবে। এই ডিভাইসে ভ্যাট আদায় রেকর্ড হয়ে যাবে, যা এনবিআরের ব্রডব্যান্ড সিস্টেমে অটো-কানেক্টেড হবে। আগামী এক বছরের মধ্যেই এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে। ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের আওতায় এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
সারাবাংলা: নতুন বাজেট সাধারণ মানুষের জন্য করবান্ধব করতে চান। এক্ষেত্রে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন?
এনবিআর চেয়ারম্যান: করমুক্ত আয়সীমা এবারের বাজেটে কিছুটা বাড়ছে। তবে কর আদায়ের ক্ষেত্রে করের বোঝা না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানো হয়েছে। এর জন্য বেশকিছু নিয়ম সংশোধনও করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ সবসময় অভিযোগ করেন, এনবিআর কর্মকর্তারা তাদেরকে হয়রানি করেন। এবার এই চিত্র উল্টে দেওয়া হবে। বরং এনবিআর কর্মকর্তাদের বলে দেওয়া হবে, কাউকে হয়রানি না করে করের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে সে ব্যর্থ হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া, ব্যবসায়ীদের জন্যও কর দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করা হচ্ছে। বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে অনাদায়ী অনেক ট্যাক্স রয়ে গেছে। এসব ট্যাক্স আদায়ে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এরই মধ্যে কথা বলা শুরু করেছি। আশা করা হচ্ছে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে।
সারাবাংলা: ফেসবুক, গুগল থেকে আয় করতে চায় এনবিআর। কিন্তু এটা তো কঠিন। এটা নিয়ে কী ধরনের নির্দশনা থাকবে?
এনবিআর চেয়ারম্যান: কী পদ্ধতিতে ফেসবুক, গুগল থেকে অর্থ আদায় করা যায়, তা নিয়ে মূলত নির্দেশনা থাকবে। কে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, তা চিহ্নিত করা হবে। তাছাড়া, ফেসবুক বা গুগল নিয়ে যেসব আন্তর্জাতিক ফার্ম কাজ করে, তাদের সাহায্য নেওয়া হতে পারে। এরই মধ্যে অনেক ফার্ম এনবিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমরা ভেবে দেখছি, কিভাবে তাদের সঙ্গে কাজ করা যায়। খুব দ্রুত যেন অর্থ আদায়ের বিষয়টি বাস্তবায়ন করা যায় তা দেখা হচ্ছে। এবার অনলাইন শপিংয়ে ট্যাক্স বসানোর কথা ভেবেছিলাম। অর্থমন্ত্রী আপাতত বিষয়টি স্থগিত রাখতে বলেছেন।
সারাবাংলা: অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে দায়িত্ব নিয়ে দ্রুত নতুন বাজেটে হাত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা নিতে চেয়েছিলেন?
এনবিআর চেয়ারম্যান: শিল্পায়নে না গেলে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। তাই সবচেয়ে বেশি নজর দিয়েছি শিল্পায়নের দিকেই। শিল্পায়ন বাড়াতে গিয়েই ব্যবসায়ীদের বেশকিছু প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তাদের জন্য করপোরেট করে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া দেশীয় শিল্পে সুরক্ষা দিতে নির্দেশনা থাকছে নতুন বাজেটে। অন্যান্য অনেক জায়গাতেও ভ্যাট-শুল্কে ছাড় থাকছে।
সারাবাংলা: এ বছরই নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার অনেক কিছু ছাড় দিচ্ছে। এটা তো চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে এনবিআরের জন্য?
এনবিআর চেয়ারম্যান: এটা ঠিক, এ বছরই নির্বাচন। নির্বাচনের কারণে সরকারকে খুব ভালোভাবে সংস্কার করতে হবে। নির্বাচনের জন্যই অনেক কিছু ছাড় দিতে গিয়ে আগামী অর্থবছরে ট্যাক্স আদায় অনেক কঠিন হয়ে যাবে। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ রাজস্ব বোর্ডের জন্য। তবে, যেহেতু করের আওতা বাড়ানো হবে, তাই চ্যালেঞ্জটা হয়তো মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। তাছাড়া অনেক বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এসব প্রকল্প থেকেও ট্যাক্স আসবে।
সারাবাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।
এনবিআর চেয়ারম্যান: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জিমি আমির, জয়েন্ট নিউজ এডিটর, সারাবাংলা ডটনেট।
সারাবাংলা/টিআর