‘মফস্বলের ভাষা সৈনিকদের স্বীকৃতি নেই’
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৮:১৫ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:৩৬
তনুজা শারমিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
দিনাজপুর: স্মরণশক্তি এখন আর আগের মতো সচল নেই। তবুও স্মৃতি হাতড়ে খুঁজে ফেরেন জীবনের সমৃদ্ধ অতীত। ফ্রেব্রুয়ারি এলেই মনে পড়ে সেই উত্তাল দিনগুলো। মাতৃভাষা জন্য জীবন উৎসর্গ করতে সেদিন এতটুকু দ্বিধা বা ভয় ছিল না তার। বাঙালির মাথা উচুঁ করে দাঁড়ানোর সেই আন্দোলনের একজন অংশীদার হিসেবে এখনও গর্ববোধ করেন তিনি।
বলছিমান বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ভাষা সৈনিক অ্যাডভোকেট আব্দুল মোতালেবের কথা। যার হৃদয় ও কণ্ঠে এখনও বেজে ওঠে ভাষার গান। যার চিত্ত এখনো ব্যাকুল মা, মাটি, মানুষ, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির মঙ্গল কামনায়।
https://www.youtube.com/watch?v=sDXEyuqzCe8&feature=youtu.be
সম্প্রতি প্রবীণ এই ভাষা সৈনিকের সঙ্গে কথা হয় তার পাহাড়পুরের বাসায়— পড়ার ঘরে। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, মনে পড়ে তখনকার অনেক বন্ধুকে, যাদের অনেকেই একুশে পদকসহ নানা স্বীকৃতি পেয়েছেন। প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে যাই। কিন্তু শরীর বেশি ভাল না। তাই এবার হয়তো যেতে পারবো না।
স্মৃতি হাতড়ে এ ভাষা সৈনিক বলেন, ‘১৯৫২ সালে আমার বয়স ছিল ২০ বছর। তখন আমি ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থী। সবে ছাত্র রাজনীতিতে ঢুকেছি। ভাষার লড়াইয়ে নির্যাতন-জুলুমের শিকার হয়েছি। জেল খেটেছি পর পর ২বার। কিন্তু তাতে কোন কষ্ট নেই। কষ্ট পাই যখন দেখি, ভাষা আন্দোলনের ৫০ বছরেও বাংলা ভাষা পুরোপুরি মর্যাদা পায়নি। এখনও বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে ভালো মানের গবেষণা নেই। উচ্চ আদালত আর উচ্চশিক্ষার বইগুলো এখনও বাংলায় অনুবাদ করা হয়নি। ’
৮৬ বছর বয়সী প্রবীণ এই ভাষা সৈনিক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘যারা ভাষার জন্য জীবন দিল, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করল, তারা কী পেল? শুধু পদক? হাতে গোনা ক’জন ভাষা সৈনিককে স্বীকৃতি দেওয়া? বরাবরই অবহেলার শিকার ভাষা সৈনিকরা। মফস্বলের ভাষা সৈনিকদের তো কোন স্বীকৃতিই নেই।’
ভাষা আন্দোলনের ৬৬ বছরে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রের কাছে তার একটাই চাওয়া, সবখানে বাংলা ভাষার প্রচলন থাক, শুদ্ধ বাংলা চর্চায় বড় হোক নতুন প্রজন্ম। প্রাণ পাক প্রাণের ভাষা।
সরাবাংলা/টিএস/জেডএফ